কোরবানি সম্পর্কে যা জানা জরুরি | মতামত নিউজ

কোরবানি সম্পর্কে যা জানা জরুরি

উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা- এসব পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়। উট বা মহিষ বা গরুতে সর্বোচ্চ সাতজন অংশীদার হওয়া জায়েজ। সাতজনের বেশি অংশীদার হওয়া জায়েজ নেই, তবে সাতজনের কম অংশীদার হতে পারে।

#কোরবানি

বছর ঘুরে আবার পবিত্র ঈদুল আজহা সমাগত। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ পশু কোরবানি দিবেন। সারা দেশে জবাই হবে লক্ষ লক্ষ পশু। যেহেতু বছরে একবার আসে, তাই কোরবানির বিধিবিধান অনেকেরই স্মরণ থাকে না। তাদের জন্য আমাদের এই আয়োজন।

কোন কোন পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়

উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা- এসব পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়। উট বা মহিষ বা গরুতে সর্বোচ্চ সাতজন অংশীদার হওয়া জায়েজ। সাতজনের বেশি অংশীদার হওয়া জায়েজ নেই, তবে সাতজনের কম অংশীদার হতে পারে।

মেষ, দুম্বা ও ছাগল দ্বারা শরিকানায় কোরবানি দেওয়া জায়েজ নেই। একটি ছাগল দ্বারা কেবল একজন ব্যক্তি কোরবানি দিতে পারবে, একাধিক ব্যক্তি মিলে একটি ছাগল কোরবানি দিলে জায়েজ হবে না।

শরিকানায় কোরবানির বিধান

গরু, মহিষ ও উটে সাত শরিকে কোরবানি দেওয়া জায়েজ। তবে শরিকানায় কোরবানি দিলে কিছু বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। প্রথমত প্রত্যেক শরিকের কোরবানির টাকা হালাল হতে হবে। কোনো শরিকের টাকা হালাল না হলে কারো কোরবানি শুদ্ধ হবে না।

দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক শরিকের নিয়ত সহিহ থাকা জরুরি। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে রাজিখুশি করার নিয়তে কোরবানি করতে হবে। শরিকদের একজনের মনে যদি শুধুমাত্র গোশত খাওয়ার নিয়ত থাকে তাহলে কারো কোরবানি শুদ্ধ হবে না।

তৃতীয়ত, শরিকদের গোশত ওজন করে মেপে বণ্টন করা জরুরি। আন্দাজ করে বণ্টন করা জায়েজ হবে না।

পশু কেনার পর চাইলে নতুন কাউকে কোরবানিতে শরিক করতে পারে। প্রথমে হয়তো দুজন বা তিনজন মিলে কোরবানির নিয়তে একটি গরু কিনল, পরে আরো দু-তিনজনকে শরিক করার অবকাশ আছে। কিন্তু এমনটা না করা ভালো।

কোরবানির সঙ্গে আকিকা দেওয়ার বিধান

কোরবানির পশুতে সন্তানের আকিকা দেওয়ার সুযোগ আছে। একজন আকিকার নিয়ত করলেও অন্যদের কোরবানি শুদ্ধ হবে।

কোরবানির গোশতের বিধান

কোরবানির সমস্ত গোশত নিজেরা খেতে পারবে। তবে উত্তম হলো তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজেদের জন্য রাখা, একভাগ আত্মীয়স্বজনদের হাদিয়া দেওয়া, একভাগ সমাজের গরিব মিসকিনদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া। তবে এক্ষেত্রে তিন ভাগ সমান সমান হওয়া জরুরি নয়, কমবেশি হলেও সমস্যা নেই। কেউ চাইলে সমস্ত গোশত নিজের পরিবারের জন্যও রেখে দিতে পারে। কেউ চাইলে সমস্ত গোশত আত্মীয়স্বজন বা গরিবদের মধ্যে বিলিয়েও দিতে পারে।

মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করা হলে তার গোশতও নিজেরা খেতে পারবে। তবে মৃত ব্যক্তি কোরবানির অসিয়ত করে গেলে সেই কোরবানির গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। তার অংশের সমস্ত গোশত গরিব ও মিসকিনদের মধ্যে সদকা করে দিতে হবে।

কাজের লোকদের পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির গোশত বা চামড়া বা অন্য কোনো অংশ দেওয়া জায়েজ নেই। নির্ধারিত পারিশ্রমিক দেওয়ার পর দান হিসেবে তাদেরও গোশত দেওয়া যায়। অনুরূপভাবে গৃহকর্মীদের স্বাভাবিক খাবার দাবারে কোরবানির গোশত দেওয়া যায়।

কোরবানির পশুর চামড়ার বিধান গোশতের বিধানের মতো। চামড়া ব্যবহার উপযোগী করে নিজে ব্যবহার করতে পারে বা কাউকে দানও করে দিতে পারে। বিক্রি করা ঠিক নয়। তবে বিক্রি করলে তার মূল্য পুরোটাই সদকা করে দিতে হবে।

কোরবানি করতে না পারলে করণীয়

কারো ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়েছিল, কিন্তু অবহেলা বা অন্য কোনো কারণে কোরবানির দিনসমূহ অতিবাহিত হয়ে গেলেও সে কোরবানি করতে পারেনি, তাহলে তার করণীয় কী? এক্ষেত্রে দুটি সমাধান হতে পারে। যদি কোরবানির নিয়তে পশু কিনেছিল, কিন্তু জবাই করতে পারেনি, তাহলে জীবিত পশুটি সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। যদি কোরবানির নিয়তে পশু না কিনে তাহলে কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। কিন্তু কোরবানির দিনগুলোতে মূল্য সদকা করা জায়েজ হবে না।

কোরবানির পশু জবাইয়ের বিধান

নিজের কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করাই উত্তম। নিজে শরিয়তসম্মতভাবে জবাই দিতে না পারলে অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে জবাই করানোর সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে সম্মানের সঙ্গে তাকে তার উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

কোরবানি একটি ইবাদত। অন্যান্য ইবাদতের মতো কোরবানিও হোক আল্লাহর জন্য। আমাদের কোরবানি হোক শরিয়তসম্মতভাবে।

লেখক: শিক্ষক, আম্বরশাহ মাদরাসা, কারওয়ান বাজার, ঢাকা

#কোরবানি