জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজ গড়তে হবে - দৈনিকশিক্ষা

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজ গড়তে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঝালকাঠি জেলায় কর্মরত দুইজন সিনিয়র সহকারী জজ জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদ ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর উগ্র জঙ্গিবাদী বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন। মূলত তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর অসংখ্য বোমা হামলায় তখন দেশজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও অনেকে। তাঁদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা যে বার্তা পেয়েছি, তা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সোমবার (১৪ নভেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায় আমরা যে বাংলাদেশ দেখতে চাই, সেটি হবে আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা এই দেশের বিরুদ্ধে নানামুখী চক্রান্ত এখনও অব্যাহত। এসব চক্রান্ত রোধ করতে হলে আমাদের উদ্যোগী ও উদ্যমী তরুণ সমাজকে একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ রেখে যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে। কেমন হবে সেই স্বপ্নের দেশ? আমরা যখন পথ ধরে হাঁটব, দেখব প্রত্যেক মানুষ একে অপরের কল্যাণকামী। তারা পরস্পর অভিবাদন জানাচ্ছে। সবার মুখে হাসি। পরস্পর প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ নেই, ক্ষোভ নেই। কেউ কারও নিন্দাবাদ করছে না। রাজনীতিবিদরা ক্ষুদ্র স্বার্থে বিতর্কের বদলে পরিকল্পনা করছে দুঃখী মানুষের দুঃখ দূর করার উপায় নিয়ে।

সেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের নামে ধর্মবিদ্বেষ থাকবে না। বর্ণ বা সম্প্রদায় বা দল মানুষের মধ্যে বিভেদের প্রাচীর হয়ে দাঁড়াবে না। সেখানে সবাই বিশ্বাস করবে- আমরা একই জাতি। তাদের কেউ হবে কৃষক, কেউ শ্রমিক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকরিজীবী। একটি ক্রিকেট টিমে একেক খেলোয়াড় একেক ভূমিকা পালন করলেও সবার লক্ষ্য থাকে টিমকে জেতানো। তেমনি সমাজের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষদের কাজ ভিন্ন হলেও জীবনের লক্ষ্য হবে অভিন্ন- একটি বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণ।

সেই বাংলাদেশ হবে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত। তরুণরা লক্ষ্যহীন বা উদ্দেশ্যহীন কাজ করবে না। তারা উত্তম আদর্শ, উন্নত চিন্তা দ্বারা পরিচালিত হবে। পরোপকার করাই হবে তাদের ব্রত। উন্মাদনায় বুঁদ হয়ে মূল্যবান তারুণ্য ও যৌবনের তারা অপচয় করবে না। সেই বাংলাদেশের তরুণদের একদিকে থাকবে বিশ্বাস, আরেক দিকে থাকবে যুক্তি ও বিবেক। ধর্মের জিগির তুলে কেউ তাদের বিশ্বাসকে ভুল পথে প্রবাহিত করে স্বার্থোদ্ধারে দেশ-জাতির জন্য ক্ষতিকর কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। ধর্ম হবে এক আলোকবর্তিকা। সমাজে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানুষকে উজ্জীবিত করে তোলার মূলমন্ত্র। সবার ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবন হবে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সংস্কার ও আদর্শ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। সেখানে কেউ কারও বিশ্বাসের প্রতি অবজ্ঞা হেতু কুৎসিত আক্রমণ করবে না। 

সেই বাংলাদেশের তরুণ সমাজ হবে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রভৃতি অঙ্গন হবে অবাধ-উন্মুক্ত; যা কিছু মানুষকে অন্যায় ও অসভ্যতার দিকে ধাবিত করে, তা থেকে মুক্ত হবে আমাদের শিল্প ও সংস্কৃতির অঙ্গন। প্রত্যেক শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিজন হবেন জাতির প্রতি দায়বদ্ধ। তাঁদের সৃষ্টিশীল কর্ম এগিয়ে নেবে গোটা জাতিকে।

সেই বাংলাদেশের প্রতিটি নদীতে বয়ে চলবে বিশুদ্ধ পানির ধারা। সেই জলধারা এতটাই নির্মল, তাতে স্নান করলে শরীর ও মনের ক্লেদ দুই-ই বিদূরিত হবে। তার গতিপথে কেউ বাঁধ দেবে না। তার আশীর্বাদে উর্বর হবে এ দেশের মাটি। যেখানে স্বাস্থ্যবান কিষান-কিষানিরা ফলাবে সোনার ফসল। তাদের মুখে থাকবে মুক্তঝরা হাসি। প্রকৃতি ও পরিবেশের বিন্দুমাত্র ক্ষতির কারণ হবে- এমন কোনো রাসায়নিক কেউ ব্যবহার করবে না। আমাদের মাটি, পানি, বায়ু হবে সম্পূর্ণ দূষণহীন। নদী, পুকুর, খাল-বিল হবে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছে ভরপুর। বন ও বাগান হবে গাছগাছালিতে পূর্ণ।

সেই বাংলাদেশে নতুন এক শিক্ষাব্যবস্থা প্রণীত হবে। যেখানে প্রত্যেক মানুষ ধর্মের সঠিক শিক্ষা ও নৈতিকতার দীক্ষায় দীক্ষিত হবে। এখান থেকে যেমন কোনো ধর্মান্ধের জন্ম হবে না; তেমনি দেখা যাবে না কোনো ধর্মবিদ্বেষীর। তারা হবে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ; দেশ ও জাতির সম্পদের রক্ষক, দেশপ্রেমিক, সৎ ও আদর্শ নাগরিক। সেই বাংলাদেশে শুধু শাস্তির ভয়ে নয়, বরং আত্মার তাগিদেই মানুষ যাবতীয় অপরাধ থেকে নিবৃত্ত থাকবে। প্রতিষ্ঠিত হবে জীবন ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা। এখানে নারীর প্রতি অসম্মান হবে না। স্কুলফেরত ছোট শিশুটি সড়ক কিংবা ফুটপাত ধরে নিশ্চিন্তে বাড়ির পথে হেঁটে যাবে।

উগ্র জঙ্গিবাদী ও তাদের সমর্থকরা হিংসা ও নিপীড়নের মাধ্যমে যে সমাজ গড়ে তুলতে চায়, সেটি অব্যাহত থাকলে আমাদের মানবিক বোধ বিপন্ন হতে বাধ্য। তার বিপরীতে একটি শক্তিশালী প্রগতিশীল, সুকুমারবৃত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চিন্তা-চর্চার প্রচার ও প্রসার ঘটিয়ে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত করতে হবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে। এটি না পারলে আমরা কেউ নিরাপদ থাকব না। আমাদের হেরে গেলে চলবে না। জগন্নাথ ও সোহেলের মর্মান্তিক মৃত্যু- এ বার্তাই দিয়ে গেছে নতুন প্রজন্মের প্রতি।

লেখক : মহসিনুল হক, জেলা ও দায়রা জজ, ভোলা

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040318965911865