জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এবারের এইচএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি সমমান পর্যায়ের প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এসএসসি (ভোকেশনাল) পাস করে জেনারেল কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাও তাদের ফল মূল্যায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। রোববার (১১ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এইচএসসি সমমানের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (বিএম) কলেজ থেকে চলতি বছর প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। আর এইচএসসি-ভোকেশনালে প্রায় আট হাজার ও ডিপ্লোমা ইন কমার্সে ছিল প্রায় এক হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অষ্টম পর্বে শুধু মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় সাত মাস ধরে অপেক্ষা করছে প্রায় ৪৮ হাজার শিক্ষার্থী। ফলে কারিগরিতে এইচএসসি সমমানের পরীক্ষার্থী প্রায় এক লাখ ৭২ হাজার শিক্ষার্থী তাদের মূল্যায়ন নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. মোরাদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ কলেজের চেয়ে ভিন্ন। বিএম প্রথম বর্ষের প্রকাশিত ফল রয়েছে। আবার এইচএসসি-ভোকেশনালে অনেকের জেএসসির সার্টিফিকেট নেই। তাই তাদের মূল্যায়নের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে আমরা কাজ করছি। একাধিক প্রস্তাব আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সেখান থেকে যেটি চূড়ান্ত করা হবে সে অনুসারেই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।’
জানা যায়, এইচএসসি (বিএম) দুই বছরের কোর্স। এখানে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে কারিগরি বোর্ড কর্তৃক আলাদা মূল্যায়ন করা হয়। দুই বর্ষের ফল গড় করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে কারিগরি বোর্ড। বিএমের প্রথম বর্ষের ফল বোর্ড গত বছরই প্রকাশ করেছে; কিন্তু করোনার কারণে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা আটকে আছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছে, প্রথম বর্ষের ফল মূল্যায়ন না করে জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে রেজাল্ট দেওয়া হলে তা ঠিক হবে না। কারণ তাদের প্রথম বর্ষে বোর্ড কর্তৃক মূল্যায়ন হয়েছে। তাই প্রথম বর্ষের ফলের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে হবে। প্রয়োজনে এসএসসি থেকে সামান্য অংশ মূল্যায়নের আওতায় আসতে পারে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কারিগরিতে শিক্ষার্থী টানতে বয়সের বাধা না থাকাসহ নানা ছাড় দেয় সরকার। জেএসসির সার্টিফিকেট না থাকলেও শিক্ষার্থীরা এসএসসি ভোকেশনালে ভর্তি হতে পারে। ফলে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষার্থীদের অর্ধেকেরই জেএসসি সার্টিফিকেট নেই। এসএসসি ভোকেশনাল পাসের পর সাধারণ কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদেরও জেএসসির সার্টিফিকেট নেই। ফলে এসব শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের জন্য এসএসসির সার্টিফিকেট ছাড়া অন্য কিছু হাতে নেই। কিন্তু শুধু এসএসসির সার্টিফিকেট দিয়ে এইচএসসির মূল্যায়ন যুক্তিযুক্ত হবে না।
এইচএসসি সমমানের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং চার বছরের কোর্স, যা আটটি সেমিস্টারে বিভক্ত। সব সেমিস্টারের ফল সমন্বয় করে চূড়ান্ত রেজাল্ট দেওয়া হয়। শুধু মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় অষ্টম সেমিস্টারের প্রায় ৪৮ হাজার শিক্ষার্থী সাত মাস ধরে আটকে আছে।
রাজধানীর মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. সলিম উল্লাহ সেলিম জানালেন আরেক জটিলতার কথা। তিনি বলেন, ‘কারিগরি এইচএসসি সমমানের পরীক্ষার্থীদের এখনো প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি। আমার জানা মতে, কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা ফরম পূরণের পর দেশের বাইরে চলে গেছে। দু-চারজন শিক্ষার্থী নানা কারণে মৃত্যুবরণও করতে পারে। এখন সবাইকে পাস করিয়ে দিলে মৃত বা বিদেশে থাকা শিক্ষার্থীও পাস করে যাবে। তাই ফল ঘোষণার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রবেশপত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থান যাচাই করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’