অন্তর্বর্তী সরকার কেন দরিয়া-ই-নূর খুঁজছে | বিবিধ নিউজ

অন্তর্বর্তী সরকার কেন দরিয়া-ই-নূর খুঁজছে

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ‘কোহিনূর হিরার আত্মীয়’ হিসেবে খ্যাত দরিয়া-ই-নূর হিরার ইতিহাস এক রহস্যের জালে বন্দী।

#ব্যাংক #অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

১১৭ বছর ধরে অন্ধকার কুঠুরিতে পড়ে আছে ঢাকার নবাব পরিবারের ১০৯ ধরনের রত্ন। ব্রিটিশ ভারতে যার মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ লাখ ৯ হাজার ৮৩৫ টাকা। ভূমি সংস্কার বোর্ডের করা তালিকা বলছে, এসব রত্নের মধ্যে সবচেয়ে দামি বস্তুটি হলো ২৬ ক্যারেটের টেবিল কাটের একটি হিরা। ইতিহাস যাকে দরিয়া-ই-নূর নামে চেনে। ভারতের মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব এবং যুক্তরাজ্য ঘুরে শেষমেশ ঢাকার নবাব পরিবারের মাধ্যমে বাংলায় আসে এই হিরা।

তবে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ‘কোহিনূর হিরার আত্মীয়’ হিসেবে খ্যাত দরিয়া-ই-নূর হিরার ইতিহাস এক রহস্যের জালে বন্দী। টেবিল কাটের এই হিরার বৈশিষ্ট্য হলো এর ওপরের দিকটি টেবিলের মতো সমতল ও অষ্টভুজাকৃতির।

সরকারি নথি অনুযায়ী, দরিয়া-ই-নূরের বর্তমান অবস্থান হওয়ার কথা সোনালী ব্যাংকের ভল্ট। তবে বাস্তবে এর অস্তিত্ব নিয়ে আছে ঘোর অনিশ্চয়তা। ভল্টে হিরা আছে কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা। হিরা পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি সরকারের ভূমি সংস্কার বোর্ডও।

পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের গেজেট এবং সম্পাদিত ইনডেঞ্চারের শর্তে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে থেকে ঢাকার নবাব এস্টেট বোর্ড অব রেভিনিউয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কোর্ট অব ওয়ার্ডস-এর সরকারি তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনায় চলে যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বোর্ড অব রেভিনিউ বিলুপ্ত হয়। পরে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ভূমি সংস্কার বোর্ড গঠিত হয়। তখন থেকে ঢাকার নবাব এস্টেটের দেখভালের দায়িত্ব ভূমি সংস্কার বোর্ডের কাছে আসে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দরিয়া-ই-নূরের মতো এমন হিরা বিশ্বে দুর্লভ। এর মূল্য কেবল অর্থে নয়, আছে ঐতিহাসিক মূল্যও। দরিয়া-ই-নূরের বিষয়ে খতিয়ে দেখতে চায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ব্যাংকের ভল্ট থেকে হিরার প্যাকেট বের করে তা যাচাইয়ের জন্য রত্ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

২০১৬ খ্রিষ্টা্ব্দ চাউর হয় ‘দরিয়া-ই নূর’ সোনালী ব্যাংক সদরঘাট শাখার ভল্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে। নবাবদের উত্তরসূরি এবং প্রত্নসম্পদ গবেষকরাও একই আশঙ্কা করেছিলেন। এর কিছুদিন আগে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছিল। কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা পরিদর্শনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। এরপর চলে গেছে দীর্ঘ সময়। পরিদর্শন তো দূরে থাক, এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটিও গঠিন।

