নামকাওয়াস্তে চলছে শিক্ষার্থী বাস সার্ভিস - দৈনিকশিক্ষা

নামকাওয়াস্তে চলছে শিক্ষার্থী বাস সার্ভিস

নিজস্ব প্রতিবেদক |

স্কুল-কলেজে প্রাইভেটকারের ভিড় কমাতে ২০১১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি শিক্ষার্থীদের বাস চালু করে। ১০ বছর আগে চালু করা ১৪ বাসের মাত্র ছয়টি চলছে নামকাওয়াস্তে। মিরপুর-১২ থেকে আজিমপুর রুটের এসব বাসে ভাড়া সাধারণ বাসের মতোই। ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে সাধারণ যাত্রীই বেশি ওঠে।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, স্কুল-কলেজ শুরু-ছুটির সময়ের সঙ্গে মেলে না। তাই তারা চাইলেও বাসে চড়তে পারে না। আবার বিআরটিসি বলছে, যাত্রী সংকটের কারণে শিক্ষার্থী সার্ভিসগুলো লাভজনক হয়নি। লোকসান দিতে হচ্ছে। সরকারি ভর্তুকি ছাড়া সার্ভিসের কলেবর বাড়ানো সম্ভব নয়।

বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেছেন, এখনও ছয়টি বাস চলছে। মিরপুর-১২ থেকে মিরপুর-১০, ১, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদ গেট, কলাবাগান ও নিউমার্কেট রুটে চলে। ২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ বাসে চলাচল করতে পারে।

ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় ৮ নভেম্বর থেকে ঢাকায় বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বেড়েছে। কিলোমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দুই টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকার যতটা বাড়িয়েছে, বাসে ভাড়া তার চেয়ে বেশি নেওয়া হচ্ছে। বাড়তি ভাড়ার চাপে পড়া শিক্ষার্থীরা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হাফ পাসের দাবিতে আন্দোলন করছেন। প্রায় প্রতিদিনই তারা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবরোধ করছেন। এতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। আবার ভাড়া নিয়ে বাসচালক-শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের বচসা-বিতণ্ডা লেগেই রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে যে বাস সার্ভিস, তার বেহাল দশা বলছে, এতে সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, বিআরটিসিতে ভাড়া কমলেও বাস কম থাকায় বেসরকারি বাসের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হিসাবে, শুধু ধানমন্ডিতেই স্কুলের সময় ২১ হাজার প্রাইভেটকার আসে। ইন্টারনেটের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন ২৫ লাখ শিক্ষার্থী স্কুল বাসে চলাচল করে নামমাত্র মূল্যে। ভারতেও সরকারি 'ইয়োলো স্কুল বাস' জনপ্রিয় পরিবহন।

যানজট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি চালু হয় স্কুল বাস সার্ভিস। ২৬টি স্কুলকে সার্ভিসের আওতায় আনা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন সকালে মিরপুর-১০ থেকে আজিমপুর সাতটি ও বিপরীত দিক থেকে আরও সাতটি বাস চালু করা হয়। কথা ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ টিকিট চালু ও সার্ভিসের পরিধি বাড়ানো হবে। তা না হয়ে ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়েছে বাস সার্ভিস।

এ অবস্থার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দায়ী করেছেন বিআরটিসির কর্মকর্তারা। বিআরটিসির একজন উপব্যবস্থাপক  বলেন, শুরু থেকেই লোকসানি ছিল স্কুল সার্ভিস। প্রতিটি গাড়ির দৈনিক লোকসান প্রায় দুই হাজার টাকা। সার্ভিস চালুর আগেই তা তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে দুই দফা চিঠিতে জানানো হয়েছিল। বিআরটিসি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (সিএসআর) থেকে লোকসানে অর্থ সংগ্রহের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেও জবাব আসেনি।

বিআরটিসির দেওয়া তথ্যানুয়ায়ী, ১৪ বাস কিনতে ঋণ নিতে হয় চার কোটি ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৪ টাকা। প্রতিটি বাসের দাম পড়ে ৩২ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬১ টাকা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছে টিকিট বিক্রির টাকায় সার্ভিস পরিচালনার খরচ ওঠেনি। প্রতিদিন বিআরটিসির খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার ১৬৮ টাকা। আর গড়ে আয় হয়েছে ১২ হাজার টাকা। লোকসান ২২ হাজার ৫৬৮। ছুটির দিনগুলো বাদ দিয়ে বছরে লোকসান দিতে হয় প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

বিআরটিসি চেয়ারম্যন বলেছেন, প্রতিদিন তার প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ছয় শতাধিক বাস ঢাকায় চলে। রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিদিন ১১ শতাধিক বাস চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বিআরটিসির বাস ইজারা দেওয়া রয়েছে। বহরে যে সংখ্যক বাস রয়েছে, তা দিয়ে ইউরোপ, আমেরিকার মতো শিক্ষার্থী সার্ভিস চালু করা সম্ভব নয়।

শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বিশেষায়িত স্কুল বাস আমদানিতে ২০১৮ সালের বাজেটে শুল্ক্ক কমিয়েছিল সরকার। বাজেট বক্তৃতায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, যানজট কমাতে উন্নত দেশগুলোর মতো ঢাকায় স্কুল বাস সংস্কৃতি চালু করতে চায় সরকার। কিন্তু কোনো স্কুলই এ সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস আমদানি করেছে তার নজির নেই। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে গত তিন বছরে কোনো বাস স্কুল বাস হিসেবে নিবন্ধিত হয়নি।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা থাকলে ছাত্রদের হাফ পাসের দাবিতে রাস্তাতেই নামতে হতো না। কিন্তু ঢাকায় সবকিছুই অপরিকল্পিত। কোথায় স্কুল হবে, কোথায় কলেজ হবে- কিছুই পরিকল্পনা করে হয়নি। উত্তরার ছাত্র আজিমপুরে পড়তে যায়। এতে পরিবহন ব্যয় ও যানজটও বাড়ে। উন্নত দেশে নির্দিষ্ট 'এডুকেশন জোন' রয়েছে। সেখানে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকে। শিক্ষার্থীরা সরকারি বাসে সেখানে যায়।

চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056929588317871