করোনা টিকা : জন্ম নিবন্ধনে ডিজিট জটিলতায় ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

করোনা টিকা : জন্ম নিবন্ধনে ডিজিট জটিলতায় ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জন্ম নিবন্ধনের ডিজিট জটিলতায় আটকে গেছে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম। এখন শুধু এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অন স্পট টিকা দেওয়া হচ্ছে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আপাতত রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে না। প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান করে সবার জন্য রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে কাজ করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী যেসব শিক্ষার্থী গত কয়েক বছর জন্ম নিবন্ধন করেছে, তারা ১৭ ডিজিটের নম্বর পেয়েছে। আর যারা আগে জন্ম নিবন্ধন করেছে, তাদের ১৬ ডিজিটের নম্বর। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অধিদপ্তরের সুরক্ষা অ্যাপে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন সনদ চাওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই ১৬ ডিজিটের সনদ থাকায় তারা বারবার চেষ্টা করেও রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে না। মাউশি অধিদপ্তর আইসিটি অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানোর পর তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।

মাউশি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে গত বুধবার পর্যন্ত ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতেই নিয়েছে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী। ঢাকার বাইরে খুবই সামান্যসংখ্যক শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে।  

মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘এখন অন স্পটেই এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। যেকোনো ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন দিয়ে যেন রেজিস্ট্রেশন করা যায় সে জন্য সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছে আইসিটি অধিদপ্তর। আমরা আশা করছি, দ্রুততার সঙ্গে সব শিক্ষার্থীর জন্য রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’

অধ্যাপক গোলাম ফারুক আরো বলেন, ‘আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ জন্য আমাদের লক্ষ্য ছিল ২ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শেষ করতে। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনে জটিলতা হওয়ায় তাদের অন স্পট টিকা দেওয়া হচ্ছে।’

সূত্র জানায়, ২০১৬ বা ২০১৭ সাল থেকে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন চালু হয়। এর আগে ছিল ১৬ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন। বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থীর বয়স ১২ বছর, তারা সাধারণত ২০১৬ সালের আগেই জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়েছে। তবে কোনো কোনো শিক্ষার্থী পরে সনদ নিয়েছে। আবার কেউ কেউ নাম বা বয়স পরিবর্তন করে নতুন করে জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়েছে। এসব শিক্ষার্থীই এখন টিকা নিতে পারছে।

গত ১ নভেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা মহানগরের মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল কেন্দ্রে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর রাজধানীর হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চিটাগং গ্রামার স্কুল, ঢাকা কমার্স কলেজ, কাকলি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথ ব্রিজ স্কুল ও স্কলাসটিকা স্কুল কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারছে রাজধানীর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক টিকা কর্মসূচি উদ্বোধনের সময় বলেছিলেন প্রতিদিন অন্তত ৪০ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও সারা দেশে মাত্র দুই লাখ শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে। এতে সব শিক্ষার্থীর টিকাদান কার্যক্রম শেষ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে বলে আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মাউশি অধিদপ্তরের এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা ইএমআইএস সেল সূত্রে জানা যায়, সারা দেশের ২২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় এক কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। রাজধানীতে মোট ৬৩৫টি (ইআইআইএন নম্বরধারী) স্কুল ও কলেজ রয়েছে। এগুলোতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী মোট শিক্ষার্থী প্রায় ছয় লাখ। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এ পর্যন্ত তিন লাখ ৬০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর তথ্য মিলেছে, যারা রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধনের চেষ্টা করছে।

ইএমআইএস সেলের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে আইসিটি অধিদপ্তরকে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর তালিকা দিয়েছিলাম। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে যাদের ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন সনদ রয়েছে, তারা সহজেই রেজিস্ট্রেশন শেষে টিকা নিতে পেরেছে। তবে জন্ম নিবন্ধনে যে ডিজিটই থাকুক না কেন সবাই যেন টিকা নিতে পারে সে জন্য আইসিটি অধিদপ্তর কাজ করছে। আমরা তাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করছি।’

রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমার ছেলের জন্ম নিবন্ধনের ডিজিট ১৬ নম্বরের। বেশ কয়েক দিন চেষ্টা করেও রেজিস্ট্রেশন করতে পারিনি, টিকাও নিতে পারছে না। অথচ পড়ালেখার জন্য নিয়মিতই আমার ছেলের বাইরে বের হতে হচ্ছে। এই ১৬ ডিজিটের শিক্ষার্থীরা যে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না, তা আমাদের জানিয়ে দিলে আমাদের এত দুশ্চিন্তা করতে হতো না।’ 

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে প্রযুক্তিগত যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা আগে থেকেই চিন্তা করা উচিত ছিল। রেজিস্ট্রেশন করতে না পেরে অনেকেই সিটি করপোরেশনের জন্ম নিবন্ধন অফিসে, আবার কেউ কেউ শিক্ষা অধিদপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করেছে। এতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একেকজনের জন্ম নিবন্ধনে একেক রকম ডিজিট। যেকোনো ডিজিট দিয়েই যাতে টিকার রেজিস্ট্রেশন করা যায়, সরকারকে দ্রুততার সঙ্গে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042018890380859