২০১৬খ্রিষ্টাব্দের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। কেন, কী কারণে এই রহস্য ভেদ করা হচ্ছে না- এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি কমিটির পক্ষ থেকে শিগগিরই বিদেশি বিষেশজ্ঞদের উপস্থিতিতে ব্যাংকের ভল্ট খুলে তা যাচাইয়ের তাগিদ দেওয়া হয়েছিলো। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, ‘কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বে কমিটি করে দরিয়া নূর পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি এবং পরিদর্শনে যাওয়া হয়নি’। সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়, দরিয়া-ই-নূর আলোর নদী বা আলোর সাগর বিশ্বের অন্যতম বড় হীরকখণ্ড, যার ওজন প্রায় ১৮২ ক্যারেট। এটির রঙ গোলাপি আভাযুক্ত, এ বৈশিষ্ট্য হীরার মধ্যে খুবই দুর্লভ। প্রত্নসম্পদ গবেষকদের মতে, সারাবিশ্বে বড় আকৃতির দুটি হীরকখণ্ড সবচেয়ে মূল্যবান ও ঐতিহাসিক। এর একটি কোহিনূর, অন্যটি দরিয়া-ই-নূর। কোহিনূর আছে ব্রিটেনের রানির কাছে এবং দরিয়া-ই-নূর ঢাকায় সোনালী ব্যাংকের ভল্টে।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, কমিটির সদস্য এ কে এম মাঈদুল ইসলাম বলেন, ব্রিটেনের রানি প্রতিবছর তার গহনা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতেন। শোনা যায়, প্রদর্শনীর পর নকল গহনা ফেরত পাঠানো হয়েছে। আইসিএস অফিসার একটি প্যাকেট সোনালী ব্যাংকের সদরঘাট শাখায় জমা দেয়। কিন্তু ওই প্যাকেটের মধ্যে কী আছে তা অজানা থাকায় এটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিদর্শন করা সঠিক হবে না মনে করে তখন আর পরিদর্শন করা হয়নি। এখন বিষয়টি নিয়ে যেহেতু প্রশ্ন উঠছে তাই এটি খুলে দেখা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্যাকেটটি নিয়ে দেখার প্রস্তাব দেন তিনি।

রাজদরবার থেকে কুঠুরিতে

২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের ‘দ্য ট্রিবিউন’ পত্রিকায় প্রকাশিত সাংবাদিক শ্যাম ভাটিয়ার লেখা এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কোহিনূর হিরার মতোই, দরিয়া-ই-নূরও অন্ধ্র প্রদেশের গোলকুন্ডা খনি থেকে পাওয়া গিয়েছিল। দরিয়া-ই-নূর অর্থ আলোর নদী।

ডিজিটাল আরকাইভ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অন রেকর্ডের তথ্য বলছে, দরিয়া-ই-নূর হিরা দীপ্তি ও স্বচ্ছতায় অতুলনীয়। এটি মিনা করা সোনার ওপর বসানো প্রথম শ্রেণির বিশুদ্ধ একটি টেবিল কাটের হিরা। এর চারপাশে ১০টি মুক্তাও বসানো আছে। এই তথ্যের সত্যতা মেলে ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মে ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ’–এ প্রকাশিত দরিয়া-ই-নূরের একটি ছবি থেকে।

ঢাকার নবাব পরিবার নিয়ে গবেষণা করেছেন আহসান মঞ্জিলের সাবেক কিউরেটর মোহাম্মদ আলমগীর। তিনি বলেন, ২৬ ক্যারেটের হিরাটি দীর্ঘদিন মারাঠা রাজাদের কাছে ছিল। পরে হায়দরাবাদের নবাব সিরাজুল মুলকের পূর্বপুরুষেরা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় হিরাটি কিনে নেন। এরপর পারস্যের সম্রাটদের হাতে এই হিরা চলে যায়। সেখান থেকে পাঞ্জাবের রাজা রণজিৎ সিং হিরাটি দখল করে নেন। ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা পাঞ্জাব দখল করলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৎকালীন পাঞ্জাবের রাজা দিলীপ সিংয়ের কোষাগার থেকে কোহিনূর ও দরিয়া-ই-নূরসহ অনেক মূল্যবান জিনিস দখল করে নেয়।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘দখল’ করে নেওয়ার পর দিলীপ সিংয়ের কোষাগারে থাকা রত্নালংকারের বিবরণ পাওয়া যায় ভারতের ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশিত ওই নিবন্ধ থেকে। নিবন্ধে বলা হয়, ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের কিছু নথি বিশ্লেষণ তাঁরা দেখেছেন। এই তালিকা করেন জন লগিন। লগিন রণজিৎ সিংয়ের ছেলে ও উত্তরাধিকারী মহারাজা দিলীপ সিংয়ের অভিভাবক ছিলেন।

