হজ পরবর্তী জীবন কেমন হওয়া উচিত | ফিচার নিউজ

হজ পরবর্তী জীবন কেমন হওয়া উচিত

হজের অনেক উপকারিতা থাকলেও প্রত্যেকে শুধু নিজের অবস্থা ও যোগ্যতা অনুযায়ী তা অনুভব করতে সক্ষম হয়। যার নিষ্ঠা ও খোদাভীতি যত বেশি হবে, যে যত সতর্কতা ও সাবধানতার সঙ্গে হজের কাজগুলো আঞ্জাম দিবে সে তত বেশি উপকারিতা অনুভব করবে। হজ তাকে ততটাই প্রভাবিত করবে।

#হজ #ইসলাম

হজ একজন মুসলমানের সতর্ক হওয়া, জীবনের ভুলগুলো শুধরে নতুন পথে চলা ও জীবনে আমূল পরিবর্তন আনার পক্ষে যথেষ্ট। কেননা হজ মানুষের অন্তরে দুনিয়ার সবকিছুকে ভুলিয়ে একমাত্র মহান রাববুল আলামীনের ভালোবাসাকে বদ্ধমূল করে দেয়। তাই হজের সময় মানুষ স্ত্রী-পুত্র, পরিবার-পরিজন ছেড়ে খোদার ভালোবাসায় ডুবে থাকে। মহা শক্তিধর, পরাক্রমশালী রবের দরবারে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে ঐশী করুণায় হৃদয়-মন সিক্ত করে। বান্দা আর রবের সেই সময়কার অবস্থা বলে বোঝানোর মতো নয়। এটা শুধু স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে অনুভব ও অভিজ্ঞতা অর্জনের বিষয়।

নামাজ, রোজা ইত্যাদি ইবাদতের উপকারিতা ও হেকমত কোরআন মাজিদে স্পষ্ট করেই বর্ণনা করা হয়েছে। নামাজের উপকারিতা হলো নামাজ মানুষকে সকল অশ্লীল ও খারাপ কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখে। রোজার উপকারিতা হলো মানুষের মধ্যে খোদাভীতি সৃষ্টি করা এবং হৃদয়ে এই অনুভূতি জাগ্রত করা যে, মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ আমাকে দেখছেন। জাকাতের উপকারিতা হলো জাকাত মানুষের সম্পদকে পবিত্র রাখে। এর মাধ্যমে ধন-সম্পদে বরকত হয় ও গরিব-অসহায়দের প্রয়োজন পূরণ হয়। কিন্তু হজের উপকারিতা বর্ণনা করতে গিয়ে শুধু বলা হয়েছে: ‘যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থানসমূহে উপস্থিত হয়।’ (সুরা হজ: ২৮)

এখানে নামাজ-রোজার মতো হজের কোনো নির্দিষ্ট উপকারিতা উল্লেখ করা হয়নি; বরং শুধুমাত্র সশরীরে সেখানে উপস্থিত হয়ে তা সরাসরি উপলব্ধি করতে বলা হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, হজের উপকারিতা কাউকে বলে বোঝানোর মতো নয়। কারো থেকে শুনেও তা বোঝা যাবে না। এটি শুধু অনুভূতি দিয়ে বোঝার বিষয়।

হজের অনেক উপকারিতা থাকলেও প্রত্যেকে শুধু নিজের অবস্থা ও যোগ্যতা অনুযায়ী তা অনুভব করতে সক্ষম হয়। যার নিষ্ঠা ও খোদাভীতি যত বেশি হবে, যে যত সতর্কতা ও সাবধানতার সঙ্গে হজের কাজগুলো আঞ্জাম দিবে সে তত বেশি উপকারিতা অনুভব করবে। হজ তাকে ততটাই প্রভাবিত করবে।

এসময় মানুষ দুনিয়ার সবকিছু ভুলে স্রষ্টার ভালোবাসায় নিজেকে সমর্পিত করে। আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার বিশেষ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তাঁর করুণা, মহিমা সরাসরি উপভোগ করতে থাকে। পবিত্র ভূমিতে পূণ্যময় স্থানসমূহে নিজেকে সকল প্রকার গুনাহ থেকে মুক্ত রাখে। শয়তানের ধোঁকা ও গুনাহর যাবতীয় উপকরণ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে নিজের অতীত গুনাহর ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। তাই হজ মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে যথেষ্ট। এ অল্প সময়ের সাধনা তাকে বাকি জীবন গুনাহমুক্তভাবে বাঁচতে উৎসাহিত করে। ফলে আল্লাহর ভালোবাসায় উজ্জীবিত এ মানুষটির পক্ষে হজপরবর্তী জীবনে যাবতীয় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা অতি সহজ হয়।

সুতরাং হজের পর দেশে ফিরেও যেন সে গুনাহ ও পঙ্কিলতামুক্ত থাকে, তার বাকিটা জীবন যেন নিষ্পাপ শিশুর মতোই কেটে যায় এজন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি। আর এটিই হবে আল্লাহর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার মূল দাবি ও একজন সাচ্চা আশেকের সতেজ ইশকের বহিঃপ্রকাশ।

গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সহজ পথ হলো আল্লাহওয়ালাদের সংস্পর্শে থাকা। এ সম্পর্কে কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে: ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যনিষ্ঠদের সঙ্গে থাক।’ (সুরা তাওবা: ১১৯)

এ আয়াতে প্রথমত মুমিনদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর এই ভয় করার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর অবাধ্যতা না করা ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। তবে যেহেতু আমাদের পরিবেশে গুনাহ থেকে বাঁচা খুবই কঠিন, কেননা, আমাদের চারদিকে শুধু গুনাহ আর গুনাহ। তাই এ পরিবেশে তাকওয়া অবলম্বনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো আল্লাহওয়ালাদের সোহবত ও সাহচর্যে থাকা। এই কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া অবলম্বনের আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্যে থাকারও নির্দেশ করেছেন। আল্লাহওয়ালাদের সাথে থাকা, তাদের সাথে সম্পর্ক গড়া, তাদের কথা মান্য করা ইত্যাদির মাধ্যমে গুনাহ থেকে সহজেই বেঁচে থাকা সম্ভব।

এছাড়া হজপরবর্তী জীবনে নিম্নোক্ত আমলগুলো নিয়মিত করে যাওয়া উচিত:

১। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে কিছু পরিমাণ কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত করা।

২। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে তাকবিরে উলার সাথে আদায়ের চেষ্টা করা।

৩। প্রতিদিনের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পাশাপাশি কিছু পরিমাণ নফল নামাজেরও অভ্যাস গড়ে তোলা।

৪। প্রত্যহ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে চেষ্টা করা।

৫। প্রতিদিন ইস্তেগফার, দুরূদ শরিফ ও অন্যান্য দোয়া-জিকির ইত্যাদি পাঠ করা।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দিন। আমীন।

লেখক : মাদরাসা শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

#হজ #ইসলাম