মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মচারীকে ঘুষ দিয়ে এবং শূন্য পদের তথ্য গোপন করে এমপিওভুক্ত হওয়া রফিকুল ইসলামই রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে নানা কসরত শুরু করেছেন। রফিকুলের এমপিওভুক্তি অবৈধ। দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর অনুসন্ধানে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। রফিকুলের বিরুদ্ধে অবৈধ শাখায় খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত শিবিরকর্মী এইচএম সাইদুজ্জামান ও বরখাস্ত শাখা প্রধান নাসির উদ্দিনকে নিয়ে সিন্ডিকেট করারও অভিযোগ রয়েছে। সায়েদুজজামানের যাবতীয় অপকর্মের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যোগানদাতা নাসির উদ্দিন ও রফিকুল। নোট-গাইড কোম্পানীর কাছ থেকে টাকা হাতানোর কাজটি সায়েদুজ্জামান ও গ্রন্থাগারিক আসাদুজজামানকে দিয়ে করিয়ে থাকেন। আন্দোলনের মুখে বরখাস্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেনের সঙ্গে রফিকুলের ছিলো দারুণ সখ্য। কিন্তু পদত্যাগের পর সেই রফিকুলই এখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে মরিয়া।
এদিকে ঢাকা বোর্ড থেকে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের দায়িত্ব জ্যেষ্ঠতম শিক্ষককে দেওয়ার নির্দেশনা জারির পর তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, রফিকুল ইসলাম অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত হয়েছেন, যার প্রমাণ রয়েছে। আগের অধ্যক্ষ আবুল হোসেন পদত্যাগের পর তিনি এখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে চাচ্ছেন।
শিক্ষক কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে গত ৯ নভেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হোসেন। তিনি কলেজ শাখার একজন প্রভাষক। অভিযোগ আছে, সাত বছর আগে এই আবুল হোসেনকেও আইন লঙ্ঘন করে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও ঢাকা জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের প্রতিবেদনে তার নিয়োগ অবৈধ বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অযোগ্যতা, অদক্ষতা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ এনে শিক্ষক-কর্মচারীদের বড় একটি অংশ আন্দোলন করলে তিনি সরে যেতে বাধ্য হন।
শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, ‘আবুল হোসেন কায়দায়’ প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি ভার্সন অংশের সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা রফিকুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে চাচ্ছেন। তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করতে একটি প্রভাবশালী মহল উঠে পড়ে লেগেছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, রফিকুল ইসলাম অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি ভার্সনের সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন।
গত ১৪ নভেম্বর ঢাকার জেলা প্রশাসককে দেওয়া এক চিঠিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড বলেছে, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গত ৯ নভেম্বর পদত্যাগ করায় পদটি শূন্য হয়। ৩১ অক্টোবর ১৪০ জন শিক্ষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমপিও সিটের কলেজ শাখার জ্যেষ্ঠতম শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এদিকে অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে চাচ্ছেন বলে জানা গেছে, তবে সাধারণ শিক্ষকরা চাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটিতে প্রেষণে কোন সরকারি শিক্ষককে প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। শিক্ষকদের আন্দোলনের সময়ও তারা এ দাবি জানিয়েছিলেন।
৯ নভেম্বর ইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবুল হোসেনকে ‘অযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে তার অপসারণ দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নামেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীরা। ব্যানারে লেখা ছিল,‘অবৈধ, দুর্নীতি পরায়ণ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অপসারণ ও ডেপুটেসনে আর্মি প্রিন্সিপাল চাই’, ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত বিশেষ কমিটি চাই’ ইত্যাদি। মানববন্ধনে শিক্ষকরা কয়েকদফা দাবি জানান। এ দাবিগুলো মধ্য অন্যতম ছিল, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘণ করা সব পদায়ন বাতিল করতে হবে, আগের মতো সেনাবাহিনী থেকে ডেপুটেশনে অধ্যক্ষ নিয়োগ করতে হবে।
সাধারণ শিক্ষকরা বলছেন, আমরা এখন প্রতিষ্ঠানে কোন দলাদলি চাই না। আমরা নাই ডেপুটেশনে একজন সেনা কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পাক। তা না হলে সরকারি কলেজের কোন শিক্ষককে সরকার প্রেষণে নিয়োগ দিতে পারেন। তাও যদি না হয় তাহলে বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হোক। ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচনের নাম শিক্ষকদের মধ্যে নতুন করে গ্রুপিং শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষকরা।