পছন্দের প্রার্থী কৃতকার্য না হওয়ায় মাদরাসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষার ফল বাতিলের অভিযোগ উঠেছে। পটুয়াখালীর বাউফলের বিলবিলাস নেছারিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির গভনিং বডির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে ওই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রার্থীদের মধ্যে।
জানা গেছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গত শনিবার ছিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা। নিয়োগ কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে সভাপতি ছিলেন ওই মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন খান। সদস্য সচিব ছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ কে এম মহিউদ্দিন নিজেই। বাকি তিন সদস্যদের মধ্যে একজন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মনোনীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রুহুল আমিন, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাহফুজা ইয়াছমিন ও ওই মাদরাসার পরিচালনা কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মো. সোহেল মাহমুদ।উপাধ্যক্ষ পদে চারজন প্রার্থী আবেদন জমা পড়লেও মাত্র একজন প্রার্থী উপস্থিত হওয়ায় ওই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। অপরদিকে অধ্যক্ষ পদে ১৪ জন প্রার্থীর আবেদনের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নেয় আটজন।
নিয়োগ কমিটির এক সদস্য দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতার পছন্দের প্রার্থী উপস্থিত থাকলেও কাঙ্খিত ফল করতে না পাড়ায় তাকে প্রথম স্থানে দেখিয়ে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিতে বোর্ডের সদস্যদের চাপ প্রয়োগ করা হয়। সে ফলে পঞ্চম স্থানে থাকায় এতে রাজি হননি ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রুহুল আমিন ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাহফুজা ইয়াছমিন। নিয়োগের কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়েই চলে যান তারা দুইজন।
পরীক্ষায় অংশ নেয়া মো. শফিকুর রহমান নামে এক প্রার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমবে বলেন, সুদুর বাকেরগঞ্জ থেকে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু একটি বিশেষ মহলের প্রার্থী কাঙ্খিত ফল না করায় ফল ঘোষণা না করেই ঢাকা থেকে আসা দুই সদস্য চলে গেছেন।’
মোস্তাকিম বিল্লাহ নামে অপর একজন প্রার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘রাজাপুর থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাও দিয়েছি। ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে জানানো হয় ফের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে ও নতুনভাবে পরীক্ষা নেয়া হবে।’
স্থানীয়রা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে একজন অযোগ্য ব্যক্তিকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের চেস্টা চলছিল। নিয়োগ পরীক্ষার দুই সদস্য রাজি না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা থেকে আসা নিয়োগ কমিটির সম্মানিত দুই সদস্য বিব্রত হয়েছেন। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী ব্যক্তিকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার পক্ষে ছিলেন তারা।’
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাহফুজা ইয়াছমিন বিব্রত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কোনোভাবেই নিয়মের বাহিরে যাওয়া সম্ভব না। তাই ফল ঘোষণা না করেই চলে এসেছি।’
নিয়োগ পরীক্ষার সদস্য সচিব ও মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘সভাপতি ওই নিয়াগ পরীক্ষা বাতিল করেছেন। এর চেয়ে ভালো প্রার্থী নেয়ার জন্য ফের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। যতটুকু জেনেছি তাতে আবুল কালাম আজাদ নামে একজন প্রথম ও মো. হাবিবুল্লাহ নামে অপর একজন পরীক্ষায় দ্বিতীয় হন।’
এ মুহুর্তে অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না জানিয়েছেন নিয়োগ কমিটি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং বাউফল সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন খান।