ঢাবিতে হল কমিটি ঘিরে ছাত্রদলে অস্থিরতা - দৈনিকশিক্ষা

ঢাবিতে হল কমিটি ঘিরে ছাত্রদলে অস্থিরতা

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি |

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সরব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও পুরোদমেই চলছে ছাত্ররাজনীতি। এর মধ্যে এগিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি সরাসরি সদস্য ফরমও বিতরণ করেছে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এবার হল শাখা কমিটি নিয়েও তোড়জোড় দেখা গেছে। 

সংগঠনটির একটি সূত্র বলছে, চলতি মাসের যেকোনো সময় কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে এ নিয়ে বেশ অস্থিরতাও দেখা দিয়েছে ঢাবি ছাত্রদলে।

সর্বশেষ ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ১২টি হলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর একাধিকবার নতুন কমিটি ঘোষণার গুঞ্জন উঠলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কমিটি ঘোষণার জন্য পুরোদমে কাজ করছেন বর্তমান নেতারা। এরই মধ্যে কর্মীদের মধ্যে সদস্য ফরম বিতরণ এবং তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে।

সংগঠন সূত্রে জানা যায়, ছাত্ররাজনীতিতে সংস্কারের অংশ হিসেবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দিয়ে কমিটি ঘোষণার আলোচনা চলছে। বিএনপির হাইকমান্ডও এতে সম্মতি দিয়েছে। তবে নেতাকর্মীদের একটি অংশের দাবি, একটিমাত্র সেশনকে (২০১৮-১৯) কেন্দ্রকে হল কমিটির ক্রাইটেরিয়া ধরা হয়েছে। তার আগে ২০১৪-১৫ সেশন থেকে ২০১৭-১৮ সেশন পর্যন্ত নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। যারা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন, সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত এবং আওয়ামী শাসনামলে বারবার নির্যাতিত হয়েছেন। তাদের দাবি, সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হলেও এই চার সেশনের নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হোক। পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তার পরের সেশনগুলো মূল্যায়ন করা হোক। এ দাবিতে ইতিমধ্যে ছাত্রদলের হাইকমান্ডকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া বিএনপির নেতৃস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে তাদের অভিযোগ দিচ্ছেন।

নেতাকর্মীদের আরেকটি অংশ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমিটি ঘোষণার পক্ষে হলেও শুধু একটি সেশনকে প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষে নন তারা। তাদের দাবি, যদি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়, তাহলে ২০১৭-১৮ সেশনের যাদের ছাত্রত্ব এখনো আছে, তাদের যেন মূল্যায়ন করা হয়। এ ক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের সঙ্গে কোনোরূপ আলাপ-আলোচনা করছেন না, যোগাযোগ রাখছেন না।

২০১৭-১৮ সেশনের হলের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের হার্ট বলা হয় ১৪-১৫ থেকে ১৭-১৮ সেশন পর্যন্ত নেতাকর্মীদের। বিগত সময়ে হামলা-মামলার শিকার হওয়া, যেকোনো কর্মসূচি পালন করাসহ বিগত সব আন্দোলনেও এই সেশনগুলোর অবদান অনেক বেশি কিন্তু হল কমিটিতে তাদের কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মাইনাস করে ১৮-১৯ সেশনকে ক্রাইটেরিয়া ধরা হয়েছে। অথচ অন্যান্য ব্যাচেরও অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং হলেও অবস্থান করছে। যার ফলে এই সেশনগুলোর ছাত্রদল নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

২০১৫-১৬ সেশনের আরেক নেতা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল বলতে যে চারটি সেশনকে বোঝানো হয় এবং যাদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকে হাসিনাকে সারা দেশে স্বৈরাচার শব্দে প্রতিষ্ঠিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে হাসিনা পতন আন্দোলনে রূপদান করা হলো, সেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ও পরামর্শ ছাড়া সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হল কমিটি করা হচ্ছে, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের জন্য অশনিসংকেত। রাজনীতির উত্থান রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। কোনো অরাজনৈতিক ব্যক্তি রাজনীতি উত্থান করতে পারেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল বলতে যাদের বোঝায়, তারা আজ অসহায়ত্ব পরিস্থিতি পার করছেন।

