দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে রূপ নেওয়ায় বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলে ভ্যাপসা গরম ও মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করছে। দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির প্রায় ২৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সংকেত প্রচারের সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলাগুলোতে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে সভা হয়েছে। আজ রোববার সকালে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।
বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি রোববার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর অশান্ত রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে নিষেধ করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি গতিপথ আপাতত বাংলাদেশের সাতক্ষীরা উপকূলের দিকে বলেই মনে হচ্ছে। তবে এটি যেকোনো মুহূর্তে গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। যেহেতু এটি এখনো অনেক দূরে অবস্থান করছে, তাই এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না ঘূর্ণিঝড়টি কোথায়, কবে, কখন আঘাত হানবে। অশনি মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসন এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, বিভাগের ৬ জেলায় ৪ হাজার ৯১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখার প্রাথমিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ১ হাজার ৭১টি, পটুয়াখালীতে ৯২৫টি, ভোলায় ১ হাজার ১০৪টি, পিরোজপুরে ৭১২টি, বরগুনায় ৬২৯টি ও ঝালকাঠিতে ৪৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ২০ লাখ মানুষের পাশাপাশি কয়েক লাখ গবাদিপশুও রাখা যাবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৫ মে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড়পূর্ব প্রস্তুতি সভা করে নির্দেশনা দেওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বরিশাল ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপপরিচালক শাহাবুদ্দিন মিঞা রোববার দুপুরে বলেন, ‘আজ ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে। মূলত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী সংকেত ৪ নম্বরে ওঠার পরই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ৪ নম্বর সংকেত জারি না হওয়া পর্যন্ত মাইকে ও পতাকা টাঙিয়ে সংকেত প্রচার করা যায় না। সে লক্ষ্যে আমরা প্রাথমিক সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত করে রাখার প্রাথমিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগের প্রায় ২৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে আমরা সভা করে দুর্যোগ মোকাবিলার যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’