একজন সিনিয়র ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা সিএনএকে নিশ্চিত করেছেন, ৭ মে আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারতীয় বিমানবাহিনীর রাফাল জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করেছে।
প্রথমদিনের যুদ্ধে পাকিস্তান দাবি করেছে তারা ভারতের শুধু পাঁচটি যুদ্ধবিমানই ধ্বংস করেনি বরং দুটি ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ও অত্যাধুনিক ইউসিএভি-আনম্যানড কম্ব্যাট এরিয়েল ভেহিক্যাল ভূপাতিত করেছে। বেশ কয়েকটি সেনা চৌকিও উড়িয়ে দিয়েছে পাক সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ বাহিনী।
ভারত এ নিয়ে খুব একটা মুখ না খুললেও বিভিন্ন সূত্রে রাফালসহ তিনটি জঙ্গিবিমান বিধ্বস্তের সত্যতা স্বীকার করেছে। শুক্রবার (৯ মে) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন আবু রূশ্দ।
নিবন্ধে আরো জানা যায়, ইতোমধ্যে দুই দেশের প্রায় ৫৫০টি বিমান ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। পাকিস্তানের সব বড় বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভারতের বন্ধ হয়েছে ২১টি বিমানবন্দর।
এর মাঝে ৮ মে আবারও আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে ভারত পাকিস্তানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। অবশ্য তা কোনো লক্ষ্যে আঘাত না করে বিধ্বস্ত হয়েছে।
এদিকে ৭ মে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের বোনসহ পরিবারের ১০ সদস্য বাহাওয়ালপুরের এক মসজিদে ভারতের মিসাইল আক্রমণে নিহত হয়েছেন।
মাসুদ আজহার ভারতের একজন অন্যতম টার্গেট। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলোর হাতে পাকিস্তানও কম নাকানি চুবানি খায়নি।
২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গিদের আত্মঘাতী বোমা হামলা ও অন্যান্য অপতৎপরতায় পাকিস্তানের প্রায় ৯০ হাজার নিরীহ নারী-পুরুষ-শিশু নিহত হয়েছেন।
প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও হামলার শিকার হচ্ছেন। বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের জন্য অভ্যন্তরীণ এসব জঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যাহোক, সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তান বিমানবাহিনী বরাবরের মতো তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ এবং উঁচু মানের প্রমাণ দিতে পেরেছে।
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় বিমানবাহিনীর তুলনায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ শক্তি নিয়েও পাক বিমানবাহিনী যুদ্ধ শুরুর মাত্র তিনদিনের মাথায় আকাশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়।
সেবার তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন ফাইটার পাইলট অসম সাহসিকতা ও নৈপুণ্য প্রদর্শন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তদানীন্তন স্কোয়াড্রন লিডার এমএম আলম, স্কোয়াড্রন লিডার আলাউদ্দিন, স্কোয়াড্রন লিডার রফিকি, ফ্লাইট লেফটেনেন্ট সাইফুল আজম, পাইলট অফিসার জিয়া উদ দীন আহসান প্রমুখ।
ঢাকার আরমানিটোলা হাইস্কুলের ছাত্র এমএম আলম আকাশযুদ্ধে মাত্র ৩০ সেকেন্ডে ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন এবং ওই যুদ্ধে দুইবার সিতারা ই জুরাত খেতাবে ভূষিত হন।
সাইফুল আজম ভারতের বিমান ভূপাতিত করা ছাড়াও ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে তিনটি ইসরাইলি বিমান ধ্বংস করতে সক্ষম হন। তিনি পাকিস্তান, জর্দান ও ইরাকের সাহসিকতার খেতাবে ভূষিত ছিলেন।
পাকিস্তানে রাজশাহী কলেজের ছাত্র স্কোয়াড্রন লিডার রফিকির নামে বিমানবাহিনীর একটি ঘাঁটি রয়েছে পাঞ্জাবের শোরকোট এলাকায়। এম এম আলমের নামে ঘাঁটি স্থাপিত হয়েছে মিয়ানওয়ালি এলাকায়।
পাকিস্তান বিমানবাহিনী ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কারগিল যুদ্ধের সময়ও ভারতের জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করে। এরপর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে তারা ডগ ফাইটে ভারতের দুটি বিমান ধ্বংস করে, যার একটি থেকে প্যারাশুট দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পাকিস্তানের ভূমিতে পড়ে আটক হন উইং কমান্ডার অভিনন্দন।কেন বারবার সংখ্যায় বেশি এবং বেশকিছু অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান নিয়েও ভারতীয় বিমানবাহিনী ভালো করতে পারছে না, এ ব্যাপারে কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করা যায়। ভারতীয় বিমানবাহিনীতে এখনো মূল ফাইটার প্লেন হলো রাশিয়ার তৈরি মিগ-২১, যা অতি পুরোনো।
