সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণ না করার সবার সামনে ‘বিষপানের চেষ্টা’ করেছেন এক শিক্ষার্থী। রোববার (২৪ অক্টোবর) দুপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়া ওই শিক্ষিকা স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলনে এ ঘটনা ঘটেছে। ‘বিষপানের চেষ্টা’ করা শিক্ষার্থী শামীম হোসেনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
রোববার শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি চলছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শামীম হোসেন শনিবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণ না করার বিষয়ে রোববার বেলা ১২টার মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ না নিলে তিনি অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনেই আত্মহত্যা করবেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, রোববার দুপুরে অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে অনশনস্থলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে হ্যান্ড মাইকে কথা বলতে বলতেই বিষপানের চেষ্টা করেন শামীম। তার সহপাঠীরা বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানায় শামীম আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’
১৬ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল জানান, তিনিসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক ঘটনার সময় কাছাকাছিই ছিলেন। তিনি বলেন, আমরাই না শুধু, উপস্থিত যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছিল, ওরাও খুব আটকে ধরে… বোধহয় ওর সাথেই ছিল জিনিসটা। আমরা ভেবেছিলাম, ও যদি কিছু আনতে যায়, আমরা আটকাব। কিন্তু সম্ভবত ওর পকেটে বা কোথাও ছিল।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, শামীম ঘোষণা দিয়ে রাখায় আগেই অ্যাম্বুলেস এনে রাখা হয়েছিল। সেই অ্যাম্বুলেন্সে করেই তাকে পোতাদিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্যা কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। শামীমকে হাসপাতালে নেওয়ার পর ‘ওয়াশ’ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ওই ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ পাবনা নগরবাড়ি মহাসড়কের বিসিক মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের অবরোধের কারণে দুই দিকে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। গোলযোগ এড়াতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেখানে। ঘণ্টাখানেক পর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের ১৬ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে। এর পরদিন নাজমুল হাসান তুহিন নামে এক ছাত্র ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তাল ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করেন। ওই দিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা বাতেন।
ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে সিন্ডিকেট সভা শেষে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতেই থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা।
গত ২২ অক্টোবর তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় শনিবার থেকে শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলন শুরু করে।