মার্চ মাসে দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দিলে করোনা প্রতিরোধ করা জরুরী হয়ে পড়েছিল। তখন ওষুধবিহীন এই করোনা রোগকে প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞগণ মানুষ হতে মানুষের দূরত্ব তথা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার (২০ আগষ্ট) জনকণ্ঠ পত্রিকার এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন মোঃ আঃ মুক্তাদির।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, এ ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিল না। কারণ শিক্ষার্থীদের জীবন ও স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে তাদের শিক্ষিত বানানো যায় না। ‘আগে তো বেঁচে থাকা, তারপরে লেখাপড়া’ - এটাই ছিল তখনকার নীতি। ফলে সব ব্যস্ত স্কুল-কলেজ নীরব হয়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের কোলাহলে মুখর থাকা স্কুল মাঠগুলো খাঁ খাঁ করতে থাকে। দীর্ঘদিন লেখাপড়া বন্ধ থাকার পরে অবশেষে অনলাইনে ক্লাসের পদ্ধতি সামনে আসে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের এক নতুন উদ্ভাবন এটা। শুরু হলো ছাত্র-শিক্ষকদের নতুন ভার্চুয়াল ব্যবস্থা। ভিডিও কল, মেসেঞ্জার, ভিডিও আপলোড, ফটো আপলোড প্রভৃতির মাধ্যমে চলল ছাত্র-শিক্ষকদের আন্তঃক্রিয়াকলাপ। নিঃসন্দেহে এটা কার্যকর উপায়। গৃহবন্দী অবরুদ্ধ জীবনে একটু করে হলেও শিক্ষার চাকা ঘুরতে লাগল। তবে এটার ভিন্ন দিকও আছে। আমরা ধীরে ধীরে এমনিতেই ভার্চুয়াল জীবনযাপনে আসক্ত হয়ে পড়েছি।
করোনার আগে থেকেই বাস্তবিক সাক্ষাতের চেয়ে অনলাইনে যোগাযোগ করার অভ্যাস অনেকের কাছে জনপ্রিয় ছিল, বিশেষ করে কিশোর-যুবক বয়সীদের কাছে। আগে যেসব বয়স্করা ফেসবুক, স্কাইপ, মেসেঞ্জারকে বাঁকা চোখে দেখতেন তারাই এখন নিরুপায় হয়ে এটার ব্যবহার করছেন। কিন্তু অধিকমাত্রায় ভার্চুয়াল জীবনযাপন করা সমাজের জন্য ক্ষতিকর বটে। শ্রেণীকক্ষে সহপাঠীদের সঙ্গে শিক্ষাগ্রহণের বদলে এই অনলাইন ক্লাস চালু থাকলে শিক্ষার্থীরা যে পুরোমাত্রায় ভার্চুয়াল হয়ে যাবে এটা নিশ্চিত।
পাশাপাশি অনলাইন ক্লাসের আরও একটা অসুবিধা হচ্ছে, এই ক্লাসে সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে না। এখনও অনেক পরিবার খুঁজলেই পাওয়া যাবে যাদের বাড়িতে ল্যাপটপ, পিসি তো দূরের কথা, পরিবারের কোন সদস্যদের কাছে এ্যান্ড্রয়েডফোন পর্যন্ত নেই। ফলে এরা শিক্ষার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
তাই বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এই অনলাইন ক্লাসও সামাজিক বৈষম্যের জন্ম দিয়েছে। তাই করোনায় অবরুদ্ধ দিনগুলোতে এটাই শিক্ষাদানের একমাত্র উপায় হিসেবে গ্রহণ করা উচিত হবে না। অনলাইনের এই ক্লাসগুলোকে কিভাবে সকলের কাছে পৌঁছান যায় তা নিয়ে আমাদের আরও ভাবতে হবে। কারণ ‘শিক্ষা অর্জন শৌখিন মানুষের দামী গাড়িতে চড়ার মতো’ হয়ে যাক, আমরা তা চাই না।
লেখক: মোঃ আঃ মুক্তাদির, জয়পুরপাড়া, বগুড়া থেকে