সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা উপলক্ষে আরাধনার আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হল। পুরো হল লোকে লোকারণ্য। ঢাবির বর্তমান ও প্রাক্তন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে জগন্নাথ হলের মাঠ। হল প্রশাসন ও বিভিন্ন বিভাগ ইনস্টিটিউটের মোট ৭৪টি মণ্ডপে হচ্ছে সরস্বতী পূজা।
সরেজমিন দেখা যায়, পুরো মাঠের চারপাশে পূজামণ্ডপ বসিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট। মোট ৭৪টি মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে জগন্নাথ হলের মাঠে। ৭২টি ডিপার্টমেন্টের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পরিবার পরিজন নিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বিদ্যার দেবীর আরাধনা করতে দেখা যায়। একই সঙ্গে ঢাকা বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জগন্নাথ হলে মাঠে পূজায় অংশগ্রহণ করে।
জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক দেবাশীষ পাল বলেন, এ বছর জগন্নাথ হলের পক্ষ থেকে একটি, বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউশনের পক্ষ থেকে ৭২টি ও জগন্নাথ হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মণ্ডপ বসানো হয়। মোট ৭৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবার। মণ্ডপের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে প্রত্যেক বিভাগ-ইনস্টিটিউটের পূজা কমিটির উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে। পূজার সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে হল প্রশাসনের মোট ১১টি উপকমিটি কাজ করছে।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সবার অংশগ্রহণের এই পূজা সম্প্রীতির ভিত মজবুত করবে বলে আশাবাদী প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক দেবাশীষ পাল। তিনি বলেন, আমার জানা মতে, এটি শুধু রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় আয়োজন না, সরস্বতী পূজায় পৃথিবীর অন্য কোথাও একসঙ্গে এতো মণ্ডপে পূজা হয় না।
নতুন বাংলাদেশের এই আয়োজন নতুন আঙ্গিকে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ার এক মহান প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। এবারের সরস্বতী পূজা তাই এক ভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপন হতে চলেছে। ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনের মধ্যে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, রক্তদান কর্মসূচি রয়েছে।
এ ছাড়া, হলের অভ্যন্তরে দর্শনার্থী শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদন উপযোগী বেশ কিছু রাইড, খেলনা ও বিশুদ্ধ খাবার দোকানের ব্যবস্থাও রাখতে দেখা গেছে। আগত পুণ্যার্থীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য হল স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত রয়েছে, সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির কড়া নিরাপত্তা।
প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক দেবাশীষ পাল পূজার সার্বিক আয়োজনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে বলে জানান। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন সার্বক্ষণিক ও কার্যকর তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জগন্নাথ হল প্রশাসন পূজামণ্ডপ থেকে শুরু করে সমগ্র হল প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় লোকবল ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আমাদের পাশে রয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), শাহবাগ থানা, ফায়ার সার্ভিস, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা এজেন্সি, যোগ করেন তিনি।
ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ছাত্র অনন্ত চন্দ্র পাল দৈনিক আমাদের বার্তা ও শিক্ষাডটকমকে জানান, জগন্নাথ হলে প্রতি বছরের মতো এবারও সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি ডিপার্ট্মেন্টের বর্তমান এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ সহায়তার মধ্যেমে এই আয়োজন সম্পন্ন করি আমরা।
বুয়েটের ডিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তন্ময় মালাকার বলেন, পূজার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে খুব ভালো লাগছে। এতো মানুষের উপস্থিতি দেখে আমি অভিভূত। অনেকগুলো মণ্ডপে ঘুরলাম। তবে এতোগুলো মণ্ডপ না করে সকার ফান্ডিংয়ে একটা বড় প্রতিমা বানালে বিষয়টা ব্যতিক্রম লাগতো।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সারা দিনব্যাপী চলবে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা। আগামীকাল মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে দুই দিনব্যাপী এ সরস্বতী পূজা।