প্রচারণার শেষ দিনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উঠান বৈঠকে ডেকে প্রায় তিন হাজার লোকের ভূরিভোজ করিয়েছেন আরিফুজ্জামান মুন্না। তিনি বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। এ জন্য তিনি চরআইচা-৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহার করেছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘিত হলেও তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
গতকাল সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয় মাঠের চারদিক ও ওপরে সামিয়ানা দিয়ে মোড়ানো। এর মধ্যে ৫০০-৬০০ চেয়ার বিছানো রয়েছে। মাঠের এক কোনায় চলে রান্না ও খিচুড়ির প্যাকেট তৈরি। এতে বেকায়দায় পড়ে ওই দুটি বিদ্যালয়ের প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী।
চরআইচা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, গতকাল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল। সকাল ১০টায় পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী তারা বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করে। বিদ্যালয়ে প্রবেশের আগেই তারা দেখতে পায় মাঠ নৌকা প্রতীকের জনসভার জন্য গোছানো হয়েছে। মাঠের কোণে বসে খাবারের আয়োজন চলছে। পুরো মাঠে চেয়ার বসানো রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, কর্তৃপক্ষ মাঠে জনসভা করার অনুমতি দেওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছে।
চরআইচা-৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী আসমা আক্তার বলে, ‘আমরা স্কুলের মাঠে খেলাধুলা করতে পারছি না।’
বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘দুপুরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর উঠান বৈঠকের জন্য মাঠ ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়। আমরা ভেবেছিলাম কিছু লোক উঠান বৈঠকে সমবেত হবে। তবে উঠান বৈঠকের নামে এ রকম জনসভা হবে আমরা সেটা বুঝলে অনুমতি দিতাম না।’
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিদ্যালয় খোলা থাকার সময়ে মাঠে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ করা আইনত বৈধ নয়।’
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরিফুজ্জামান মুন্না বলেন, ‘উঠান বৈঠক শুরু হওয়ার কথা বিকেল ৩টায়। যে সময়ে স্কুলে কোনো শিক্ষার্থী থাকে না। তাই শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’ ভূরিভোজের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘কর্মী ও সাধারণ মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে আসবেন। তাই তাঁদের জন্য সামান্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
আনারস প্রতীকের প্রার্থী রুবেল হোসেন মামুন তালুকদার বলেন, ‘দুটি স্কুলের মাঠ দখল করে উঠান বৈঠকের নামে জনসভা করেছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন তো বটেই, একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। বিষয়টি আমি রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমরা মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’