জন লগিনের ওই তালিকার শীর্ষে ছিল বিখ্যাত হিরা কোহিনূর। তালিকায় নাম ছিল দরিয়া-ই-নূরেরও। লগিন সে সময় দরিয়া-ই-নূরের মূল্য নির্ধারণ করেছিলেন ৬৩ হাজার রুপি। হিরাটিকে লন্ডনে নিয়েও যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু ব্রিটিশ রাজপরিবার এতে আগ্রহ না দেখালে দুই বছর পর তা ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।

১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ’–এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়, ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে রানি ভিক্টোরিয়ার সম্মানে আয়োজিত হাইড পার্কে অনুষ্ঠিত মহা প্রদর্শনীতে কোহিনূরের সঙ্গে দরিয়া-ই-নূরসহ উল্লেখযোগ্য গয়না প্রদর্শনের জন্য লন্ডনে পাঠানো হয়েছিল। পরে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতার হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানি ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে হিরাটির নিলাম করে। সে সময় ঢাকার জমিদার নবাব খাজা আলীমুল্লাহ ৭৫ হাজার টাকায় দরিয়া-ই-নূর কিনে নেন। এরপর থেকে ঢাকার নবাব পরিবারের কাছে ছিল দরিয়া-ই-নূর।

ভূমি সংস্কার বোর্ডের নথিপত্র বলছে, ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে নবাব সলিমুল্লাহ আর্থিক সংকটে পড়লে পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের কাছ থেকে ১৪ লাখ রুপি ঋণ নেন। বার্ষিক শতকরা ৩ টাকা সুদে ৩০ বছরে এই ঋণ পরিশোধের কথা ছিল। সম্পাদিত বন্ধকি চুক্তি অনুসারে অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে হীরকখণ্ড দরিয়া-ই-নূর এবং আরও রত্ন ঋণদাতার কাছে বন্ধক থাকে। সে সময় এই হিরার মূল্য ধরা হয় ৫ লাখ রুপি। নবারের ঋণ নেওয়া সেই ১৪ লাখ রুপির সুদাসল এখনো পরিশোধ করা হয়নি।

নিয়ম অনুযায়ী দরিয়া-ই-নূরসহ নবাব পরিবারের ব্যবহৃত ১০৯ ধরনের বন্ধকি রত্ন দেশভাগের আগে ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, মুক্তিযুদ্ধের আগে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সোনালী ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়। সেই থেকে মূলত অন্ধকার কুঠুরিতেই পড়ে আছে বাংলার হিরা দরিয়া-ই-নূর।

দরিয়া-ই-নূর আছে নাকি নেই

নথিপত্রে সোনালী ব্যাংকের ভল্টে নবাব পরিবারের ১০৯ ধরনের রত্ন থাকার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও সেগুলোর মধ্যে দরিয়া-ই-নূর আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এত বছরেও সেই সন্দেহের অবসান হয়নি।

জাতীয় জাদুঘরের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে একবার ব্যাংকে থাকা নবাব পরিবারের অংলকারগুলো খুলে দেখার বিষয়ে আলোচনা হয় ভূমি মন্ত্রণালয় ও জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে। তবে ভল্টে থাকা প্যাকেটে হিরা না পাওয়া গেলে সেই দায় কে নেবে—এমন প্রশ্নের মুখে শেষ পর্যন্ত ওই উদ্যোগ নাকচ করে দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়।

