ট্রেন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজন সতর্কতা - দৈনিকশিক্ষা

ট্রেন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজন সতর্কতা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ |

রেল দুর্ঘটনা এক-তৃতীয়াংশে নেমে এলেও বড় দুর্ঘটনা থামানো যাচ্ছে না। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে রেললাইনের ত্রুটি বা রেলক্রসিংয়ে গাড়িচালকদের গাফিলতির কারণে। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবে বড় দুর্ঘটনা ঘটছে রেলকর্মীদের গাফিলতিতে। গত ২৩ অক্টোবর বিকালে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় কিশেরগঞ্জের জগন্নাথপুর রেল ক্রসিং এলাকায় আন্তনগর এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেন ও একটি মালবাহী ট্রেনের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি যাত্রীসহ উল্টে যায়। মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল না মানায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। এ বিষয়ে রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম জানান, মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে।

সারা দুনিয়াতেই রেল নিরাপদ যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের রেলপথ সড়ক বা নৌপথের তুলনায় নিরাপদ হলেও রেলপথে জীবন ও সম্পদ হানিকর দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে থেকে ২৩ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত রেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৩৪৫ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরো ১ হাজার ৩০২ জন। এ সময় রেল দুর্ঘটনা ঘটে ১ হাজার ১১৬টি। রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেল দুর্ঘটনার একটা বড় অংশই লাইনচ্যুত। এতে প্রাণহানি কম। বেশির ভাগ প্রাণহানি হয় এক ট্রেনের সঙ্গে অন্য ট্রেনের সংঘর্ষ কিংবা রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায়। রেলপথে দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯’ অনুসারে ৩৯৩টি রেল দুর্ঘটনায় ৮৯ নারী ও ৪৬ শিশুসহ ৪২১ জন নিহত এবং চার নারী ও ৩৩ শিশুসহ ৩৬৬ জন আহত হয়েছের। আর বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেব অনুসারে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে রেলপথে ৪৮২টি দুর্ঘটনায় ৪৬৯ জন নিহত ও ৭০৬ জন আহত হয়েছেন। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে রেল পথে ২৭০টি দুর্ঘটনায় ২৫৪ জন নিহত ও ৪২ জন আহত হন। বাংলাদেশে রেল দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে আর সবেচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে। ২০০৮-৯ থেকে ২০১৭-১৮ এই দশ বছরে মোট ২ হাজার ৪২৮টি দুর্ঘটনা ঘটে যার মধ্যে লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনা ২ হাজার ১৫৫টি যা মোট দুর্ঘটনার ৮৯ শতাংশ।

আর ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনার পেছনে যেসব কারণ দায়ী তার মধ্যে রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ রেলপথ, ইঞ্জিন বা বগির যান্ত্রিক সমস্যা, সিগনাল ব্যবস্থার সমস্যা, বিভিন্ন ধরনের মানবীয় ভুল ও নিয়ম অমান্য করা ইত্যাদি। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় সর্বোচ্চ। ক্ষমতাসীন সরকার ১৪ বছরে রেলের উন্নয়নে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। উচ্চব্যয়ে রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নিতে যতোটা উৎসাহ দেখা যায়, ততোটাই নিরুৎসাহ বিদ্যমান রেলপথ ও রেলসেতু সংস্কারে। ফলে সারা দেশে মানসম্পন্ন রেললাইন রয়েছে ৭৩৯ কিলোমিটার, যা মোট রেললাইনের মাত্র ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। রেলসেতু ঝুঁকিপূর্ণ ৪০২টি। লাইনে পাথরস্বল্পতা, রেলক্লিপ ও নাট-বল্টু চুরি হয়ে যাওয়ায় নড়বড়ে ট্র্যাক মেরামতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও যন্ত্রাংশের অভাবে রেললাইনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথের পাশাপাশি ২৭৮ ইঞ্জিনের মধ্যে ১৯৫টির এবং ১ হাজার ৬৫৬টি কোচের মধ্যে ৯০০টির আয়ু শেষ। আবার এগুলোর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজও সঠিকভাবে করা হয় না। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রেলের পূর্বাঞ্চলে ২০ শতাংশ বগি বার্ষিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মেরামত ছাড়াই চলছে। লোকবলের অভাব এবং বগির স্বল্পতার কারণে এই কাজ হচ্ছে না। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলে মিটারগেজের ১২ শতাংশ এবং ব্রডগেজের ৮ শতাংশ বগি সময়মতো মেরামত হয় না। আবার একটি যাত্রীবাহী ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছালে এর ইঞ্জিন ও বগি ৪৫ মিনিট ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নিয়ম। এ সময় বগি ধোয়া-মোছা, কলকব্জা পরীক্ষা করার কথা। কিন্তু এই কাজে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না। এ ছাড়া তিন মাস পরপর মেরামত কারখানায় নিয়ে বগির দিনব্যাপী পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিয়ম আছে। এক বছর পর কারখানায় নিয়ে বড় ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মেরামতের কথা। এসবের জন্য বরাদ্দও আছে। কিন্তু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজটাই ঠিকভাবে হয় না।

