করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে আছে হাজার হাজার পরীক্ষা। সৃষ্টি হয়েছে সেশনজটের। কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে, তা-ও অনিশ্চিত। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে চাকরির বিজ্ঞপ্তি। এমনকি দুই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নামছেন শিক্ষার্থীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিন্ডিকেট, একাডেমিক বা ডিনস কমিটি তাদের নিজ নিজ পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে ব্যাপারটি আরো পরিষ্কার করতে আগামীকাল রবিবারই উজিসি উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে। শনিবার (১২ ডিসেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ইউজিসির নির্দেশনামতেই বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এরই মধ্যে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করছে। হলগুলো না খুলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া হবে পরীক্ষা। আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ২৬ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরু করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের অধিভুক্ত কলেজগুলোকে পরীক্ষা গ্রহণে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে। তবে যেসব ছোট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তারা এখনো ইউজিসির দিকেই তাকিয়ে রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন অনার্স ও মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। করোনার আগেই কোর্স শেষ হয়ে গেলেও শুধু পরীক্ষার কারণে তাঁদের পড়ালেখা শেষ হচ্ছে না। এতে চাকরির বয়স কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া পড়ালেখার প্রস্তুতিও তাঁরা ধরে রাখতে পারছেন না। সম্প্রতি ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে; কিন্তু সেখানেও তাঁরা অংশ নিতে পারছেন না। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু পরীক্ষাও নেওয়া হচ্ছে, তাই সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। আবার পরীক্ষা না থাকায় অনলাইন ক্লাসের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন শিক্ষার্থীরা। দিন দিন ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থী কমছে।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ব্যাপারে সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল বা ডিনস কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে হবে। যাঁরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তাঁরা চাচ্ছেন ইউজিসি এ ব্যাপারে কিছু বলুক। এ জন্য আগামী ১৩ ডিসেম্বর আমরা উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছি। আমার মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তা বাস্তবায়ন করা সহজ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষার ব্যাপারে এই সদস্য বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিতে ইউজিসির পক্ষ থেকে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। তবে অনুমোদিত পদের বিপরীতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও সৃষ্টি হয়েছে বড় সেশনজট। তাদের অনার্স চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা গত মার্চেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই থেকে পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষা আটকে গেছে করোনার কারণে। ডিগ্রি পাস কোর্স দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ এবং মাস্টার্স ফাইনালের পরীক্ষাও স্থগিত হয়েছে। গত আগস্টের মধ্যে মাস্টার্স প্রিলিমিনারি, অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা হওয়ারও কথা ছিল। করোনার কারণে এই পুরো পরীক্ষাসূচিই স্থগিত হয়ে গেছে। চাকরির বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় দুর্ভাবনায় পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, অনার্স চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার ও মাস্টার্সের দ্বিতীয় সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য অপেক্ষাধীন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা চলাকালীন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাতায়াত করতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনার্স শেষবর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২৬ ডিসেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিভাগ বা ইনস্টিটিউট থেকে পরীক্ষার সময়সূচি জানতে পারবে। প্রয়োজনে পরীক্ষাগুলো কম বিরতিতে বা একই দিনে দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার সময়কাল হবে বিদ্যমান নির্ধারিত সময়ের অর্ধেক। একইভাবে ল্যাবকেন্দ্রিক ব্যাবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ইনকোর্স, মিডটার্ম, টিউটরিয়াল পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবিলম্বে স্নাতক শেষ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়াসহ পর্যায়ক্রমে সব অসমাপ্ত পরীক্ষা শেষ করার দাবিতে গত সোমবার প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ৪৩তম বিসিএসে অংশগ্রহণের জন্য অ্যাপিয়ার্ড সনদের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যাঁরা অনার্স শেষ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন; কিন্তু করোনার কারণে সব পরীক্ষা শেষ হয়নি, তাঁরা অ্যাপিয়ার্ড সনদ দিয়ে ৪৩তম বিসিএসে অংশ নিতে পারবেন। তবে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি বলছে, অ্যাপিয়ার্ড সনদ দিয়ে আবেদন করতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ফাইনাল ইয়ারের সব বিষয়ের পরীক্ষা শেষ করতে হবে। দুই পক্ষের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।