নৈতিকতার প্রশ্নে নারীর স্বাধীনতা ও সামাজিক শৃঙ্খলা | মতামত নিউজ

নৈতিকতার প্রশ্নে নারীর স্বাধীনতা ও সামাজিক শৃঙ্খলা

এমন পরিস্থিতিতে আমাদের একবার ভেবে দেখা দরকার— এই প্রতিবাদকারীরা কারা? তারা কি আমাদের মা, বোন, স্ত্রী বা কন্যা কিংবা তাদের মতাদর্শের প্রতিনিধিত্বকারী কেউ? অধিকাংশ ক্ষেত্রে না।

এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নারীর সংখ্যা প্রায় ৮.৫০ কোটি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে কয়েক হাজার কিংবা এক লাখ নারী যদি কোনো দাবিতে রাজপথে নামে, তাতে সমাজজুড়ে আলোড়ন তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এ সংখ্যাটি মোট নারীর তুলনায় নিতান্তই নগণ্য।

এমন পরিস্থিতিতে আমাদের একবার ভেবে দেখা দরকার— এই প্রতিবাদকারীরা কারা? তারা কি আমাদের মা, বোন, স্ত্রী বা কন্যা কিংবা তাদের মতাদর্শের প্রতিনিধিত্বকারী কেউ? অধিকাংশ ক্ষেত্রে না। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের পরিবার-পরিজনের নারীরা ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক রীতি এবং ব্যক্তিগত নৈতিকতায় গঠিত এক পরিপূর্ণতার প্রতিচ্ছবি।

অবশ্যই স্বীকার করি, একজন নারী মানুষ হিসেবে যে ন্যায্য অধিকার পাওয়ার কথা, তা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। পুরুষ, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অধিকার আদায়ে অগ্রগতি হয়েছে বটে, তবে কাজ এখনো অসম্পূর্ণ।

বর্তমান সময়ের নারী আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক সোচ্চার এবং সচেতন। পুরুষ সমাজও অধিকারের স্বীকৃতি দিতে শিখছে। এই পরিবর্তন অবশ্যই ইতিবাচক এবং সমাজের দীর্ঘদিনের অন্যায়-পিছিয়ে পড়ার বিরুদ্ধে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার নামান্তর।

তবে আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত—অধিকার অর্জনের নামে যেনো নতুন কোনো অশান্তি, বিশৃঙ্খলা বা মূল্যবোধ-বিরোধী চর্চা সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পায়। যৌন স্বাধীনতা, দেহব্যবসার বৈধতা কিংবা সমকামিতার মতো বিতর্কিত বিষয়গুলো শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বাধীনতার আওতায় বিচার করলে সামাজিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন এগুলো গুরুতর পাপ, তেমনি সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামোর ওপরও এর রয়েছে ধ্বংসাত্মক প্রভাব। পরিবার যখন ভেঙে পড়ে, তখন সমাজ তার মূল ভিত্তি হারায়।[inside-ad-1

এ দেশের মূল্যবোধ, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় আবহের সঙ্গে পশ্চিমা উন্মুক্ত সংস্কৃতির রয়েছে মৌলিক পার্থক্য। এখানে ব্যক্তির ইচ্ছা নয়, সমাজের সম্মিলিত বিবেচনাই মুখ্য। রাজপথে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরের ব্যবহারকে বৈধতার দাবি জানানো আসলে সমাজের শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এক দুঃসাহসিক আঘাত।

গোপনে অনাচার থাকলেও তা প্রকাশ্যে তুলে এনে সামাজিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা আত্মম্ভরিতা ছাড়া কিছু নয়। এর ফলে ঘৃণা, প্রতিরোধ এবং সামাজিক সংঘাত বাড়বে, যা কারোই কাম্য নয়।

রাষ্ট্রকে অবশ্যই সচেতন এবং কঠোর হতে হবে। আমাদের মা, বোন, স্ত্রী বা কন্যাদের মানসিক ও নৈতিক নিরাপত্তার জন্য এমন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ জরুরি। সংখ্যায় অল্প হলেও বিকৃত চিন্তার প্রকাশ যদি স্বাধীনতার নামে ছড়িয়ে পড়ে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ রেখে যাবো।

আমরা চাই নারীকে সম্মান দিতে। কিন্তু সেই সম্মানের মানে এই নয় যে, সমাজের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়া যাবে। ব্যক্তির স্বাধীনতা তখনই মূল্যবান, যখন তা বৃহত্তর সমাজের ক্ষতি না করে। নারীর অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষায় আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত থাকবে—কিন্তু সেটি অবশ্যই শালীনতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সামাজিক ভারসাম্যের মধ্য দিয়ে।

লেখক: প্রাবন্ধিক

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)