এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ঈদ আনন্দ! - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ঈদ আনন্দ!

বিশ্বাস ওয়াহিদুজ্জামান |

বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সমাজের এক বা একাধিক ব্যক্তির সম্মিলিত উদ্যোগে  বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। পরে আবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রবর্তিত বিধি-বিধান মোতাবেক একাধিক সরকারি সংস্থার সুপারিশের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদানের অনুমতি পায়। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পাঠদান সমাপন করে ৩টি পাবলিক পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করলে আবেদনের প্রেক্ষিতে তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডের স্বীকৃতি পায়। ডিগ্রি শ্রেণির জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফাজিল কামিলের জন্য বর্তমানে আরবি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির গাইডলাইন মোতাবেক স্বীকৃতি দেয়। এ স্বীকৃতির ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য কোনোরূপ সরকারি বেতন-ভাতা দাবি করবো না মর্মে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে কমিটির একটি মুচলেকা দিতে হয়। 

তবুও স্বীকৃতি পাওয়ার পর শুরু হয় এমপিওর (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) তদবির। তদবির কেনো লিখলাম তা পাঠক ও শিক্ষক সমাজের জানা। তদবিরের সুবাদে এমপিও পেলে শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের সরকারি সহকর্মীর সমপদের নির্ধারিত বেতন স্কেলের ১০০ শতাংশ, এবং ১ হাজার টাকা হারে বাড়িভাড়া ও ৫০০ টাকা হারে চিকিৎসাভাতা পান। তা থেকে আবার চার শতাংশ কল্যাণ ও ৬ শতাংশ হারে অবসরভাতা কেটে রাখা হয়। কিন্তু কোন শিক্ষকের মোট কতো টাকা অবসর ও কল্যাণ তহবিলের কাটা হলো তার কোনো পে-স্লিপ প্রদানের বা দেখার সুযোগ নেই। হাইস্কুল ও কলেজের এমপিও দেয়  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসার বেতন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, আর কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দেয় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। অপরদিকে, সাধারণ স্কুল ও কলেজের সঙ্গে সংযুক্ত কারিগরি ট্রেড/বিএম এর বেতনাদি দেয় কোনো প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।

এবার আসি ঈদ উৎসব ভাতা আলোচনায়। দেশের সব সরকারি স্বায়ত্বশাসিত, আধাস্বায়ত্বশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে এটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বর্তমান মূলবেতন স্কেলের ১০০ শতাংশ অর্থাৎ সমান। কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য এটি মাত্র ২৫ শতাংশ। কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ। এটি প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। হিন্দু মুসলিমসহ সব ধর্মাবলম্বীদের বছরে ২ ঈদের সময় এক এমপিওশিটেই উৎসব ভাতা দেয়া হয়। 
দুখজনক হলেও সত্য প্রতিবছর ঈদ উৎসব ভাতা বা বেতনের সরকারি অংশের চেক ছাড় করে ঈদের মাত্র ৪/৫ দিন আগে। এর মধ্যে আবার থাকে সরকারি ছুটি/সাপ্তাহিক ছুটি। এজন্য অধিদপ্তর থেকে বৃহত্তর ঢাকা বিভাগের জন্য সাধারণত অগ্রণী ব্যাংক, সাবেক চট্টগ্রাম বিভাগে সোনালী ব্যাংক. সাবেক খুলনা বিভাগে রূপালী ব্যাংকের হেড অফিস বা স্থানীয় কার্যালয় চেক পায়। সারা দেশের স্বস্ব ব্যাংক শাখার মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা তাদের স্বস্ব অ্যাকাউন্টে প্লেস হয়ে থাকে। শিক্ষকদের বিল ছাড়ের পরে স্মারক নম্বরসহ বিল প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যাংক শাখায় জমা হতে হয়। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখায় এই সময়ে ব্যাপক ভীড় লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষকরা চেক দিয়ে টাকা তুলতে অধিক অভ্যস্ত। ডেবিট কার্ড ক্রেডিট কার্ড, ওয়ালেট এসব সেবা তারা কম নেন বা অনেক ক্ষেত্রে কম বোঝেন। তাই তীর্থের কাকের মতো শিক্ষকদের অপেক্ষায় থাকতে হয় কখন তার ব্যাংক হিসেবে এমপিওশিট দেখে ক্রেডিট হবে। তারপর চেক দিয়ে টাকা তুলে তার স্নেহের সন্তান, পরিজনের জন্য সামান্য কিছু জামা-জুতা বা পোশাকাদি কিনবেন বা চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ কিনবেন বা পোষ্যের স্কুল-কলেজের বেতনাদি বা প্রাইভেট কোচিং ফি দেবেন। 

আমরা এখন মধ্যম আয়ের একটি দেশের বাসিন্দা। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন বিগত সময়ের চেয়ে অনেক উন্নত। অনেক মেগা মেগা প্রজেক্ট প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে সফল সমাপ্ত হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজের এই ঈদ উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হোক। সেক্ষেত্রে জনবল প্রায় ৬ লাখ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট প্রণয়ের কাজ চলছে এখন শিক্ষা ও অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগে। আমাদের প্রাণের দাবি এ বাজেটে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদ উৎসব ভাতা ১০০ ভাগ ধরে বাজেট করা হোক। এর ফলে সরকারের ভাবমুর্তি আমাদের শিক্ষক সমাজের কাছে আরো উন্নত হবে। নতুন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সদিচ্ছা বাস্তবে দেখার অপেক্ষায় দেশের প্রায় ৬ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী পরিবার। মনে রাখা প্রয়োজন এসব শিক্ষক ও তার পরিবারের অনেক সদস্য ভোটার বটে। তাদের অনেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনীতিও করেন। তাদের উৎসব ভাতার এই সামান্য কাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক আরো সৃদৃঢ় হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে, রোজার শুরু হতে শিক্ষক সমাজের নানা কাকুতি-মিনতিসূচক পোস্ট কোনো সচেতন নাগরিকের নজরে আসে বলে মনে হয় না। যদি আসতো তাহলে পরিবর্তন দেখা যেতো।  

বিশেষে ক্ষেত্রে এটি একধাপে সম্ভব না হলে প্রথম বছরে ৫০ শতাংশ, ২য় বছরে ৭৫ শতাংশ আর ৩য় বছরে ১০০ শতাংশ করলেও শিক্ষক সমাজ আশার আলো দেখতো। তারা ২৫ বছর ধরে একই পরিমাণ উৎসব ভাতা আশা করে না। দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার উন্নয়নের এই সময়ে তারা এই উৎসব ভাতাকে অতি সামান্য ও অপ্রতুল মনে করছেন। আর ঈদের মাসের বেতন ও উৎসব ভাতার চেক যেনো কমপক্ষে ১৫ দিন আগে ছাড় দেয়া হয় সেটি শিক্ষকদের প্রাণের দাবি। তাহলে তারা ন্যূনতম সাংসারিক বাজেট করে সামর্থ্য মতো ঈদ উদযাপন করতে পারেন। জয়তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জয়তু শিক্ষকের বেতন সংশ্লিষ্ট ৩টি অধিদপ্তর! 

লেখক: শিক্ষা সংগঠক

 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076279640197754