ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঠিক পরের ঘটনা। ১৪শ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ইংরেজির একজন অধ্যাপক জীবনে প্রথমবারের মতো শিক্ষার একটা অধিদপ্তরের প্রধান হয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রথাকাকালে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মর্মে পুরনো পোস্টার চাউর করা হয়েছে ৫ই আগস্টের পর। শিক্ষা প্রশাসনের নতুন পদে যোগদান করে প্রথমেই তিনি ব্যক্তিগত আক্রোশ ও প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে উঠলেন।
বহু বছর ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বেসরকারি কলেজে এমপিওভুক্ত শিক্ষক পদে চাকরি করছেন আলোচিত এই শিক্ষা দপ্তরের প্রধানের স্ত্রী। বেআইনিভাবে বিদেশে থাকা, নিয়মিত কলেজের না যাওয়াসহ বহু অভিযোগে তাকে কয়েকবছর আগে বরখাস্ত করেছিলেন কলেজটির পরিচালনা পর্ষদ। কাকতালীয়ভাবে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরেরই সাবেক মহাপরিচালক শেখ মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান মোহাম্মদপুরের ওই কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি।
প্রতিশোধের প্রথম পদক্ষেপ আগস্টের শেষে। সেই কর্মকর্তার স্ত্রীকে ওই কলেজে চাকরিতে পুনর্বহাল এবং তাকে যারা বরখাস্ত করেছিলেন তাদের সবাইকে এক হাত নেওয়া! প্রতিশোধপরায়ণ ও ক্ষমতাবান স্বামীটির নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠিত হলো আগস্টের শেষেই। কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সাবেক মহাপরিচালক ওয়াহিদুজ্জামানের বুক ধরফরানি শুরু। আরেক লুটেরা সাবেক অবৈধ মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুনের ল্যাসপেনসার হিসেবে শিক্ষাখাতে পরিচিতি রয়েছে ওয়াহিদুজ্জামানের।
প্রতিশোধের দ্বিতীয় পদক্ষেপ শুরু সেপ্টেম্বরে। পটুয়াখালীর সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতি তদন্ত করতে নিজ দপ্তরের এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিলেন। সাজানো অভিযোগ। অভিযোগকারীও শিক্ষা ক্যাডারের জুনিয়র। কাকতালীয়ভাবে অভিযোগকারী বদলি হয়ে শিক্ষাখাতের দুরমুজ-খ্যাত ডিআইএতে কর্মরত।
কয়েকমাস আগের কথা। নিজ দপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপরাধে নিজের পদটাই হারাতে হলো দাপুটে সেই স্বামী ও ১৪শ বিসিএস’র ইংরেজি অধ্যাপককে। চলে যেতে হলো ঢাকা থেকে অনেক দূরে সরকারি মুমিনুন্নেসা কলেজে। সাবাস পৃথিবী, অবাক শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা তাকিয়ে রয়! মামলা করে বদলির আদেশ ঠেকানোর নজিরবিহীন অপচেষ্টা করেও কাজ হলো না।
নানা অভিযোগে অভিযুক্ত গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ওএসডি হতে হলো শিক্ষা কার্ডের আরেকজন ১৪শ বিসিএসর হিসাববিজ্ঞানের অধ্যাপককে। শিক্ষা ক্যাডারের সবাইকে এপ্রিলের ফুল বানিয়ে হিসাবের খাতায় শূন্য দেখিয়ে বাগিয়ে নিলেন মহাক্ষমতার উৎস মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন পরিচালকের পদ! দুদকের তদন্ত চলমান ভাওয়াল কলেজের অধ্যক্ষথাকাকালের লুটপাটের অভিযোগ।
সেই এপ্রিল মাস থেকে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের আকাশে কালো মেঘ, বজ্রপাতের হুমকিও! মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজে প্রশাসন শাখা থেকে নাজিল করা আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ৮ মে ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ ও এর আশেপাশের সরকারি কলেজগুলোতে কর্মরত অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও অপরাপর শিক্ষকদের ওপর মেঘসমেত বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি হওয়ার শতভাগ কর্মসূচি রয়েছে! বজ্রপাতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখার জন্য ও প্রতিশোধের প্রথম পাঠের মুণ্ডুপাত করতে সরকারি কলেজসমূহের বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে আরেক সরকারি কলেজের ঠিকাদারদের কাজের তদারকি!
পুনশ্চ: ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের সহকর্মী ও জুলাই অভ্যুত্থানের রাজপথের সৈনিকরা ৫ আগস্টের পর বিতারিত ও ওএসডি সাবেক এক অধ্যক্ষকে খুলনার ডুমুরের ফুল দিয়ে বরন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।