বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি (ডক্টর অফ ফিলোসফি) ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষমতা ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের।
সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে অধ্যাপক মামুন এ মন্তব্য করেন।
তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
এইমাত্র একটা সংবাদ চোখে পড়লো যার শিরোনাম হলো: ‘পিএইচডি চালুর প্রথম অনুমোদন পেলো ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়’
যেখানে আমি মনে করি বাংলাদেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরই পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত না, সেখানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া একটা ভুল সিদ্ধান্ত। মনে আছে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কাদের পিএইচডি ডিগ্রি দিয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ যখন সেনাপ্রধান তখন তার অধীনস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। সাবেক পুলিশ প্রধানও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন? এরা কি ছুটি নিয়েছিলেন? এইটাতো ন্যূনতম শর্ত। এরকম অনেক ক্ষমতাবানরা পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে হঠাৎ কোন এক ভোর থেকে নামের আগে ড. লাগাতে শুরু করেন।
এত বছর যাবৎ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই জন্ম মাত্রই পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষমতা পেত কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পেত না। কি বৈষম্য! ব্র্যাক কেন বিদ্যমান নীতি অনুসারে সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত।
এখন প্রশ্ন হলো আমি কেন মনে করি বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়েরই পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই ক্ষমতা থাকার ফলে কি হয়েছে? বস্তা কি বস্তা পিএইচডি সার্টিফিকেট হয়েছে কিন্তু সত্যিকারের স্কলার খুব কমই হয়েছে। উচিত ছিল সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি দেওয়ার ক্ষমতা তুলে নিয়ে পিএইচডির ক্ষমতা পেতে কঠিন নিয়ম চালু করে তারপর নিয়মের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়ার নিয়ম চালু করা।
স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছর ধরে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পিএইচডি ডিগ্রি দিয়েছে। এগুলোর মান কি কখনো যাচাই করা হয়েছে? বাংলাদেশে পিএইচডি করে ইউরোপ আমেরিকায় কি কেউ পোস্ট-ডক পেয়েছে? ব্যতিক্ৰম কয়েকজন থাকতে পারে। গত ৫৪ বছরে ৫৪ জনও পোস্ট-ডক পায়নি বলে আমার নিশ্চিত ধারণা। বাংলাদেশে পিএইচডি করে বিদেশে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি হয়েছে? শুধু কলকাতা থেকে পিএইচডি করে বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট-ডক ফেলোশিপ পাওয়ার উদাহরণ ভুরিভুরি। ভারতে পিএইচডি করে বিশ্বসেরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি হওয়ার উদাহরণ ভুরি ভুরি। পার্থক্যটা বুঝতে পারছেন। খারাপ পিএইচডি উন্নত দেশ থেকেও হয়। কিন্তু মোট পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের একটা অংশ ভালো মানের হতে হয়।
পিএইচডি ডিগ্রি হওয়ার জন্য গবেষণার একটা ইকোসিস্টেম লাগে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথেষ্ট সংখ্যক আন্তর্জাতিক মানের গবেষক লাগে। সেই গবেষকদের টিচিং ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ লোড কমিয়ে গবেষণায় যথেষ্ট পরিমাণ ফ্রি সময় দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হয়। বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কি এই ব্যবস্থা আছে? বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কি পোস্ট-ডক পজিশন আছে? ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাইমেস্টার সিস্টেম দিয়ে চলে। অর্থাৎ শিক্ষকদের সারা বছর ক্লাসে পড়ানো, পরীক্ষা নেওয়া ও খাতা দেখতে দেখতেই জীবন শেষ। তাহলে গবেষণা করবে বা করাবে কখন?
আমাদের দেশে এইসব সিদ্ধান্ত যারা নেয় তারা নিজেরা যে পিএইচডি ডিগ্রি শর্ত ও গুরুত্ব বুঝে না এই সিদ্ধান্ত তার একটা বড় প্রমাণ। আমি দেখেছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য দরখাস্ত আহবান করে। আর কি বলব?