তবে ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, কমিটির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এখনো পর্যন্ত কোনো ক্রাইটেরিয়া ধরা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম ভূঁইয়া ইমন বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের সদস্য ফরম বিতরণ এবং যাচাই-বাছাই চলছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসে কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি শাখা ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনের। নেতাকর্মীরাও তাদের খোঁজ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবও এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

তবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা আছেন, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। কোন সেশন থাকবে বা থাকবে না সেটা নির্দিষ্ট করে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেটি শিক্ষার্থীদের জন্য অধিক কল্যাণকর, তেমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে। কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো অস্থিরতা চলছে না।’ তিনি বলেন, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটি শিক্ষার্থীদের ভালো বিবেচনা করেই নেওয়া হবে। যারা ছাত্ররাজনীতি বেশি সময় ধরে করেছেন, তাদের নেতা হওয়ার বিষয়ে সংগঠনের ওপর এক ধরনের অধিকারও থাকে। আবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্ররাজনীতির পরিবর্তনের একটা আবেদনও আছে, সেটিও মনে রাখতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে একটা ভালো সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশাবাদী।

আলোচনায় এগিয়ে যারা : হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সাধারণ আরিফুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক আবুজার গিফারী ইফাত ও প্রচার সম্পাদক মনসুর রাফি। জসীমউদ্দীন হলের ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক শেখ তানভীর বারী হামিম, দপ্তর সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত আলিফ ও সিফাত ইবনে আমিন। বিজয় একাত্তর হলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আবু ছৈয়দ সাঈদ, প্রচার সম্পাদক তানভীর আল হাদী মায়েদ ও দপ্তর সম্পাদক সাকিব বিশ্বাস। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের যুগ্ম সম্পাদক উবাইদুল্লাহ রিদওয়ান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রিজভী আলম ও দপ্তর সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের যুগ্ম সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমাম হাসান অনিক ও দপ্তর সম্পাদক সাইফ আল ইসলাম দিপ আলোচনায় আছেন।

এ ছাড়া স্যার এএফ রহমান হলের যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক নাহিদ হাসান ও প্রচার সম্পাদক ফেরদৌস সিদ্দিক সায়মন। সূর্য সেন হলের যুগ্ম সম্পাদক আবিদুর রহমান মিশু ও প্রচার সম্পাদক মনোয়ার হোসেন প্রান্ত। জগন্নাথ হলের সহ-প্রচার সম্পাদক হৃষিকেশ কুন্ডু ও প্রসেনজিৎ বিশ্বাস। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইমন মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, দপ্তর সম্পাদক রেদোয়ান মাহাদী জয় ও প্রচার সম্পাদক সৈয়দ ইয়ানাথ ইসলাম এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান ও সাইফ উল্লাহ এগিয়ে আছেন।

ইএফটিতে এমপিও প্রক্রিয়ায় জটিলতা, বেকায়দায় শিক্ষা প্রশাসন - dainik shiksha ইএফটিতে এমপিও প্রক্রিয়ায় জটিলতা, বেকায়দায় শিক্ষা প্রশাসন সরকারি চাকুরেদের বিদেশে বিনোদন ভ্রমণও স্থগিত দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা ছুটিতেও না - dainik shiksha সরকারি চাকুরেদের বিদেশে বিনোদন ভ্রমণও স্থগিত দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা ছুটিতেও না বৈষম্যমূলক জাতীয়করণ সমস্যার সমাধান জরুরি - dainik shiksha বৈষম্যমূলক জাতীয়করণ সমস্যার সমাধান জরুরি বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি জাবি ছাত্রীর সঙ্গে অ*শোভন আচরণ, ৩০ বাস আ*টক - dainik shiksha জাবি ছাত্রীর সঙ্গে অ*শোভন আচরণ, ৩০ বাস আ*টক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে প্রকৌশল গুচ্ছ ‍টিকিয়ে রাখতে উপাচার্যদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি - dainik shiksha প্রকৌশল গুচ্ছ ‍টিকিয়ে রাখতে উপাচার্যদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জানুয়ারিতে সব শ্রেণির বই দেয়া নিয়ে শঙ্কায় অর্থ উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতে সব শ্রেণির বই দেয়া নিয়ে শঙ্কায় অর্থ উপদেষ্টা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034561157226562