করোনা মহামারিতে ইয়ার লস ঠেকানো, সর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়াসহ ৪ দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একজন সচিব গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সে ঘোষণার পরদিনই আবারও আন্দোলনে নেমেছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) কুড়িগ্রাম, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল, মানববন্ধন, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ৪দফা দাবিতে কুড়িগ্রামে প্রতিবাদ মিছিল, মানববন্ধন, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সকালে পলিটেকনিক থেকে একটি মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে শহরের জিরো পয়েন্ট ঘোষপাড়ায় রাস্তা অবরোধ করে সেখানে সমাবেশ করে। সেখানে ঘন্টাখানেক অবরোধের পর কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশ ও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কুড়িগ্রাম পলিটেকনিকের ৬ষ্ঠ বর্ষ কনস্ট্রকশনের শিক্ষার্থী মাহফুজার রহমান, কিশোর রায় ও রাব্বি, ৪র্থ বর্ষ আর্কেটিকচারের শিক্ষার্থী ঝিনুক, জীবন, আতিকুর ও কম্পিউটারের শিক্ষার্থী ইরা, ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা, টিএসসির ২য় বর্ষ ইলেকট্রিক্যালের শিক্ষার্থী আশিকুরসহ অনেকে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা করোনার কারণে ১ বছর লস, প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম পর্বের ক্লাস চালু করে শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ, অতিরিক্ত ফি ও প্রাইভেট পলিটেকনিকে সেমিস্টার ফি প্রত্যাহার ও ২০২১খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ডুয়েটসহ অন্যান সকল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানান।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ফেনী প্রতিনিধি জানান, চার দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপালে সড়ক অবরোধ করেছেন ফেনী সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল ফ্লাইওভারের ঢাকামুখী অংশে প্রায় আধঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন তারা। এ সময় সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে প্রায় আধঘণ্টা অবস্থান করেন তারা। পরে ফেনী জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ থেকে সরে আসেন।
শিক্ষার্থীরা এ সময় জানান, কোনোভাবেই তারা তাদের শিক্ষা-জীবনের এক বছর হারাতে চান না, স্থগিত হওয়া ২য় ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ পর্বের তাত্ত্বিক পরীক্ষাগুলোর অটোপাস দিয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো পরবর্তী পর্বের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান ও এবার ১ম ৩য়, ৫ম ৭ম পর্বের ক্লাস চালু করে শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা দেয়ার দাবিও জানান, অতিরিক্ত ফি প্রত্যাহার ও বেসরকারি পলিটেকনিকের সেমিস্টার ফি মওকুফ করাসহ সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আসন বরাদ্দ করার দাবি জানান তারা।
যদিও গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসে শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান। রাজপথে আন্দোলনরত পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের রাজপথের আন্দোলন থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান তিনি। আর দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা বলেও অভিযোগ করেছেন কারিগরি শিক্ষা সচিব।
সচিব জানান, শিক্ষার্থীরা তাদের ইয়ার লস যাতে না হয় সে দাবি জানিয়েছেন। এজন্য কিছু কোর্সের সিলেবাস ও সময় কমানো হয়েছে। ছয় মাসের কোর্সগুলো চার মাস করা হবে। সিলেবাস কমিয়ে শিক্ষার্থীদের কোর্সগুলো করতে হবে। তাই, তাদের ইয়ার লস হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না৷ তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ৷ ইতোমধ্যেই তাদের পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। সময় ও সিলেবাস কমিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিপ্লোমা পরীক্ষা নেয়া হবে।
শিক্ষার্থীরা অটোপাস দেয়ার দাবি জানিয়েছেন উল্লেখ করে সচিব বলেছিলেন, তাদের অটোপাস দেয়া সম্ভব নয় কারণ এটি নূন্যতম যোগ্যতা তাদের অর্জন করতে হয়। এজন্য সিলেবাস কমিয়ে এবং অনেক প্রশ্ন উত্তর দেয়ার সুযোগ রেখে সহজ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ফি কমানোর দাবি জানিয়েছেন উল্লেখ করে আমিনুল ইসলাম খান আরও জানিয়েছিলেন, শিক্ষার্থীদের ফি কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সরকারি পলিটেকনিকের ফি আমরা ওয়েভ করেছি। বেসরকারি পলিটেকনিকগুলোর সাথে ফি কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কোন অতিরিক্ত ফি দিতে হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবির বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা সচিব জানান, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নড়াইল এবং খাগড়াছড়িতে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি ধারা থেকে এবং বাকি ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ ধারা থেকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে।
সচিব বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামার আগেই এ সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারপরও তারা কেন আন্দোলনে নামলেন তা বোধগম্য নয়। যারা আন্দোলনে নেমেছেন তারা যে সংগঠনটির ব্যানার ব্যবহার করছেন তারা কখনও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বা মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে তাদের দাবি-দাওয়া জানায়নি। লিখিতভাবে দাবি-দাওয়া না জানিয়ে হঠাৎ রাস্তায় নেমে পরেছেন। এ আন্দোলন শিক্ষার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নাকি নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা সে প্রশ্ন তোলেন কারিগরি শিক্ষা সচিব।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব (লিংক যাবে) করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।