হল ছাড়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার ক্যাম্পাস। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সব শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘোষণার প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। মাদরাসার শিক্ষার্থীর এক প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে বুধবার শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হলে তারা আন্দোলন শুরু করেন।
হল ছাড়ার নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করা, ক্যাম্পাসে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা-এর হল কমিটি ও স্টাফ কাউন্সিলের সর্বসম্মতিক্রমে আল্লামা কাশগরী (রহ) হল ও ইব্রাহীম হল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো। গত বুধবার এ ঘোষণা আসার পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদেরকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিকেল সাড়ে ৩টায় আন্দোলন স্থলে এসে হল সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মাদরাসা প্রশাসন শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
শিক্ষার্থীরা জানান, প্রায় চার একর জমি নিয়ে নির্মিত সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসের নামমাত্র দুটো ভবন ছাড়া সব মাঠ এবং ভূমি ইতোমধ্যেই বেদখল হয়ে গেছে। সর্বশেষ হলের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে অবস্থিত প্রধান হল সুপার এবং সহকারী হল সুপারের বাসভবন ভেঙে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এমনকি হল সুপারের বাসভবনের ওপর মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যানার লাগানোর চেষ্টাও করা হয়। শিক্ষার্থীরা এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় প্রশাসন তাদের ওপর চড়াও হয়েছে। নিজ ক্যাম্পাসে অন্য প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণে শিক্ষার্থীরা বাধা দেওয়ায় মাদরাসা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে ও হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বর্তমানে এ মাদরাসায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। অথচ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের জন্য একটিমাত্র জরাজীর্ণ আবাসিক হল রয়েছে, যা মাত্র ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য যথেষ্ট। এছাড়াও শরীরচর্চা কেন্দ্র, আধুনিক পাঠাগার, ছাত্র সংসদ কক্ষ, শিক্ষার্থীদের পাঠকক্ষ পর্যন্ত নেই। এমন জরাজীর্ণ অবস্থায় নিজ ক্যাম্পাসের উন্নয়ন না করে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেখানে জমি সংকটের কারণে আলিয়া মাদরাসারই ভালো কোনো ভবন নেই সেখানে কী করে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ করা হয়? প্রশাসন সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং বিকেল ৪টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। আমরা হাল ছাড়ব না।
বুধবার সকালে সরকারি মাদরাসা-ই আলিয়ার আল্লামা কাশগরী (রহ) হল ও ইব্রাহিম হলের সুপার বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সই করা বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসে সরকারি কাজে বাধা প্রদান, অধ্যক্ষ শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করা, ক্যাম্পাসে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার দুটি হল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে বুধবার বিকেল ৪টার মধ্যে অবস্থিত সব শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
অধ্যক্ষ প্রফেসর আলমগীর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী মহোদয় আমাদের ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। তারা সব পর্যালোচনা করে একটি পুরনো ভবন ভেঙে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ভবন তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সরকার কাজ করছে। এ কাজ শুরু হতেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করেছি। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি নতুন ভবন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন শিক্ষার্থীরা এর বিরোধীতা করছেন।
অধ্যক্ষ আরও জানান, এখন মাদরাসায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী পড়ছে। আর হলে সিট আছে ৩৫২ টি। এরমধ্যে দেড়শ শিক্ষার্থী বৈধভাবে হলে অবস্থান করছেন।