ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের সমর্থনে দৈনিক মিল্লাতে যা লিখেছিলেন আসিফ নজরুল - দৈনিকশিক্ষা

ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের সমর্থনে দৈনিক মিল্লাতে যা লিখেছিলেন আসিফ নজরুল

সিদ্দিকুর রহমান খান |

বুদ্ধিজীবীর অন্যতম প্রধান কাজ প্রশ্ন তোলা। আবার প্রশ্ন তুললেই যে কাউকে আমাদের সমাজ বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। অহেতুক প্রশ্ন এবং কুযুক্তি দেয়ায় কারো কারো ললাটে জ্ঞানপাপীর তকমাও জুটে যায়। যাহোক, বুদ্ধিজীবী প্রসঙ্গে মনীষী আহমদ ছফার দেয়া ব্যাখার আলোকে আরেকদিন বিশদ আলোচনা করবো। আজ বরং কিছু সময়ের জন্য হলেও তিন দশক পেছনে ফিরছি। যখন সদ্য ক্ষমতায় বিএনপি। জাতীয় সংসদে বিরোধী আসনে আওয়ামী লীগ। যখন পচাঁত্তরের ১৫ আগস্টের খুনি চক্রের রাজনৈতিক দল ফ্রিডম পার্টি বহাল তবিয়তে। তাদেরই মুখপত্র দৈনিক মিল্লাত বাজারে। বিএনপি জমানাতেই যখন সংসদে কুখ্যাত ‘ইনডমনিটি অধ্যাদেশ-১৯৭৫’ বাতিলের জন্য সংসদে বিল পেশ করে আওয়ামী লীগ। যখন এ বিলের বিপক্ষে উঠেপড়ে লেগেছে সপরিবারে জাতির পিতার খুনিচক্র ও তাদের সুবিধাভোগী নামধারী একদল রাজনীতিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আজ এ লেখায় শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের ভূমিকার সামান্য অংশ তুলে ধরবো। যিনি টকশোতে সরব। করছেন আইন বিষয়ে অধ্যাপনা। পড়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে।  নাম মো. নজরুল ইসলাম। সাংবাদিক-টার্ণড-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যদিও সব মহলে আসিফ নজরুল নামে পরিচিত। ২০০১-২০০৬ মেয়াদের বিএনপি-জামাত শাসনামলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হতে পেরেছিলেন। 

অধ্যাপক আসিফ নজরুল। ছবি: দৈনিক শিক্ষাডটকম 
 
 
প্রিয় পাঠক, প্রায় তিন দশক আগে ‘ইনডেমনিটি বিল: প্যান্ডোরার বাক্স’ শিরোনামে দৈনিক মিল্লাতের নিবন্ধে আসিফ নজরুল অনেকগুলো প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং নানা যুক্তি খাড়া করেছিলেন বিলটির বাতিলের বিরোধিতা করে। সেই সময় আসিফ নজরুলের তোলা কিছু প্রশ্ন ওনার লেখা নিবন্ধ থেকে আপনাদের সামনে হাজির করব। তার আগে চলুন গত শুক্রবারের (১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১) প্রথম আলোতে আসিফ নজরুলের ‘খেতাব বাতিলের রাজনীতি’ শিরোনামের লেখায় উত্থাপিত কয়েকটি প্রশ্নের ওপর লাল কালি ফেলি। 
১. ‘স্বভাবতই প্রশ্ন আসে: বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপটে জিয়ার  খেতাব কেড়ে নেওয়া হলে, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীর খেতাবও কেড়ে নেওয়ার যৌক্তিকতা তৈরি হয় কি না।’
২.‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে তিন বাহিনীর প্রধানদের দুজন ছিলেন বীর উত্তম খেতাবধারী, তাঁরাও বঙ্গবন্ধুর খুনি সরকারের কাছে আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন। পরিস্থিতির চাপ ছিল, এ চাপ এড়ানোর জন্য পদত্যাগ করার সুযোগ তাঁদের ছিল। সেটি তাঁরা করতে পারেননি বলে তাঁদেরও কি খেতাব বাতিলের দাবি ওঠা সংগত? এ জাতিকে এভাবে কি প্রায় বীর উত্তম–শূন্য করে ফেলব আমরা? মুক্তিযুদ্ধের বীরদের এভাবে ছেঁটে ফেলা কি মুক্তিযুদ্ধেরই চরম অবমাননা হবে না?’
৩. ‘তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, জিয়াউর রহমানের সমর্থকেরাও একই কথা বলে থাকেন। হতে পারে তাঁর সমর্থকেরা অসত্য বলছেন, হতে পারে জিয়াউর রহমানের উদ্দেশ্য ভালো ছিল না। কিন্তু এসব বিতর্ক খেতাব কেড়ে নেওয়ার ভিত্তি হয় কী করে?’
 