ইসরাইলের সহায়তায় এগুলো এভিওনিক্স ও অন্যান্য খাতে আপগ্রেড করা হলেও বয়সের ভারে এ বিমানগুলো কাবু, যা আবার ফ্লাইং কফিন হিসাবেও কুখ্যাত। এরপর আছে মিগ-২৯। এগুলোও তৃতীয় জেনারেশনের পুরোনো বিমান। কিছু আছে ফ্রান্সের তৈরি মিরাজ ২০০০, যা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এখনো ব্যবহার করা হয়নি।
রাশিয়ার তৈরি যে বিমানগুলো আধুনিক আকাশযুদ্ধের জন্য কার্যকর হতে পারে, সেগুলো হলো সুখোই-৩০ ও ফরাসি রাফালে মাল্টিরোল ফাইটার। বিভিন্ন যুদ্ধে দেখা যায়, রাশিয়ার প্রযুক্তি বর্তমান যুগে খুব একটা কার্যকর নয়। তবে রাফাল বিমানগুলো যে কোনো মানদণ্ডেই একটি উন্নত বিমান।
এখন ভারতের বিমানবাহিনী রাশিয়া, ইসরাইল, ফ্রান্স মিলে যে ইকো সিস্টেম গড়ে তুলেছে, তা হয়তো ঠিকমতো একাত্ম হতে পারছে না। ভারতের নিজেদের তৈরি তেজাজ বিমানেও ব্যবহার করা হয়েছে ইসরাইলি প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স, যা এখনো যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি।
অন্যদিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ব্যাকবোন হলো পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যার কমপ্লেক্স কামরায় তাদের নিজেদের তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান। এই বিমান পর্যায়ক্রমে চীনা এফ-৭ বিমানগুলোকে রিপ্লেস করছে। এগুলোর ব্লক ৩ বেশ কার্যকর বলে প্রমাণিত। ইতালির লিওনার্দো ও অন্যান্য ইউরোপীয় এভিওনিক্স ব্যবহার করা হয়েছে এই বিমানে।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করায় জে এফ-১৭ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এবারও এই বিমানগুলো ভারতীয় বিমান ধ্বংসে ব্যবহৃত হয়েছে। পাকিস্তানের তুরুপের তাস হলো আমেরিকার তৈরি এফ-১৬ জঙ্গিবিমান। এগুলোর ব্লক ৫২ রয়েছে বেশকটি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এফ-১৬ বিমানবহরকে আপগ্রেড করার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে।
তবে এফ-১৬ বিমান দিয়ে মার্কিনিদের বেঁধে দেওয়া শর্তানুযায়ী পাকিস্তান আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত ভারতের অভ্যন্তরে গিয়ে আক্রমণ পরিচালনা করতে পারবে না। সে পর্যন্ত এই বিমানগুলো রক্ষণাত্মক কাজে ব্যবহার করা হবে।
পাকিস্তানে আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করে ভারতীয় বিমান যাতে কোনো সুবিধা না করতে পারে, সেজন্য এফ-১৬ বিমানবহরকে কাজে লাগানো হয়।
ভারতের রাফাল ও সুখোই-৩০কে পাল্লা দেওয়ার কাজে রয়েছে চীনের ৪ দশমিক ৫ জেনারেশনের মাল্টিরোল জঙ্গিবিমান জে-১০ সি। এগুলোয়ও পশ্চিমা এভিওনিক্স সংযুক্ত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের একটা সুবিধা হলো তাদের বিমানগুলোয় এভিওনিক্স, ইলেকট্রনিক্স জাতীয় সরঞ্জাম মোটামুটি একই রকম, যা ইন্টিগ্রেশনের জন্য উপযুক্ত। তবে ভারতের চেয়ে তাদের প্রশিক্ষণ যে অনেক উঁচুমানের, তা এখন সর্বজনবিদিত। এক্ষেত্রে ভারত নিঃসন্দেহে পিছিয়ে আছে।
অন্যদিকে ভারতের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হলো পাকিস্তানের চেয়ে অনেক অ্যাডভান্স। রাশিয়ার এস ৪০০-সহ ইসরাইলি সিস্টেম দিয়ে তারা গড়ে তুলেছে নিশ্ছিদ্র এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম।এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। পাক-ভারত সীমান্তে এখন ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যাপকভাবে মোতায়েন করা হয়েছে, যা পাক বিমানবাহিনীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এখানে ফ্রেন্ড অ্যান্ড ফো অর্থাৎ বন্ধু ও শত্রু বিমান চিহ্নিতকরণে তারপরও ভারতের সামরিক বাহিনী প্রায়ই ভুল করছে, যা হিউম্যান এরর হতে পারে।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দেও তারা নিজ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে নিজেদের হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে। এবারও সেরকম ঘটনার কথা জানা গেছে, যা ভারতের অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
যুদ্ধ পুরোদমে এখনো শুরু হয়নি, যা হচ্ছে তা হলো সীমিত আকারে। তবে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে কখন কী বেঁধে যায়, তাই এখন দেখার বিষয়। এছাড়া আধুনিক সমরাস্ত্রের পরীক্ষার এক ব্যাপক সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে চলমান এই যুদ্ধে।
লেখক : বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের সম্পাদক