জাকাত কার ওপর ফরজ? | মতামত নিউজ

জাকাত কার ওপর ফরজ?

প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ। চার প্রকার সম্পদে জাকাত ফরজ হয়। স্বর্ণ, রুপা, ব্যবসায়িক পণ্য ও গবাদি পশু। স্বর্ণের নেসাব সাতে সাত ভরি। রুপার নেসাব সাড়ে বায়ান্ন ভরি। ব্যবসায়িক পণ্যের নির্দিষ্ট নেসাব নেই। ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য স্বর্ণ বা রুপার নেসাবের সঙ্গে হিসাব করা হবে।

#জাকাত #রমজান

প্রাপ্তবয়স্ক বুদ্ধিসম্পন্ন সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর জাকাত ফরজ। নাবালেগ, পাগল, সামর্থ্যহীন ও অমুসলিমের ওপর জাকাত ফরজ নয়। সামর্থ্যবান হওয়ার অর্থ শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সম্পদের অধিকারী হওয়া। যাকে শরিয়তের পরিভাষায় নেসাব বলা হয়।

কোন কোন সম্পদে জাকাত ফরজ?

প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ। চার প্রকার সম্পদে জাকাত ফরজ হয়। স্বর্ণ, রুপা, ব্যবসায়িক পণ্য ও গবাদি পশু। স্বর্ণের নেসাব সাতে সাত ভরি। রুপার নেসাব সাড়ে বায়ান্ন ভরি। ব্যবসায়িক পণ্যের নির্দিষ্ট নেসাব নেই। ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য স্বর্ণ বা রুপার নেসাবের সঙ্গে হিসাব করা হবে। অর্থাৎ ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয় তাহলে জাকাত ফরজ হবে। গবাদি পশুর নেসাব একেক পশুর ক্ষেত্রে একেক রকম। ছাগল ভেড়া দুম্ভার নেসাব ৪০টি পশু। গরু মহিষের নেসাব ৩০টি পশু। উটের নেসাব ৫টি পশু।

এই চার প্রকার সম্পদে জাকাত ফরজ। টাকা মূলত কোনো সম্পদ নয়, বরং সম্পদের একটি টোকেন মাত্র। অর্থাৎ কারো কাছে যত টাকা আছে সেই পরিমাণ স্বর্ণ তার নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা আছে। টাকা সেই স্বর্ণের ডকুমেন্ট। লেনদেনের সহজের জন্য কাগুজে মুদ্রার প্রচলন হয়েছে। সুতরাং কারো কাছে সাতে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমপরিমাণ টাকা থাকলে তার ওপর জাকাত ফরজ হয়; এই জাকাত টাকার ওপরে নয়, বরং স্বর্ণ বা রুপার ওপর ফরজ হয়।

এককভাবে কোনো একটি যদি নেসাব পরিমাণ না থাকে, বরং অল্পকিছু স্বর্ণ অল্পকিছু রুপা অল্পকিছু নগদ অর্থ ও অল্পকিছু ব্যবসায়িক পণ্য থাকে এবং সবগুলোর মূল্য স্বর্ণ বা রুপার নেসাব পরিমাণ হয় তাহলে জাকাত ফরজ হবে।

স্বর্ণ বা রুপার ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত সব ধরনের অলঙ্কারের ওপর জাকাত ফরজ। সবধরনের ব্যবসায়িক পণ্যের ওপরও জাকাত ফরজ। তবে মিলফ্যক্টরি ও কলকারখানার যেসব যন্ত্রপাতি পণ্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় সেগুলোর ওপর জাকাত ফরজ হয় না। তবে যারা মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি বিক্রি করে তাদের মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে গণ্য হবে এবং এগুলো জাকাতের হিসাবে অন্তভুক্ত হবে। ঘরের ফার্নিচারে জাকাত ফরজ হয় না, কিন্তু ফার্নিচার ব্যবসায়ীর ব্যবসার ফার্নিচারের ওপর জাকাত ফরজ হবে।

জাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত

স্বর্ণ, রুপা, গবাদি পশু ও ব্যবসায়িক পণ্যের ওপর জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক চন্দ্র-বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত। বছর অতিবাহিত হওয়ার আগে জাকাত আদায় করা ফরজ হয় না। তবে আদায় করলে জাকাত আদায় হবে। গবাদি পশুর জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অতিরিক্ত একটি শর্ত হলো পশুগুলো বছরের অধিকাংশ সময় চারণভূমিতে বিচরণ করে আহার গ্রহণ করা। যে পশুকে গোখাদ্য বা ঘাস কেটে খামারে এনে দেওয়া হয় সে পশুর ওপর জাকাত ফরজ হয় না।

জাকাত আদায়ের শর্ত

জাকাত আদায়ের অন্যতম শর্ত হলো প্রথমে জাকাতযোগ্য সমুদয় সম্পদ হিসাব করা। তারপর তার শতকরা আড়াই অংশ জাকাত আদায় করা। সম্পদ হিসাব না করে অনুমান করে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হয় না। জাকাত আদায়ের আরেকটি শর্ত হলো জাকাত আদায়ের সময় জাকাত আদায়ের নিয়ত করা। জাকাতের নিয়ত না করে এমনিতে গরিব মিসকিনকে দান খয়রাত করলে জাকাত আদায় হয় না।

লেখক : শিক্ষক

#জাকাত #রমজান