বিচারপতিদের কাছে মানুষ বিচার চাইতে আসে। কিন্তু বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাই যে, বিজ্ঞ আদালত একটি মামলা বা মামলার আপিল বা রিট শুনতে বিব্রত বোধ করছেন। আদালত যখন একটি মামলা শুনতে বিব্রত বোধ করেন তখন আবেদনকারীকে অন্য আদালতে তার আবেদনটি উপস্থাপন করতে পরামর্শ দেন।
সাধারণ অনেকেরই মনে প্রশ্ন উঠে আসে যে, আদালতের এমন বিব্রত বোধের আইনি কোন ব্যাখা আদৌ কি আছে?
এ বিষয়ে আইনি ব্যাখ্যা
১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১২ নং আইন ‘দ্য সিভিল কোর্ট্স অ্যাক্ট-১৮৮৭’ এর ৩৮ নং ধারা এবং ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নং আইন ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-১৮৯৮’ এর ৫৫৬ নং ধারার প্রদত্ত ক্ষমতা বলে বিজ্ঞ আদালত একটি মামলা বা মামলার আপিল বা রিট শুনতে অস্বীকৃতি বা অপারগতা জানাতে পারেন।
এবার দেখে নেওয়া যাক দেওয়ানি আইনে কি বলা আছে। দ্য সিভিল কোর্টস এ্যাক্টের ৩৮ নং ধারায় বলা হয়েছে –
দেওয়ানি আদালতের প্রিজাইডিং অফিসারের (বিচারক) নিজের স্বার্থ আছে এমন মামলা তিনি নিজে বিচার করবেন না। তাছাড়া দেওয়ানি আপিল আদালতের প্রিজাইডিং অফিসারের (বিচারক) নিজের স্বার্থ আছে এমন মামলায় তার নিজের দেওয়া ডিক্রি বা রায়ের বিরুদ্ধে তিনি নিজে আপিল শুনবেন না। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালত (সুপিরিয়র কোর্ট) দেওয়ানি কার্যবিধি-১৯০৮ এর ধারা-২৪ অনুসরণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করবেন।
এখন দেখে নেওয়া যাক ফৌজদারি আইনে কি বলা আছে। দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-১৮৯৮ এর ৫৫৬ নং ধারায় বলা হয়েছে –
আপিল কোর্টের অনুমতি ব্যতিত, কোন বিচারক (জজ) বা ম্যাজিস্ট্রেট নিজে একজন পক্ষ বা নিজের স্বার্থ আছে এমন মামলা তিনি নিজে বিচার করতে করবেন না এবং নিজের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনবেন না।
ল্যাটিন ভাষায় একটি প্রবাদ আছে, ‘Nemo Judux In Causa Sua’ অর্থাৎ NO one should be a Judge of his own Cause. যখন কোন মামলা পরিচালনা করার সময় বিচারক যদি দেখেন উক্ত মামলায় তার কোন প্রকার স্বার্থ রয়েছে, তখন তিনি উক্ত মামলা পরিচালনা করতে অস্বীকার করবেন। এটি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার একটি পূর্বশর্ত।
এ কারণে অনেক সময় বিচারক মামলা শুনতে বিব্রতবোধ করতে পারেন। এ বিষয়ে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, সম্প্রতি ক্রিকেটার নাসির হোসেন এবং তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মীর মামলা শুনতে বিব্রতবোধ করেছেন বিচারক।গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদের উদ্দেশে আইন উপদষ্টো অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বিচারপতিদের কাছে মানুষ বিচার চাইতে আসে। তারা বিব্রতবোধ করেন, কেন করেন? বিব্রতবোধ করবেন যখন আপনার ভাই-বোন বিচার চাইতে আসবে। বিচারপ্রার্থী মানুষ কোথাও বিচার না পেয়ে আপনার কাছে এসেছে। আপনি কীভাবে বিব্রতবোধ করেন?