প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের ১০মগ্রেড প্রাপ্তিতে বৈষম্য কেন ? | শিক্ষাবিদের কলাম নিউজ

প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের ১০মগ্রেড প্রাপ্তিতে বৈষম্য কেন ?

শাসকশ্রেণি শিক্ষকরা যে দেশ ও জাতির গড়ার কারিগর, তাদেরও সম্মানের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা দরকার, বিষয়টি মোটেই প্রশাসন উপলব্ধি করছে না।

#প্রধান শিক্ষক

সংগ্রামী ঐতিহ্য নিয়ে বেড়ে ওঠা প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের সে ঐতিহ্য মোটেই দৃশ্যমান নেই। নেতৃবৃন্দের ধারণা সংশ্লিষ্ট তথা সরকারের সঙ্গে ভালোভাব রেখে অধিকার তথা পাওনা আদায় করা যথাযথ। এ প্রক্রিয়াকে সাধারণ ভাষায় সবাই দালালি বলে অভিহিত করে থাকে।

এখনো আমাদের শিক্ষক সমাজের সঙ্গে শাসক শ্রেণির প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক। সেখানে ভালোবাসার তথা দালালির সম্পর্ক কোনো কাজে আসে না।

শাসকশ্রেণি শিক্ষকরা যে দেশ ও জাতির গড়ার কারিগর, তাদেরও সম্মানের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা দরকার, বিষয়টি মোটেই প্রশাসন উপলব্ধি করছে না। তাদের ধারণা, তাদের মতো গুটিকয়েক শিক্ষিত উচ্চবিত্ত ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে দেশ ও জনগণ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম।

দেশের সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে হলে তৃণমুলপর্যায়ের জনগণসহ সবার শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এ বোধশক্তির অভাবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী তথা আমলারা তৃণমূলের ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে ষড়যন্ত্র করেছিলো।

সর্বশেষ বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারও জন্য একই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত । তারা তাদের সন্তানদের অর্থের বিনিময়ে উচ্চ শিক্ষিত বানাবে। আর নানা অহেতুক গিট্টু লাগিয়ে সাধারণ মানুষের সন্তানদের অবৈতনিক শিক্ষা সম্প্রসারণে বাঁধা দিয়ে, কার্যকর্ম বন্ধ করবে। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষক সমাজকে Ôprimary school teacher is the father of all educated nation.’ এ ভাবনা মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে। শিক্ষকদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ন রাখার প্রত্যয়ে শিক্ষকদের মর্যাদা ফার্স্ট ক্লাস করা দরকার।

অথচ সরকারের মন্ত্রী, আমলাসহ সকলের ভাবনা শিক্ষকেরা নিম্ন স্তরের তথা থার্ড ক্লাস কর্মচারী। অযৌক্তিকভাবে তারা শিক্ষকদের অবহেলা অনাদরে আটকিয়ে রেখেছে। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের আমলে শিক্ষকসমাজ সবচেয়ে বেশি নাজেহাল তথা মব সন্ত্রাসের কবলে পড়েছিলো। তাদের সহযোগিতা করার তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও শিক্ষকসমাজ যখন যে সরকার আসে, সে সরকারের বদ্ধকোঠায় বন্দির মর্যাদায় আবদ্ধ থাকেন।

অনেকটা গানের কলির মতো, ‘যেমনে নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ।’ অথচ পুতুল বানিয়ে সকল সরকারের আমলে সমস্বরে বলে বেড়ান শিক্ষকেরা অমুক সরকারের দালাল। এ বদ্ধকোঠা এ ঘৃণ্য অপবাদ থেকে শিক্ষকসমাজ মুক্তি পেতে চায়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় মোতাবেক প্রধান শিক্ষকেরা ১০ম গ্রেডসহ সেকেন্ড ক্লাস মর্যাদা পেয়েছেন। অথচ এ রায় বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করে যাচ্ছে পুরো প্রশাসন।

আদালতের রায়ের আলোকে সকল প্রধান শিক্ষককে সুবিধা দেবেন। অথচ ভাবনা এমন, যে তারা যেনো নিজের পকেট থেকে অর্থ খরচ করবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফসল অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় মোতাবেক প্রধান শিক্ষকদের বৈষম্যহীনভাবে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রের কোনো ক্ষেত্রে বৈষম্য কাম্য নয়। রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমঅধিকার পাওয়ার যোগ্য।

একই শ্রেণির বেলায় বৈষম্য অনুচিত। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অসুস্থ মানসিকতার ফলে প্রধান শিক্ষকদের মর্যাদা ১০ম গ্রেড না দেয়ার কারণে প্রধান শিক্ষকরা অনেক আবেদন নিবেদন আন্দোলনের পর রিট করতে বাধ্য হন। সরকার রায়ের সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর সময়ক্ষেপণ করেছিলেন। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী সকল প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেডসহ সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব বলে সর্বমহল আশা করে। এ কোনো আবদার নয়। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের প্রাপ্য অধিকার। এই অধিকার বাস্তবায়নে গড়িমসি বা সময়ক্ষেপণের জন্য জবাবদিহিতা তথা শাস্তির কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক।

লেখক: শিক্ষাবিদ

#প্রধান শিক্ষক