ঢাকাকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল পাকিবাহিনী - দৈনিকশিক্ষা

ঢাকাকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল পাকিবাহিনী

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পহেলা মার্চ ঢাকা স্টেডিয়ামে একটি ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল পাকিস্তান বনাম আন্তর্জাতিক একাদশের মধ্যে। তখন পাকিস্তান একাদশের পক্ষে একমাত্র বাঙালি ক্রিকেটার ছিলেন রকিবুল হাসান, যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন।

তার ভাষ্যমতে, স্টেডিয়ামে তখন ৪০ হাজারের মতো দর্শক ছিলো। তাদের অনেকই রেডিও নিয়েছিলেন সাথে। এর একটি বড় কারণ ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন উত্তাল। রেডিওর খবরের দিকে অনেকের মনোযোগ। খেলার মাঠে বসেই অনেকে শুনতে পান যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেছেন। সাথে সাথে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম।

‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে পুরো স্টেডিয়াম মুখরিত হয়ে ওঠে। খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ দর্শকরা তখন স্টেডিয়াম ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রেডিওতে ভাষণের মাধ্যমে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন। সাথে সাথে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অফিস-আদালত, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অনেকে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য রাস্তায় নেমে আসে।

সেদিন শেখ মুজিবুর হোটেল পূর্বানীতে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক করছিলেন।

রেডিওতে ঘোষণা শোনার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও নানা জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসলো। হোটেল পূর্বানীর চারপাশ তখন লোকে-লোকারণ্য। কারণ, অনেকই জানতো শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে বৈঠক করছেন।

মার্চ মাসের দুই তারিখে ঢাকায় এবং তিন তারিখে সারাদেশে হরতালের ডাক দেয়া হলো। এছাড়া মার্চ মাসের চার তারিখ থেকে ছয় তারিখ পর্যন্ত দেশজুড়ে স্বতঃ:স্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। মার্চ মাসের চার তারিখ থেকে ছয় তারিখ পর্যন্ত ঢাকায় প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত হরতাল চলতে থাকে।

এমন অবস্থায় দোসরা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন ছাত্র নেতারা।

পরিস্থিতি তখন আর পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। তিনি যা বলছিলেন, সেটাই ছিল শিরোধার্য।

মার্চ মাসের তিন ও চার তারিখ রাত আটটা থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। তখন কারফিউ অগ্রাহ্য করে মানুষ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে।

সাতই মার্চের আগে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। সে বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিলো, রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে বঙ্গবন্ধু কোন পথ অনুসরণ করবেন।

ওদিকে সাতই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণকে ঘিরে পাকিস্তান সরকারের মধ্যেও নানা চিন্তা ও উদ্বেগ কাজ করছিলো। তাদের ধারণা ছিলো, সেদিন শেখ মুজিবুর রহমান হয়তো স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বসতে পারেন।

শেখ মুজিব যাতে সে রকম কিছু না করেন, সেজন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনীর দিক থেকে নানা প্রচেষ্টা ছিলো।

তখন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক। মি. সালিক তার 'উইটনেস টু সারেন্ডার' বইতে সে সময়কার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন। তার বর্ণনা মতে, ৭ মার্চ যতই এগিয়ে আসতে থাকে, গুজব, ভয়, আতঙ্ক ও উদ্বেগ ততই জোরালো হতে থাকে। এটা ধারণা করা হচ্ছিল যে শেখ মুজিবুর রহমান একতরফাভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা দেবেন। শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেবার আগের দিন অর্থাৎ ৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। সে ভাষণ দেবার আগে মি. খান শেখ মুজিবুর রহমানকে টেলিফোন করেছিলেন।

তখন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ছিলেন তার জামাতা ও শেখ হাসিনার (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া।

সে সময়কার বিভিন্ন ঘটনা ড. মিয়া তার 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু স্মৃতি, কিছু কথা' বইতে তুলে ধরেছেন।

ওয়াজেদ মিয়া লিখেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান টেলিফোনে ইয়াহিয়া খানকে বলেন যে আন্দোলন চলার সময় যারা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন, সেটির জন্য আন্তরিক দুঃখ এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।

শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের টেলিফোন আলাপের বিষয়টি দেখা যায় সিদ্দিক সালিকের ভাষ্যেও।

সেখানে মি. সালিক লিখেছেন, শেখ মুজিবের সাথে টেলিফোনে আলাপের পর ইয়াহিয়া খান একটি টেলিপ্রিন্টার মেসেজ পাঠিয়েছিলেন শেখ মুজিবের জন্য।

সিদ্দিক সালিকের ভাষ্য মতে, সেই মেসেজে ইয়াহিয়া খান লিখেছিলেন, দয়া করে তাড়াহুড়া করে কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমি শীঘ্রই ঢাকা আসবো এবং আপনার সাথে বিস্তারিত আলাপ করবো। আমি আপনাকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যে জনগণের প্রতি আপনার যে প্রতিশ্রুতি এবং আকাঙ্ক্ষা সেটির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা দেখানো হবে।

এই বার্তাটি সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার ব্যক্তিগতভাবে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িতে গিয়ে তার কাছে হস্তান্তর করেছিলেন বলে সিদ্দিক সালিক উল্লেখ উল্লেখ করেন।

তিনি আরও লিখেছেন, ৭ মার্চ সকালে পাকিস্তানে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত জোসেফ সিম্পসন ফারল্যান্ড শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন। মার্চ মাসের শুরু থেকে পাকিস্তান সরকার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্যদের এনে ঢাকায় জড়ো করতে থাকে। সাতই মার্চের জনসভায় শেখ মুজিব যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তাহলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলে পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তারা বলেছিলেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৪তম ডিভিশনের জিওসি ছিলেন মেজর জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজা। ‘অ্যা স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি’ বইতে মি. রাজা লিখেছেন, ৬ মার্চ আওয়ামী লীগের দুই ব্যক্তি তার সাথে দেখা করতে এসেছিল।

সেই ব্যক্তিদের তিনি বলেছিলেন, ক্যান্টনমেন্টে সৈন্যরা অস্ত্র ও ট্যাঙ্ক নিয়ে তৈরি আছে। রেসকোর্স ময়দান থেকে তিনি সরাসরি শেখ মুজিবের ভাষণ শোনার ব্যবস্থাও রেখেছেন। শেখ মুজিব যদি পাকিস্তানের অখণ্ডতাকে আক্রমণ করে এবং একতরফাভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় তাহলে সৈন্যরা সাথে সাথে জনসভার দিকে অগ্রসর হবে এবং সেখানে হামলা চালাবে। প্রয়োজনে ঢাকা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হবে। সূত্র: বিবিসি 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006864070892334