ময়মনসিংহের ত্রিশালের সরকারি নজরুল একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. মেজবাহ উদ্দিন অনৈতিক প্রস্তাব ও অশালীন কথাবার্তা বলায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক ছাত্রী। ওই ঘটনায় মামলা হলে গ্রেফতার হন অভিযুক্ত শিক্ষক। গ্রেফতার হওয়ার পর তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় আরেকজনকে। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক পদে মেজবাহ উদ্দিনকে আবার বহালের একটি আদেশ এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি তিনি পুরোপুরি গোপন করেছেন। পরে ওই আদেশের বিষয়ে অধিদপ্তরে পাল্টা চিঠি পাঠালে দুই পক্ষকে আগামী রোববার গণশুনানিতে ডাকা হয়েছে।
ওই ছাত্রী সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য গেলে প্রধান শিক্ষক মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। প্রধান শিক্ষকের আচরণে ছাত্রীটি বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর ওই ছাত্রীর বোন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে গ্রেফতার হয়ে হাজতে যান মেজবাহ উদ্দিন। পুলিশ তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্রও দেয়। প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার হওয়ায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিনিয়র শিক্ষক মো. আতিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। তিনি অবসরে যাওয়ায় বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন একেএম কামরুল ইসলাম। পাঁচ মাস আগে মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে করা ওই মামলাটি নিম্ন আদালতে খারিজ হয়ে যায়। এরপর বাদী উচ্চ আদালতে আপিল করেন। মামলাটির বাদী বলেন, কী কারণে মামলাটি খারিজ হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারিনি। ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করেছি।
গত ২ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মো. মেজবাহ উদ্দিনকে বহালের একটি অফিস আদেশ জারি হয়। মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের সই করা আদেশের একটি জায়গায় অভিযুক্ত 'শিক্ষক পুলিশ হেফাজতে যাননি' কথাটি উল্লেখ আছে। মেজবাহ উদ্দিনকে বহালের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ ডিসেম্বর ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক একেএম কামরুল হাসান মামলাবিষয়ক বিভিন্ন নথি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) মো. আমিনুল ইসলাম টুকুর সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, মেজবাহ উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দেওয়া মামলার তথ্যে অসঙ্গতি থাকায় প্রয়োজনীয় তথ্যসহ আগামী রোববার গণশুনানিতে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
শুধু এই ঘটনাটিই নয়, মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও ছিল। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরশাদ উদ্দিনের সই করা এক তদন্ত প্রতিবেদনে এর সত্যতা মেলে। বিপুল আর্থিক অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থারও সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।
এ ব্যাপারে মেজবাহ উদ্দিন বলেন, 'তথ্য গোপনের সুযোগ নেই। মামলার কারণে তিন দিন হাজতে ছিলাম। কর্তৃপক্ষ তদন্ত শেষে তাকে বহালের আদেশ দিয়েছে। এখানে আমার কোনো হাত নেই।'
ময়মনসিংহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলায় কোনো শিক্ষক গ্রেফতার হলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত হন। এ জন্য কোনো চিঠি জারি করতে হয় না। অধিদপ্তর থেকে নজরুল একাডেমির প্রধান শিক্ষককে বহালের একটি চিঠি পাওয়া গেছে। স্কুল থেকে আরেকটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে শুনানিতে ডাকা হয়েছে। আপাতত ওই শিক্ষকের বহাল আদেশ গ্রহণ করা হচ্ছে না।