আফ্রিকা, ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হওয়ার পর ওই দেশগুলোতে যাতায়াত নিষিদ্ধ করা ও ও সভা-সমাবেশ সীমিত করাসহ চারটি সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
রোববার কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৪৮তম সভায় বিশদ আলােচনার পর এসব সুপারিশ করা হয়।
সভায় বলা হয়, করােনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন হিসেবে ঘােষণা করেছে। এর বিস্তার রােধ করার জন্য এশিয়া, ইউরােপ ও আমেরিকার অনেক দেশ, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ সে অঞ্চলের কয়েকটি দেশ (জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, বােতসােয়ানা, সােয়াজিল্যান্ড) থেকে যাত্রী আগমনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরােপ করেছে (প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ ফ্লাইটসহ)।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশগুলো হল:
#এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও এসব দেশ এবং যেসব দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে সেসব দেশ থেকে যাত্রী আগমন বন্ধ করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
#কোনাে ব্যক্তির এসব দেশে ভ্রমণের সাম্প্রতিক (বিগত ১৪ দিনে) ইতিহাস থাকলে তাদের বাংলাদেশে ১৪ দিন ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কোভিড-১৯ এর টেস্ট পজিটিভ হলে আইসোলেশন করতে হবে।
#প্রতিটি পোর্ট অব এন্ট্রিতে স্ক্রিনিং পরীক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে পালন করা (স্কুল কলেজসহ), চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা ও বিভিন্ন (রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়) সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করার সুপারিশ করা হল।
#কোভিড-১৯ এর পরীক্ষায় জনগণকে উৎসাহিত করার জন্য বিনামূল্যে পরীক্ষা করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
করোনার এই নতুন সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগজনক অবস্থায় সুইজ্যারল্যান্ডের সরকারি প্রোগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেও মাঝপথ থেকেই অন্য ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি জানান, দক্ষিণ আফ্রিকান নতুন ধরণটির সংক্রমণ শুরুর পর আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ স্থগিত করা হচ্ছে। সব এয়ারপোর্ট, ল্যান্ডপোর্টে বা দেশের সব প্রবেশপথে স্ক্রিনিং আরো জোরদার করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সারা দেশেই স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে ও মুখে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে সব জেলা শহরের প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনকে তালিকাভুক্ত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বা ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে। জিনবিজ্ঞানীরা নতুন এই ধরণের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পর জানিয়েছেন, চীনের উহানে আবির্ভূত হওয়ার পর নতুন এই করোনাভাইরাসের যতগুলো ধরন এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ওমিক্রনেই জিন বিন্যাসে পরিবর্তন এসেছে সবচেয়ে বেশি।
গোটা বিশ্বকে সতর্ক করে তারা আরও বলেছেন, করোনাভাইরাসের যেসব টিকা এ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, সেগুলো ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে। আবার জিন বিন্যাসে পরিবর্তনের কারণে এ ভাইরাস অনেক বেশি দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখতে পারে। তবে তারা এটাও বলছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ কতোটা প্রভাব ফেলতে পারে সেটা বুঝতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।