উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণ হবে কি রোমানের | এসএসসি/দাখিল নিউজ

উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণ হবে কি রোমানের

অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালানো আর বাবার চিকিৎসা খরচ জোগানোর লড়াই করতে করতে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে রোমান আলী।

#উচ্চশিক্ষা #ছাত্র #এসএসসি ভোকেশনাল

অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালানো আর বাবার চিকিৎসা খরচ জোগানোর লড়াই করতে করতে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে রোমান আলী। তার এই অর্জন আজ এলাকার গর্ব ও অনুপ্রেরণার গল্প।

রোমান চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার তাঁতীপাড়া গ্রামের মো. তোফাজ্জল হক ও রুনা বেগমের একমাত্র ছেলে। তিনি বজরাটেক সবজা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সব বিষয়ে গোল্ডেন এ প্লাস অর্জন করেছে।

ছোটবেলা থেকেই জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি রোমান। যখন তার বয়স মাত্র চার বছর তখন তার বাবা নিম গাছ থেকে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। ভেঙে যায় কোমর, পরবর্তীতে নষ্ট হয়ে যায় একটি কিডনি। পরিবারের উপার্জনের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলে ভর্তি হলেও তার প্রতিদিনের সময় কাটে রিকশা চালিয়ে। সকালে স্কুল আর বিকেলে উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলা।

রোমান বলেন, আমার বাল্যকালে বাবা শারীরিকভাবে অচল হয়ে পড়ে। বড় হয়ে আমাকে পরিবারের হাল ধরতে হয়। পড়ালেখার সময় পড়ালেখা করি, স্কুল থেকে এসে বিকেলে রিকশা চালাই। তিনি জানান, আমি হতাশ হয়ে গেছিলাম পড়ালেখা করতে পারবো কি না। এজন্য আমার মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। লক্ষ্য ছিল বাবার ওষুধের ব্যবস্থার পাশাপাশি সংসার চালানো আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, পড়াশোনার খরচ চালানোর মতো আমার সামর্থ্য নেই। কষ্ট করে হলেও যতদূর সম্ভব পড়ালেখা চালিয়ে যাবো। পড়ালেখা করে আমি মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।

রোমানের চাচা মো. জহরুল হক জানান, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে আমার ছোট ভাই তোফাজ্জল গাছ থেকে পড়ে যায়। কোনোভাবে বেঁচে আছে। এখন ভাতিজা রোমানই রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। সারাদিন রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত শরীরে রাতে যতটুকু সময় পেয়েছে মন দিয়ে পড়েছে। ছোটবেলা থেকেই কষ্ট করে বড় হয়েছে। এত প্রতিকূলতার মাঝেও ভালো রেজাল্ট করেছে। কেউ যদি পাশে দাঁড়ায়, তাহলে ছেলেটা উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে এবং মানুষের মত মানুষ হবে।

মা রুনা বেগম বলেন, ছেলে স্কুল থেকে ফিরে কোনো বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাইনি। সংসারের টানাপোড়েনে রাস্তায় নেমেছে রিকশা নিয়ে। রাতে ক্লান্ত শরীরেও বই খুলে পড়তে বসত।

বাবা তোফাজ্জল হক বলেন, ছেলেটা বড় কষ্ট করে ভালো রেজাল্ট করেছে। কিন্তু এখন কীভাবে তাকে কলেজে পড়াব, সেটাই বুঝতে পারছি না। যদি কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিত তবে হয়তো ছেলের ভবিষ্যৎ আলোকিত হতে পারত।

তার এই সাফল্যে এলাকাজুড়ে খুশির আমেজ থাকলেও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ডুবে আছে। সহযোগিতা পেলে সে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে এমনটাই প্রত্যাশা রোমান ও তার পরিবারের।

#উচ্চশিক্ষা #ছাত্র #এসএসসি ভোকেশনাল