পদ্মাসেতুর ওপারে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৫টা ৪৯ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত এই ২১ জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। আকস্মিক এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুল কুমার স্বর্ণকার এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, জাতীয় গ্রিডে আকস্মিক ত্রুটির কারণেই এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
বরিশাল পাওয়ার গ্রিডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান পলাশ জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের উৎস বরিশাল বিভাগের বাইরে হওয়ায় প্রাথমিকভাবে সমস্যার নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা কঠিন ছিল।
তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিভাগের বাইরে গ্রিড ফেইলরের কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটি বরিশাল বিভাগের বাইরে হওয়ায় এখন পর্যন্ত আমরা নির্দিষ্ট করতে পারিনি কোথায় সমস্যা হয়েছিল। তবে এখন বিদ্যুৎ চলে এসেছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তার এই বক্তব্যে স্পষ্ট, গ্রিডের মূল সমস্যা অন্য কোনো অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছিল, যার প্রভাব দক্ষিণাঞ্চলের এই জেলাগুলোতেও পড়েছিল।
বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলাসহ পদ্মার এপারের মোট ২১টি জেলায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।
এই দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎবিহীন থাকায় হাসপাতাল, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।
তীব্র গরমে বয়স্ক ও শিশুদের দুর্ভোগ ছিল চরমে। অনেক এলাকায় জরুরি পরিষেবাও ব্যাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু হওয়ার পর স্বস্তি ফিরে এলেও, এই আকস্মিক বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় গ্রিডের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।
বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ দ্রুত এর কারণ খুঁজে বের করে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাৎক্ষণিক কিছু প্রভাব দেখা যায়:
যোগাযোগে সমস্যা: বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে যোগাযোগে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা: অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়, যা অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়।
হাসপাতালে দুর্ভোগ: হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। যদিও অনেক হাসপাতালে জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকে, তবে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে সেটিও একটি বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
গার্হস্থ্য জীবনে ভোগান্তি: তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরোয়া কাজকর্ম ব্যাহত হয় এবং সাধারণ মানুষ চরম অস্বস্তিতে ভোগেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই পরিস্থিতি খুবই কষ্টকর ছিল।
পানীয় জলের সংকট: অনেক এলাকায় পাম্পের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা পানীয় জলের সংকট তৈরি করতে পারে।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আশা করছে, কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন করে টেকসই সমাধান বের করবে। যেন ভবিষ্যতে আর এমন দুর্ভোগের শিকার হতে না হয়।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।