পাঠক, তিন দশক আগে ‘ইনডিমিনিটি বিল: প্যান্ডোরার বাক্স’ শিরোনামে ফ্রিডম পার্টির পত্রিকা দৈনিক মিল্লাতে প্রকাশিত একই আসিফ নজরুলের লেখা, ‘আইনগত সংকট ছাড়াও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল নতুন রাজনৈতিক বিতন্ডা সৃষ্টি করেছে।’
তিনি আরো লেখেন, ‘ইনডেমনিটি বাতিল আওয়ামী লীগ শুধু বিচারের জন্যই চাইছে কি-না তা ষ্পষ্ট নয়।’ ‘তাছাড়া যারাই ইনডেমনিটি বাতিলের দাবি তুলবে বা এর পক্ষ হবে তাদের স্মরণ রাখতে হবে সমস্ত আইনগত জটিলতার কথা।’  
 
‘...অন্যদিকে আরো আদালতে আসবে শেখ মুজিবের সম্পর্কে বক্তব্য। সিরাজ সিকদারের হত্যাকারীকে খুঁজতে হবে। নাম আসবে হাজার যাদের হত্যা করা হয়েছিল এবং বিচার হয়নি। এর ফলে উদ্ভুত রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক বিতর্ক পান্ডেরার বাক্স খুলে দেয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। উদঘাটিত সত্য এবং এর দায়দায়িত্ব নির্ধারণের জটিলতা বিষাক্ত করে দিতে পারে বর্তমান রাজনীতির সুষ্ঠু বিকাশের একটা সম্ভাবনাকে।’ 
 
আসিফ নজরুল আরো লেখেন, ‘শেখ মুজিব হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার আওয়ামী লীগ বর্তমানে এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি তুলেছে। সংসদে আওয়ামী লীগ এ সংক্রান্ত বিলও পেশ করেছে। নীতিগত প্রশ্নে অনেক সংসদ সদস্যই এ বিল সম্পর্কে বেশ উদারই ছিলেন। তারা মনে করতেন পাস হলে হতে পারে, হওয়া উচিত। কিন্তু সংসদের আগামী অধিবেশনে এ বিলটির উত্থাপন ও পাসের যৌক্তিকতা নিয়ে এখন বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে।’
 
আসিফ নজরুলের কাছে খুব জানতে ইচ্ছে করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের বিরুদ্ধে যে ‘বিভিন্ন মহল’ প্রশ্ন তুলেছে সেই মহলের সদস্য কারা? আমার জানতে ইচ্ছে করে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সেই হত্যার দায়মুক্তি দিতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাস ও ২১ বছর ধরে এর লালন-পালন করা যে অসাংবিধানিক ও অবৈধ তা বুঝতে কি আইনের অধ্যাপক বা আইনজীবী হওয়া দরকার? খুনী চক্রের পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ কি কোনো শিক্ষকের কাজ হতে পারে?  আইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ভাতা খেয়ে বেআইনী কাজে লিপ্ত থাকার কি কি যুক্তি থাকতে পারে, জাতির কাছে আমার এ প্রশ্ন।
 
চোখ রাখুন: দণ্ডিত তারেক জিয়াকে নিয়ে বই লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক।
 
সিদ্দিকুর রহমান খান সম্পাদক, দৈনিক শিক্ষাডটকম।   
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077190399169922