করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে প্রায় সাত আট মাস। এ অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট করানোর নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সে অনুযায়ী, সপ্তাহে একদিন প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট টপিক সংগ্রহ ও জমা দেবে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ উঠেছে, এটিকেই সুযোগ হিসেবে নিয়ে বাড়তি অর্থ আয় করছেন কিছু শিক্ষক। আবার স্কুলে যেতেও বাধ্য করা হচ্ছে কোথাও কোথাও।
দৈনিক শিক্ষার ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীপ্রতি অবৈধভাবে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই টাকা জোগাড় করতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর মাকে নিজের পরনের শাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে দিনমজুরের মেয়ে ওই শিক্ষার্থীকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে না বলে হুমকি দিয়েছিলেন এক শিক্ষক।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা-সামালোচনা।
স্থানীয়, ভুক্তভোগী ও তার মায়ের সূত্রে জানা যায়, দিনমজুর মো. শহীদ ও বিলকিস আক্তারের মেয়ে রিতু আক্তার আঠারবাড়ি এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার সে বিদ্যালয়ে যায় অ্যাসাইনমেন্ট আনতে।
এ সময় তার সহপাঠীরা শ্রেণি শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যাচ্ছে দেখে রিতুও এগিয়ে যায়। রিতু তাকে অ্যাসাইনমেন্ট দিতে বললে আনোয়ার হোসেন তিন পাতার প্রশ্ন (অ্যাসাইনমেন্ট), দুটি কলম ও এক পাতার সাজেশন দিয়ে ৩৪০ টাকা দাবি করেন। সে বাবার দেওয়া ১০০ টাকার একটি নোট দিলে তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন আনোয়ার। সেই সঙ্গে ৩৪০ টাকাই আনতে বলেন। অন্যথায় সে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে না বলে শাসিয়ে দেন। এতে সে অপমানিত হয়ে কান্নাকাটি করে বাড়িতে গিয়ে ঘটনা মাকে জানায়।
আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার রায়গঞ্জ উপজেলায় হাতেম হাসিল ভাতহাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শামীম হোসেন তালুকদার অ্যাসাইনমেন্ট দোকানে বিক্রি করছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, ৩০ টাকার বিনিময়ে বাজারের কম্পিউটারের দোকানে এসব অ্যাসাইনমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। সরেজমিনে ভাতহাড়িয়া বাজারের একটি দোকানে গিয়েও এর সত্যতা পেয়েছেন সাংবাদিকরা। দোকানের সামনে শত শত শিক্ষার্থীকে ভিড় করতে দেখা গেছে।
দোকান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করার কারণ জানতে চাইলে এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা শামীম স্যারের নির্দেশে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করছি। একেকটির দাম ৩০ টাকা।’
তবে শুরুতে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন শিক্ষক মো. শামীম হোসেন তালুকদার। অবশ্য পরে শিক্ষার্থীদের ভিডিও বক্তব্য ধারণ করা হয়েছে, সাংবাদিকরা এমন তথ্য জানালে তিনি আর কোনো মন্তব্য করেননি।
আমাদের বরিশাল প্রতিনিধি জানান, অ্যাসাইনমেন্ট বুঝিয়ে দিতে শিক্ষার্থীদের ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের কাছে যে বকেয়া বেতন রয়েছে তা নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে এ বেতন তোলা হচ্ছে। সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো বেতন নেয়া যাবে না, তা-ও সরকার বলেনি।
বরিশাল সদর উপজেলার অভিভাবক হাবিবুর রহমান মনে করেন, করোনায় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অনেক সময় পার করা হয়েছে। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের তেমন সম্পৃক্ত করা যায়নি। কারণ একদিকে শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব, অন্যদিকে ইন্টারনেট সুবিধা সবার না থাকা। এখন যে অ্যাসাইনমেন্টের কথা বলা হচ্ছে সেটা অনলাইনের চেয়ে ভালো। তবে এটা আরও অনেক আগে শুরু করলে ভালো হতো। কিন্তু এ অ্যাসাইনমেন্টের নামে স্কুলে শিক্ষার্থীদের আনা হচ্ছে। এনে তাদের কাছে স্কুলের বেতন, টিউশন ফি, সেশন চার্জ চাচ্ছে। আর সংসদ টেলিভিশন স্যাটেলাইট হওয়ায় এর মাধ্যমে যে পাঠদান করা হচ্ছে, তা-ও সবাই নিতে পারছে না। অবশেষে অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, অনলাইন থেকে অ্যাসাইনমেন্ট নিতে পারবে। তারপর সেটা না পারা গেলে স্কুল থেকে সংগ্রহ করবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে কেউ বাধ্য করতে পারবে না।