পরীক্ষায় নকলে কার লাভ কার ক্ষতি - দৈনিকশিক্ষা

পরীক্ষায় নকলে কার লাভ কার ক্ষতি

মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান |

৩০ এপ্রিল শুরু হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি ও সমমান। এ বছর ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ জন এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৫ জন। এ বছর ৫০ হাজার ২৯৫ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে। এর মধ্যে ছাত্রী বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৮ হাজার ৬০৯ জন। এটা আশাব্যঞ্জক খবর। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে এসব শিক্ষার্থী ২য় শ্রেণিতে লেখা পড়া করতেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৪-১৫ অনুযায়ী তখন তাদের সংখ্যা ছিল ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩১ জন। সে হিসেবে পরীক্ষা অংশ নেবেন ৫১ দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, অবশিষ্টাংশ ঝরে পড়েছে। 

বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় জরিপ-২০১৪ অনুযায়ী বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা (৬-১০ বছর বয়সী) ১ কোটি ৭৬ লাখ ২২ হাজার ২৯৩ জন। ঝরে পড়ার সংখ্যা যাই হোক ২০ লাখ পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিচ্ছে -এটা বেশ কিছু দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও অধিক।

এ বছর ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ময়মনসিংহ বিভাগের ৪টি জেলার ১ লাখ ২৩ হাজার ২৫৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৬২ হাজার ৩৬৭ জন ছাত্র, ৬০ হাজার ৮৯২ জন ছাত্রী। কেন্দ্র সংখ্যা ১৫০ টি।

এত বড় একটা পরীক্ষার আয়োজন নিঃসন্দেহে একটা কঠিন কাজ। এ কাজটাকে আরো কঠিন করে তুলেছে পরীক্ষায় অসদুপায় তথা নকল করার প্রবণতা। সম্ভবত শিক্ষার্থীরা এমনকি শিক্ষকদের কিছু অংশ বুঝতে অপারগ যে, নকল করলে কার লাভ কার ক্ষতি। হয়তো একটা বড় কলেবরের পরীক্ষা হওয়ার কারণে নকল করে পাস করা সম্ভব। কিন্তু ক্লাস যত উপরে যাবে শিক্ষার্থী তত কমতে থাকবে, পরীক্ষাও ততো কঠিন হবে। তখন নকল করার সুযোগ থাকবে না। পরীক্ষার্থীরা আরো বুঝতে পারছেন না, নকল করে পাস তাদের জন্য কোনো সম্মান বয়ে আনবে না, কোনো কাজেও লাগবে না।

লেখাপড়ার পর শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে প্রত্যাশিত চাকরি বিসিএস। ৪৪তম বিসিএসের আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২ মার্চ। ১ হাজার ৭১০টি পদের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ জন। অর্থাৎ প্রতি পদের বিপরীতে ২০৫ জন প্রার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নকল হয় না বললেই চলে। সেখানে সবাই মেধাবী, কিন্তু চাকরির বাজারে তুমুল প্রতিযোগিতা। তাহলে পরীক্ষার্থীদের ভাবতে হবে নকল করে পরীক্ষায় পাস করে তাদের জায়গাটা কোথায় হবে। একটা সময়ে বাংলাদেশের এই পাবলিক পরীক্ষায় প্রচুর নকল হতো। পরীক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, প্রশাসন- সবাই কমবেশি এর সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। পরীক্ষা কেন্দ্র কন্ট্রাক্ট হতো টাকার বিনিময়ে। শহরের কিছু কম লেখাপড়া করা পরীক্ষার্থী মফস্বলের কিছু ‘বদনামী’ স্কুলে ছুটে যেত রেজিস্ট্রেশন করতে। এ অবস্থা থেকে শৃঙ্খলা আনার জন্য পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) অধ্যাদেশ ১৯৮০ করা হয়, যা ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে কিছুটা সংশোধন করা হয়।

কি আছে এ আইনে?

১. ভূয়া পরীক্ষার্থী বা অন্যের পরীক্ষার প্রক্সি দিতে এসে ধরা খেলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড।
২. প্রশ্নপত্র ফাঁস, বিতরণ বা প্রকাশ করলে তিন থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড কিংবা অর্থদন্ড কিংবা উভয় দণ্ড।
৩.ভূয়া সার্টিফিকেট বা মার্কশিট বা ডিগ্রি তৈরি, ছাপানো, বিতরণ বা ব্যবহার করলে তিন থেকে সাত বছর কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধী।
৪. উত্তরপত্র পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন ইত্যাদির জন্য তিন থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন তিনি।
৫. পরীক্ষার্থীকে নকল সরবরাহ করলে বা পরীক্ষার সময় বলে দিলে বা সহযোগিতা করলে দুই বছর থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন সহায়তাকারী।
৬. পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে বা গোলযোগ সৃষ্টি করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার ঝুঁকি মনে রাখতে হবে।
৭.দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী, বোর্ডের কর্মকর্তা বা প্রশাসনের কর্মকর্তা নকলে সহযোগিতা করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
৮. পরীক্ষা গ্রহণের নির্দিষ্ট অথরিটি বা ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ বা পরীক্ষা পরিচালনায় যুক্ত হলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন তিনি যেই হোন না কেন।

ইদানিংআবার নকলের উপকরণ হিসেবে কিছু অপরাধীকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। এ অপরাধে যুক্ত হলে সমান শাস্তির পাশাপাশি ডিজিটাল ডিভাইসটাও বাজেয়াপ্ত করা হবে। এখন কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো প্রকার ডিজিটাল ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না।

এ অবস্থায়,পরীক্ষায় নকল করে যে ঝুঁকি তৈরি হয় তা নিজের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি পরিবার, আত্মীয়-পরিজনের কাছে, বন্ধু-বান্ধবের কাছেও লজ্জার বিষয়। সুতরাং পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে আমরা সবাই আন্তরিক হই। এ আন্তরিকতা পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক অভিভাবক, কর্মকর্তা সবাইকে প্রদর্শন করতে হবে। ডিজিটাল স্মার্ট বাংলাদেশে নকল শব্দটাই যাতে না থাকে। আসুন, আমরা সবাই একটা সুন্দর বাংলাদেশ, মেধাবী প্রজন্ম তৈরিতে ব্রত হই।

লেখক: মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান, উপপ্রধান তথ্য অফিসার, আঞ্চলিক তথ্য অফিস, ময়মনসিংহ।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064229965209961