মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আরবিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক অবসরে যান গত মাসের অক্টোবরের ২৪ তারিখে। মাস পার না হতেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান লিখনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। এজন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেনও হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানেন না অন্যান্য শিক্ষকরাও। গত ২০ নভেম্বর পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ম্যানেজিং কমিটি। নিয়োগ পরিক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য তিন জন ডেমি প্রার্থীও ম্যানেজ করা হয়। কিন্তু গোপন এই প্রক্রিয়ায় বাধ সাধলেন মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন। তার হস্তক্ষেপে গোপনে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ লেনদেনের মধ্যেমে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া চুড়ান্ত হয়েছিল। এই টাকার বেশি অংশ স্কুল কমিটির বর্তমান সভাপতি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার, ডিজির প্রতিনিধি মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খোরশেদা আলমসহ নিয়োগ কমিটির কয়েকজনকে ভাগ দেয়ার কথা ছিল।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক এক সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, হাবিবুর রহমান লিখনের সাথে বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাবেক প্রধান শিক্ষক ৭ লাখ টাকা ঘুষ নেন। যার অর্ধেক করে ভাগাভাগি করে নেয়ার কথা ছিল। পরে সাবেক প্রধান শিক্ষককে টাকার ভাগ না দিয়ে ঘুষের টাকা দিয়ে একটি পিকআপ কিনেছে মোহাম্মদ আলী। যার একটি মোটরসাইকেল কেনারও ক্ষমতা ছিলনা।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাশার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও কমিটি গঠনে অবৈধ লেনদেন করছেন। এ কারণে প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিরোধ রয়েছে।
অভিযোগেরর বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুল বাশার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ঘুষ নেয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এছাড়া একটি অখ্যাত পত্রিকায় নিয়োগ সার্কুলার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এমনটি কেন হল এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এটা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি করেছে। নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার কারণ ডিজির প্রতিনিধি জানেন।
নিয়োগ কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজির প্রতিনিধি ও মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খোরশেদা আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, গাংনীর এমপি মহোদয় নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে আপত্তি জানানোয় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ঘুষ নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলে এটি একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ।
বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক ইমরান হাবিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানেন না। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য ইউসুফ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি এবং বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সাথে কথা বলতে বলেন।
প্রধান শিক্ষক প্রার্থী হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমের সাথে ফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তিনি প্রতিবেদককে সরাসরি দেখা করতে বলেন। এর বেশি কিছু বলতে চাননি।
বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সব প্রক্রিয়া মেনে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। চার জন প্রার্থী আবেদন করেছেন, তাদের নাম মনে নেই। কিন্তু এমপি সাহেব ঝামেলা করায় নিয়োগ বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা। তিনি আরও বলেন, এমপি সাহেব কে? তিনি নিয়োগ দেয়া বা বন্ধ করার মালিক না।
মেহেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন জানান, নিয়োগ সংক্রান্ত সুপারিশ করার পর ডিজির প্রতিনিধি, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও স্কুল কমিটির সভাপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া করে থাকেন। এতে ব্যাত্যয় হয়েছে এমন অভিযোগ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর-২ আসনের এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, গত মাসের ২৪ তারিখে সাবেক প্রধান শিক্ষক অবসর নিলেন। এরই মধ্যে গোপনে অখ্যাত পত্রিকায় সার্কুলার দিয়ে গত ২০ তারিখে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়। এর মধ্যে অন্য একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ডেমি প্রার্থী করা হয়। আমি বলেছি এটা ওপেন করতে। যাতে করে অনেকেই এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। ঘুষ বাণিজ্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কোন লেনদেনের কথা আমার কানে আসেনি।
১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে গাংনী উপজেলার চারটি গ্রামের অদ্যক্ষর দিয়ে আরবিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে সাত শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।