আবাসিক হল খুলে দেওয়ার লক্ষ্যে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েক দফা নির্দেশ দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। সর্বশেষ শুক্রবার এসএমএসের মাধ্যমে তাদের টিকা নেওয়ার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। শতভাগ শিক্ষক টিকার আওতায় এলেও প্রায় ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী ও ২৭ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকা নেননি। আর মাত্র ছয়দিন পর ১৭ অক্টোবর রাবি প্রশাসন সব আবাসিক হল খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইসিটি সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. বাবুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ১৭টি আবাসিক হল খুলে দেওয়া হচ্ছে। ২০ অক্টোবর থেকে ৯টি অনুষদের অধীন ৫৮টি বিভাগে সশরীরে ক্লাস শুরু হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ২৪ হাজার জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সাড়ে ১৪ হাজার ৫০০ জন টিকা নিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে টিকা নিতে সাড়ে তিন হাজার জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সংখ্যা এক হাজার ১০০ জন। সব শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা তিন হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে আড়াই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকা নিয়েছেন।
এদিকে সম্প্রতি হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়-আবাসিক হলের কার্ড ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিয়ে হলের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে স্ব স্ব রুমে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন। এতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- আবাসিক শিক্ষার্থীরা করোনা টিকা রেজিস্ট্রেশন কার্ড ছাড়া হলে প্রবেশ করতে পারবেন না। এ ছাড়া অনাবাসিক কোনো শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করতে পারবেন না।
সরেজমিন ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আবাসিক হল, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তূপ পড়ে গেছে। সেগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে উপলক্ষ্যে সব একাডেমিক ভবন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছিল। ফলে নতুন করে একাডেমিক ভবনগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না।
দেড় বছর পরে হল খোলায় অনুভূতি প্রকাশ করে তাপসী রাবেয়া হলের শিক্ষার্থী মুসফিকা তাসলিম বলেন, করোনার কারণে লম্বা একটা সময় ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে হয়েছে। এতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে। হলে থেকে ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার মজাই আলাদা।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা হল প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শর্মিষ্ঠা রায় জানান, শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে হল প্রশাসন প্রায় প্রস্তুত। শিক্ষার্থীদের জন্য হলে সংস্কার কাজ শতভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য-সুরক্ষাও নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষ করে ওয়াশরুম, পানি ও বিদ্যুতের লাইন এবং জরাজীর্ণ দেওয়ালগুলো সংস্কার করা হয়েছে।
আইসিটি সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. বাবুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের ১০ মে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনতে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে প্রায় ১৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী জমা দেয়। সর্বশেষ গত ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে টিকা নিতে এসএমএস দেওয়া হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে রাবি ভিসি প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, যেসব শিক্ষার্থী জাতীয় পরিচয়পত্রের সমস্যার কারণে এখনো করোনাটিকার আওতায় আসতে পারেননি, তারা জন্মসনদ দিয়ে টিকা নিবন্ধন করতে পারবেন। যারা নিবন্ধন করেছেন কিন্তু টিকা পাননি বা নেননি ক্যাম্পাস খোলার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের টিকা দেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে অস্থায়ী টিকা বুথ স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। আরও বলেন, ১৭ অক্টোবর হল খোলা ও ২০ অক্টোবর সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা রাখছি, বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ না হলে নির্দিষ্ট দিনে ক্যাম্পাস খোলা হবে।