আলো আনবে ছাত্রলীগের বর্তমান প্রজন্মও - দৈনিকশিক্ষা

আলো আনবে ছাত্রলীগের বর্তমান প্রজন্মও

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ড. সমীর সাহা তাপস একজন অণুজীববিজ্ঞানী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাস করে বেনারস ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট করেন। দেশে ফিরে যোগ দেন ঢাকাস্থ শিশু হাসপাতালে; গড়ে তোলেন 'চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন'। সমীর সাহার সন্তান ড. সেজুতিও একজন অণুজীববিজ্ঞানী। সম্প্রতি তারা করোনাভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্স করে আলোচনার শীর্ষে চলে এসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল ছাত্রী সংসদের ভিপি সেতারা হচ্ছেন সেজুতির মা। বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনিও ডক্টরেট অর্জন করে যোগ দেন মহাখালী কলেরা হাসপাতালে। বুধবার (১০ জুন) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, চাঁদপুরের ছেলে সমীর সাহা জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে একই মিছিলের সঙ্গী ছিলাম আমরা। মেধাবী ছাত্র সমীর হল চত্বরে জয় বাংলা স্লোগান শুনলেই রুম থেকে বের হয়ে শামিল হতো ছাত্রলীগের মিছিলে। সেই ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের পতাকা হাতে সমীর সাহা যে যাত্রা শুরু করেছিল তা আজও আছে- শেখ হাসিনার একজন বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। আমরা সেই ছাত্রলীগের উত্তরাধিকার।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন সফলতার সঙ্গে। পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যখন দ্রুতলয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তখন মাঝেমধ্যেই আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিয়ে। প্রায়ই মনে হয় আমাদের সব অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে আজকের ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের কাছে এটি কখনও কাঙ্ক্ষিত নয়। যদিও জানি, ক্যাম্পাস কোনো দ্বীপ নয়। আমাদের সমাজেরই একটা অংশ। যেখানে লেখাপড়া করে আমাদের সন্তানরা। বাংলাদেশের বিরাজমান আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য থেকেই ছাত্র রাজনীতি চলে।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম বঙ্গবন্ধুর হাতে। অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও ছাত্রলীগ এগিয়ে গেছে সম্মুখপানে। মাঝেমধ্যেই দলের ভেতর- বাইরে নানাবিধ ষড়যন্ত্র হয়েছে। দল ভেঙেছে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

ষাটের দশকের পুরোটাই ছিল ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ক্যাম্পাসের মেধাবী, সাহসী ছাত্রছাত্রীরাই জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ক্যাম্পাস জয় বাংলা স্লোগানে ছিল মুখর। ষাটের দশকের পুরোটা সময়জুড়ে যে আন্দোলন দানা বাঁধে তার নেতৃত্বে ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদের মতো সংগঠকরা। তাদের নেতৃত্বে সারাদেশের দক্ষ সংগঠক, মেধাবী ছাত্ররাই মহান মুক্তিযুদ্ধে কৃষক-শ্রমিক-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে।

দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার পর পরই পাল্টে যেতে থাকে ছাত্র রাজনীতির চালচিত্র। ষাটের দশকের পুরোটা সময়ে তৈরি হওয়া মেধাবী, দক্ষ ছাত্রনেতাদের দিয়ে গড়ে তোলা হয় সদ্য স্বাধীন দেশের সরকারের প্রতিদ্বন্দ্ব্বী একটি ছাত্র সংগঠন। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগান দিয়ে সারাদেশে তৈরি করা হয় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিও এই সুযোগের অপেক্ষা করছিল। তারা মিশে যায় বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আড়ালে। তৈরি হয় শতাব্দীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট। সংগঠিত হয় নৃশংসতম পনেরোই আগস্ট।

পঁচাত্তরের মর্মান্তিক ঘটনার পর পেছনের দিকে যেতে থাকে বাংলাদেশ। একটি অরাজক পরিস্থিতির মাঝে দাঁড়িয়ে 'এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে' স্লোগানে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু, প্রলোভন, ভয়-ভীতি জয় করে এদেশের ছাত্রসমাজ জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত করে ক্যাম্পাস। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেল জয়লাভ করে। তখন দেশের মেধাবী ছাত্রদের একটা বিরাট অংশ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষে অবস্থান নেয়। কারণ এই তরুণ যুবকরা কোনো অর্থেই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে মেনে নিতে পারেনি।

জাতীয় রাজনীতির ঘোর অমানিশায় ঐক্যের প্রতীক হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের পাশাপাশি ছাত্রলীগও নতুন করে ঘুরে দাঁড়ায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আবার ছাত্রলীগকে নিয়ে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রশ্ন তোলা হয় রক্তের উত্তরাধিকার নয়, আদর্শের উত্তরাধিকার। প্রগতি আর প্রতিক্রিয়ার বিভাজনের স্লোগান তুলে অত্যন্ত সুকৌশলে মুজিব সৈনিকদের মাঝে দল ভাঙার খেলা চলে। অবশ্য এই বিভ্রান্তি কাটতে খুব বেশি সময় লাগেনি। কিন্তু ততদিনে ক্ষতি হয়ে গেছে অনেক। তবুও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর দেশপ্রেম দিয়ে অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে নেন।

পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে সংগঠিত হওয়া লাখ লাখ তরুণ-যুবক-ছাত্র তারা সবাই ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। আদর্শিক স্লোগানের আড়ালে দিকভ্রান্ত পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়ার যে ক্ষত সৃষ্টি হয় তার খেসারত দেশকে দিতে হচ্ছে আজও। বাংলাদেশ ছাত্রলীগকেও এর মাশুল গুনতে হচ্ছে। এখন ছাত্রলীগ দুরন্ত সাহসী; কারণ তাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস জননেত্রী শেখ হাসিনা।

আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও রাজনীতির হাতেখড়ি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সদস্য হিসেবে। তাই তো তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী। আজ দেশ পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের অনেকেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সুবর্ণ অতীতের মতো বর্তমান প্রজন্মও চেষ্টা করছে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। করোনার সর্বগ্রাসী ছোবলের মধ্যেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও যেমন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাস্তে হাতে কৃষকের পাশে থেকে পাকা ধান কেটে দিচ্ছে, আবার কোথাও কোথাও করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির সৎকারে সাহায্য করছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান ছাত্রলীগও দুঃসময় কাটিয়ে হিরণ্ময় আলোয় উদ্ভাসিত হবেই।

লেখক : অসীম কুমার উকিল, সংসদ সদস্য; বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036389827728271