মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ১৭ মাস বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার পর প্রায় এক মাস পেরিয়েছে। এখনও হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের অনেক প্রাথমিক শিক্ষার্থী ক্লাসে ফেরেনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের দেওয়া তথ্য\হঅনুযায়ী, জেলায় গড়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৭৭. ১৭ শতাংশ এবং প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় উপস্থিতি ৭৪. ৯২ শতাংশ।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রথম শ্রেণির মোট পাঁচ হাজার ১৯৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল তিন হাজার ৬৩৯ জন। একইভাবে দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, শাল্লা, দিরাই, জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায়ও প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান সপ্তাহে এক দিন হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান হয় সপ্তাহে দু'দিন। তবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে প্রতিদিন। পুরো জেলায় মঙ্গলবার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল পর্যায়ক্রমে সুনামগঞ্জ সদরে পাঁচ হাজার ১৮৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে তিন হাজার ৭২২ জন, দোয়ারাবাজারে পাঁচ হাজার ১৮০ শিক্ষার্থীর মধ্যে\হচার হাজার ছয়, বিশ্বম্ভরপুরে তিন হাজার ৬৮০ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই হাজার ৭২৩, ছাতকে ৯ হাজার ৫৩৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছয় হাজার ৮৭০, তাহিরপুরে ছয় হাজার ৮০৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচ হাজার ৬৫৭, জামালগঞ্জে তিন হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই হাজার ৬৯৫, ধর্মপাশায় চার হাজার ৯৬১ শিক্ষার্থীর মধ্যে তিন হাজার ৫২২, শাল্লায় এক হাজার ৭১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে এক হাজার ৩৩৩, জগন্নাথপুরে ছয় হাজার ৮৯২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছয় হাজার ২৮৩ ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে তিন হাজার ৩২৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই হাজার ৬৩২ জন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নে অচিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে দুই কিলোমিটার। মহামারি করোনার জন্য অন্যান্য বিদ্যালয়ের মতো প্রায় ১৭ মাস বন্ধ ছিল বিদ্যালয়টি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী খুলে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় বিদ্যালয়টি মুখর হয়েছে। তবে ২৬ দিন পার হলেও অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসছে না।
অচিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্চনা রানী মজুমদার বললেন, '৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। যারা আসছে না, তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বিভিন্ন অজুহাত দিচ্ছেন। কেউ বলছেন বাড়িতে নেই, বেড়াতে গেছে। আবারও কেউ বলছেন, শিক্ষার্থী অসুস্থ রয়েছে। সুস্থ হলে বিদ্যালয়ে ফিরবে।'
ধর্মপাশা উপজেলার কায়েতকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমা সান্যাল বললেন, 'গড়ে প্রতিদিন ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। বাকি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। করোনাকালে অনেক পরিবার কাজ হারিয়ে শহরে চলে গেছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বলেছে শিক্ষার্থীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে। আশা করি, আগামী ১০ দিনের ভেতর শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি পাব।'
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান বলেন, 'অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসছে না। জ্বর ও নানা অসুখ-বিসুখের অজুহাত দিচ্ছেন তাদের অভিভাবক। মূল কথা হলো, অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার কর্মসংস্থানের জন্য বাইরে চলে গেছে। কিছু শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় চলে গেছে। বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে কিছু শিক্ষার্থী। তবে তাদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি আমরা।