করোনার ছোবলে এবার স্কুলে সকল শ্রেণীতেই শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে অটো প্রমোশন। সকলেই পরবর্তী শ্রেণীতে উন্নীত হতে পেরেছে। এক্ষেত্রে অন্য কোন শ্রেণীতে নতুন সমস্যা হাজির না হলেও শিক্ষার্থীদের নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান ও ব্যবসা বিভাগ কিসের ভিত্তিতে দেয়া হবে তা নির্ধারণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। অটো প্রমোশনে সকলে সনদ পেলেও বিষয়ভিত্তিক নম্বরপত্র না দেয়ায় এবার নবম শ্রেণীতে এসে বিভাগ নির্ধারণের এ জটিলটা দেখা দিয়েছে। আটকে গেছে নবম শ্রেণীর বিভাগভিত্তিক বই বিতরণ প্রক্রিয়াও। এ অবস্থায় নতুন এই জটিলতা নিরসনের জন্য বিভাগ নির্ধারণের উপায় জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিভাগ নির্ধারণের সাময়িক এ জটিলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিভাগ দেয়ার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন স্কুল প্রধান ও গবর্নিং বডির সদস্যরা। তবে অধিকাংশ শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, বিভাগ নির্ধারণের বিষয়টি পুরোপুরি শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া প্রয়োজন।
শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানরা বলছেন, জেএসসি-জেডিসি অটো প্রমোশনের কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা নবম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে জটিলতা ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাপের বিষয়টি তাদের জানিয়েছেন। এরপর শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বিষয়টির সমাধানও চেয়েছেন চেয়ারম্যানরা। শিক্ষামন্ত্রী জেএসসির এ্যাসাইমেন্ট ও সপ্তম শ্রেণী ফলের ভিত্তিতে বিভাগ দেয়ার কথা বলেছেন। এতেও যদি জটিলতা দেখা দেয়, তবে স্কুল খোলার পর তিন মাস পর্যবেক্ষণ করে বিভাগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বলছেন, একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা শেষ করে ভবিষ্যতে কোন পেশা যুক্ত হবেন তা নির্ধারিত হয় নবম শ্রেণীতে। অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণী পাস করে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের কোনটিতে পড়বেন তা নির্ধারণ করতে হয়। অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী শিক্ষার্থীর অভিভাবকও চায় তার সন্তান বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবে।
কিন্তু দেশের নামকরা স্কুল ছাড়াও দেশের জেলা-উপজেলা স্কুলগুলো নবম শ্রেণীতে আসন সংখ্যা সীমিত। প্রতি বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্র্র্থীদের বিভাগ নির্ধারণ করা হয়। এবার জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না হওয়ায় বিভাগ বিরতণ নিয়ে বড় ধরনের ঝামেলা হচ্ছে। জেএসসি পরীক্ষা না নিয়ে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করায় বিপাকে পড়ে স্কুলগুলো। কাকে বাদ দিয়ে কাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করবেন তা নির্ধারণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এই সুযোগে অনেক স্কুলে অর্থের বিনিময়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষার্র্থীকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করার অভিযোগ এসেছে। বঞ্চিত শিক্ষার্র্র্র্থীর অভিভাবকরা শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করেন। এরপর বোর্ডের কর্মকর্তারা বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে এসএসসি-এইচএসসি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান, এনসিটিবির কারিকুলাম শাখার কর্মকর্তা ও রাজধানী কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। সেখানে একটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়াম্যান বিষয়টি উত্থাপন করে শিক্ষামন্ত্রীকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিয়ত অভিযোগ আসছে, বিভাগ দিতে তাদের নানা চাপ ও জটিলতা পোহাতে হচ্ছে। জেএসসি পরীক্ষা না হওয়ার এবার কিসের ভিত্তিতে বিজ্ঞান-ব্যবসা বিভাগ দেবে তার সমাধান চাচ্ছে আমাদের কাছে।