দরিয়া-ই-নূর আসলেই ব্যাংকের ভল্টে আছে কিনা—জানতে গত ৫ মে যোগাযোগ করা হয় সোনালী ব্যাংকের সদরঘাট করপোরেট শাখায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার একজন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে দরিয়া-ই-নূর লেখা একটি প্যাকেট মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল স্থানীয় কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা ৬ মে বলেন, ভল্টে সোনালী ব্যাংক সদরঘাট শাখার সেফ ডিপোজিটের সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটি সিলগালা করা প্যাকেট আছে। তবে প্যাকেটে হিরা আছে কিনা, তা তাঁরা জানেন না।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সম্প্রতি দরিয়া-ই-নূরের বিষয়ে জানতে ভূমি সংস্কার বোর্ডের কর্মকর্তারা সরেজমিনে সোনালী ব্যাকের স্থানীয় কার্যালয়ে যান। তবে অনুমোদন না থাকায় তাদের ভল্টে থাকা প্যাকেট দেখানো হয়নি।

৭ মে ভূমি সংস্কার বোর্ডের নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ঢাকা নওয়াব এস্টেটের একটি সেফ ডিপোজিট ছিল সদরঘাট শাখায়। যেখানে দরিয়া-ই-নূর লেখা সিলগালা করা একটি প্যাকেট ছিল। নিরাপত্তা শঙ্কায় ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে সেফ ডিপোজিট থেকে ওই প্যাকেট মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ভূমি সংস্কার বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা কখনো এই হিরা দেখেননি। হিরা আসলে আছে কিনা তাও তাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তাদের তথ্য বলছে, ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দরিয়া-ই-নূর পরিদর্শন হয়নি। আবার ১৯৫৪, ১৯৫৬, ১৯৭০, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৮৩ ও ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে মোট আটবার দরিয়া-ই-নূর পরিদর্শন করা হলেও এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন তাদের কাছে নেই।

হিরার খোঁজে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

ভূমি সংস্কার বোর্ড বলছে, দরিয়া-ই-নূরের রহস্য সমাধানে আগ্রহী বর্তমান সরকার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের আগ্রহে দরিয়া-ই-নূরের রহস্য উন্মোচনের জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ওই কমিটি প্যাকেট খুলে দেখবে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ১৯৪৭-এ দেশ ভাগ এরপর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এত বছরেও ভল্টে থাকা ওই প্যাকেট খুলে দেখা হয়নি। এর জন্য রত্ন বিশারদসহ আরও বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। সবকিছু সমন্বয় করে আমরা এটা খুলে দেখার ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই হিরার বিষয়ে আমাদের উৎসাহ আছে।’

দরিয়া-ই-নূর প্রদর্শনীর দাবি

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোহিনুর হিরা ছিল ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার বিশেষ সম্পত্তি। এই হিরা সর্বপ্রথম জনসমক্ষে দেখা যায় ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে, কুইন মাদারের মৃত্যুর পর তার কফিনের ওপরে। আর স্মিথসোনিয়ান সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোহিনুর হিরা বর্তমানে যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের মালিকানাধীন। এটি টাওয়ার অব লন্ডনের জুয়েল হাউসে অন্যান্য ব্রিটিশ ক্রাউন জুয়েলের সঙ্গে প্রদর্শন করা হচ্ছে।

দরিয়া-ই-নূর হিরার সত্য উন্মোচন হলে একইভাবে তা জাদুঘরে প্রদর্শনের দাবি জানিয়েছেন ইতিহাস গবেষকেরা। সরকারের সাবেক সচিব ও জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, ‘দরিয়া ই নূরের ঐতিহাসিক মূল্য আছে। এটাকে অবশ্যই প্রকাশ্যে আনা উচিত।’

হিরার সঙ্গে থাকা নবাব পরিবারের বাকি রত্নগুলোও প্রকাশ্যে আনার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সাবেক এই মহাপরিচালক বলেন, যেকোনো জিনিস যার ঐতিহাসিক মূল্য আছে, জাদুঘর সেটা কাস্টডিয়ান হিসেবে রাখতে পারে। জাদুঘরের উচিত এটা উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নেওয়া এবং সেটা যথাযথভাবে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।

#ব্যাংক #অন্তর্বর্তীকালীন সরকার