ট্রেনের সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, যদি চালক সংকেত অমান্য করে চলে আসেন, সে ক্ষেত্রে হেমন্তের বিকেলে সবকিছু দূর থেকেই পরিষ্কার দেখার কথা। অর্থাৎ একই লাইনে অন্য একটি ট্রেন আছে দেখে গতি কমিয়ে থামানো যেতো। সেটা কেনো করা হয়নি, সেটাও একটি প্রশ্ন। দুর্ঘটনার সময়ের দুটি ভিডিও পেয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এতে দেখা যায়, সামনে ট্রেন দেখে জোরে হর্ন বাজাচ্ছিলো মালবাহী ট্রেনটি। তখনো এর গতি ছিলো বেশি। কিন্তু পরে একেবারে যাত্রীবাহী ট্রেনে ধাক্কা দেয়ার আগে কিছুটা গতি কমানো হয়।

দুর্ঘটনার পর ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন লাগোয়া জগন্নাথপুর এলাকার লোকজন প্রথমে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। উদ্ধার কাজে অংশ নেন স্টেশনের হকাররাও। মূলত তারা কোচের ভেতর থেকে আহত ব্যক্তিদের বের করে এনে হাসপাতালে পাঠান। পরে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা এসে কোচের ভেতর থাকা মরদেহ বের করে আনেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকাজে যুক্ত জগন্নাথপুর এলাকাবাসী বলেন, বিকট শব্দ আর মানুষের চিৎকার কানে আসার পর ধারণা করছিলাম হয়তো ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসে দেখা গেলো ভয়াবহ অবস্থা। ভেতর থেকে অসংখ্য মানুষের চিৎকারের শব্দ আসছে। বাইরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে আছেন অনেকে। সবার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।

এখন প্রশ্ন হলো এক ট্রেনের সঙ্গে আরেক ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা তো বাংলাদেশে প্রথম নয়। ১৭ এপ্রিল ২০২৩ রোববার সন্ধ্যায় কুমিল্লার হাসানপুর স্টেশনে একটি মালবাহী ট্রেনকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। তাতে ট্রেনের কয়েকটি বগি উল্টে যায়। আহত হন অন্তত পঞ্চাশ যাত্রী। দেশের দ্রুতগামী ট্রেনের একটি সোনার বাংলা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে আসছিলো। পথে কুমিল্লা শহরের আগে নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেল স্টেশন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, ‘ভুল’ সিগন্যালের কারণে দ্রুতগতির সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি মেইন লাইন ছেড়ে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে। এ সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনটিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে সেটির ওপরে গিয়ে পড়ে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর নরসিন্দীতে গোধুলি ও চট্টলা–এই দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিলো। কারণ, চট্টলার চালক সিগনাল অমান্য করেছিলেন। রেলওয়ের তদন্ত রিপোর্টে তখন বলা হয়েছিলো চালক ভৈরব স্টেশানে চা পান করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় নাকি এই সংকেত অমান্য করার ঘটনাটি ঘটেছিল! ৫৯ চালক অজ্ঞান হোক, ঘুমিয়ে পড়ুক বা অবহেলা করুক, প্রশ্ন হলো একই ধরনের দুর্ঘটনা দ্বিতীয়বার কেনো ঘটবে? এনোদিনেও কেনো ট্রেন চালনার সময় চালকদের ওপর নজরদারি, স্টেশন ও ট্রেনের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা কিংবা স্বয়ংক্রিয় ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা চালু করা হলো না?

রেল দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে আর সবেচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে। রেলওয়ের হিসাব অনুসারে, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৮৬৮টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ১১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। লেভেল ক্রসিংয়ে ৯৬টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯৯ জন। তাদের প্রায় সবাই ক্রসিং পার হতে যাওয়া বাস, মাইক্রোবাস ও ছোট যানবাহনের আরোহী। রেলক্রসিং পারাপারের সময় যেসব পথচারী প্রাণ হারান, সেই হিসাব রেল কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে না। রেলওয়ের হিসাবে, সারা দেশে রেলক্রসিং আছে ২ হাজার ৫৭৪। এর মধ্যে অনুমোদিত রেলক্রসিং ১ হাজার ৪৬৮টি। অর্থাৎ ৪৩ শতাংশ ক্রসিং অবৈধ। অনুমোদিত বলতে, সংশ্লিষ্ট সংস্থা রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের সময় রেলের অনুমোদন নিয়েছে। ক্রসিংগুলোতে প্রতিবন্ধক ও অবকাঠামো তৈরি এবং কর্মী নিয়োগের পর ১০ বছরের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দেয়ার পরই অনুমতি পাওয়া যায়। ফলে অনুমোদিত ক্রসিং সুরক্ষিত রাখা রেলের দায়িত্ব। অথচ প্রতিবন্ধক, পাহারাদার এবং ট্রেন চলাচলের খবরাখবর জানা যায় এমন ব্যবস্থা আছে মাত্র ৫৬৪টি ক্রসিংয়ে। অর্থাৎ বৈধ বাকি ৯০৪টি ক্রসিংয়েও কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। এসব ক্রসিংয়ে সতর্কবার্তা–সংবলিত সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায় সারছে রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে যে দুর্ঘটনাগুলো সহজেই প্রতিরোধযোগ্য।

রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে থেকে রেলক্রসিংকে নিরাপদ করতে ১৯৬ কোটি টাকা খরচ করেছে রেলওয়ে। দুটি প্রকল্পের আওতায় রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ৭০২টি রেলক্রসিং উন্নয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় পাহারাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৫৩২ জন। রেলক্রসিং উন্নয়নের মধ্যে প্রতিবন্ধক বসানো ও পাহারাদারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এরপরও রেলক্রসিং নিরাপদ হয়নি।

রেললাইনের ওপর উড়ালপথ নির্মাণে এক যুগের বেশি সময় ধরে আলোচনা চলছে। সওজ অল্প কিছু মহাসড়কের উড়ালসড়ক নির্মাণ করেছে। অন্যগুলোতে উড়ালসড়ক নির্মাণ কে করবে, সেটাই ঠিক করতে পারছে না সংস্থাগুলো। ফলে অরক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। এর আগে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর নরসিংদীতে চট্টগ্রামগামী গোধূলীর সঙ্গে ঢাকাগামী চট্টলার মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক জহির মিয়াসহ ১৩ জন নিহত হন। চট্টলার চালক সংকেত অমান্যের কারণে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে রেলের পূর্বাঞ্চল গঠিত। এই অঞ্চলে যাত্রী বেশি পরিবহন হয়। পদ্মা নদীর পশ্চিম পারের জেলাগুলো নিয়ে রেলের পশ্চিমাঞ্চল গঠিত।

পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক কার্যালয়ের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ২০৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ১৬৫, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ১৩৮, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ১৬৭ এবং ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ১৪৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার হার কমে এলেও ২০১৩ ও ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে নাশকতার কারণে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। ওই সময় দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছিলো। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে এলে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে দুর্ঘটনা কমে আসে। ওই বছর ৮৮টি, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ৬৭টি, ২০১৭ খ্রিষ্টাবেদ ৭১ এবং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৭২টি দুর্ঘটনা নথিভুক্ত করে পূর্বাঞ্চল। আর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দুর্ঘটনা হয় ৫০টি। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাপরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ৮৮টি রেল দুর্ঘটনায় মারা যান ১৫ জন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ১৪৭ দুর্ঘটনায় মারা যান ১৯ জন। ২০১৬ ও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে দুর্ঘটনায় যতো প্রাণহানি ঘটেছে, তার বেশির ভাগই হয়েছে রেলক্রসিংয়ে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর গাড়িচালকদের অসতর্কতাকে দায়ী করেছে। দুই বছরে রেলক্রসিংয়ে ২৮টি মাঝারি আকারের দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২৫টি দুর্ঘটনার জন্যই যানবাহনচালকদের দায়ী করেছে রেলের তদন্ত কমিটি। কেবল একটি দুর্ঘটনার জন্য গেটম্যানকে দায়ী করা হয়েছে।

পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশে নিয়মিত ঘটতে থাকা বিভিন্ন দুর্ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা যায় এমন সব কাঠামোগত কারণে বারবার মর্মান্তিক সব দুর্ঘটনা ঘটে যার অধিকাংশ কারণই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানা থাকার কথা এবং সুনির্দিষ্ট কতোগুলো পদক্ষেপ নিলে সেইসব দুর্ঘটনার হার বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু নানা কারণে এই অতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো না নেয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিদ্যমান ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা চলমান থাকাই বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য লাভজনক। ফলে এসব গোষ্ঠির প্রভাবে কাঠামোগত সমস্যাগুলো সমাধানের পথে বাধা তৈরি হয়। আবার দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য যে বাড়তি বিনিয়োগ করতে হয় তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হলেও তাৎক্ষণিক লাভ লোকসান বিবেচনায় অনেকেই এই বিনিয়োগটা করতে চান না। আর এ কারণেই নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি এক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি দেখে দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের কোনো শাস্তি বা ক্ষতিপূরণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না, তাহলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিনিয়োগের কোনো তাগিদ সেই প্রতিষ্ঠানের থাকে না। অন্যদিকে দুর্ঘটনা ঘটলে যদি তার তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার পূর্বশর্ত ও অন্তরালের বিভিন্ন কাঠামোগত কারণ উন্মোচন করে তার জন্য সংশ্লিষ্টদের সকলকে শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের মুখোমুখি করা হয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সকল ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বনে বাধ্য হয়। 

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি 

 

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034120082855225