পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হয়েছেটা কী? - দৈনিকশিক্ষা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হয়েছেটা কী?

মাছুম বিল্লাহ |

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলছে। এর আগে উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য ১৯ জানুয়ারি দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময়ে বেধে দেয়া হয়েছিল। ঘটনার সূত্রপাত বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের অসদাচরণ নিয়ে। ১৩ জানুয়ারি রাতে ওই হলের ছাত্রীদের সাথে অসদাচরণ করায় ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করেন। ১৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালায়। আন্দোলন তাতে নতুন মাত্রা পায়। এরপর শুধুই নতুন নতুন ঘটনা ঘটতে দেখছি আমরা।

পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোর চলমান দুর্নীতি,অস্থিরতা, রাজনৈতিক খেলা উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এক হতাশাব্যাজ্ঞক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এখন কেউ কেউ হয়তো দেশে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খোলার প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়ে যাবেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ, ইউজিসি এবং সর্বোপরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে অনুরোধ করব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে প্রকৃত শিক্ষানুরাগী শিক্ষকদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া এবং তথাকথিত ছাত্ররাজনীতিকে প্রশয় না দেয়ার জন্য।  পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা একক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই পদের  সম্মানটুকু  হারাচ্ছেন। তারা যা  করে থাকেন সেগুলো হচ্ছে শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তা নিয়োগ ও বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে অনিয়ম করা। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রিয়তা ও অর্থিক সম্পৃক্ততা, একাডেমিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি ইত্যাদি এখন সাধারণ খবরে পরিণত হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক তথা প্রশাসনের এই দশা, এই সুযোগে ছাত্র রাজনীতি ধারণ করেছে এক কুৎসিত চিত্র। তারা যা ইচ্ছে তাই করছে। সাধারণ ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা শুধু কোণঠাসাই নয়, তাদের ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাতে হয় ক্যাম্পাসে। অথচ বিশ^বিদ্যালয় থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত। এই অবস্থায় জাতির ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাচ্ছে, সেটি কি আমরা চিন্তা করছি? ছাত্রনেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতির চিত্র দেখে নিজেরাই অনেক কিছু হাতে নিয়ে নেন। তাদের সামনে যে উদাহরণ তারা দেখছেন, তাতে এর চেয়ে ভাল আর কী করবেন তারা? একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্র সংগঠন দেখলাম ভিসিকে ক্যাস্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। আবার ভিসিরা এদের খুশি করেই চেয়ারে থাকেন। একজন আক্ষেপ করে লিখেছেন সকল ছাত্রকে সরকারি ছাত্র সংগঠন মিছিল করার জন্য আটকে রেখেছে। সেখান দিযে একজন শিক্ষক যাচ্ছেন তাকেও মিছিলে যেতে বলছেন এবং প্রলোভন দেখাচ্ছে, আজ তিনি সাধারণ শিক্ষক, তাদের সাথে মিছিল করলে প্রভোস্ট বানিয়ে দেবেন। লেখক বলছেন সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যেদিন শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদেরও সরকারি ছাত্র সংগঠনের মিছিল করতে হবে, যদি অবস্থার লাগাম টানা না হয়।   

যুগ যুগ ধরে আমরা দেখে আসছি একজন ভিসি দায়িত্ব পাওয়ার পরই নিজ পছন্দমত ও আজ্ঞাবহ লোক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সব স্তর সাজিয়ে নেন যারা চাটুকারিতায় তুষ্ট রাখেন ভিসিদের। ভিসিরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, ছেলে, মেয়ে বন্ধু-বান্ধবদের ছেলেমেয়ে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার উপযুক্ত নয়, অথচ শর্ত শিথিল করে, আইন ভঙ্গ করে তাদের শিক্ষক হিসেবে নিযোগ দেন। এ ধরনের ভিসিরা তো সত্য কথাটি জোর করে বলতে পারছেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে বিশ^বিদ্যালয়ে কী ধরনের শিক্ষক আমরা নিয়োগ দিচ্ছি? আর এটি তো একদিন বা দুদিনে তৈরি হয়নি। যেভাবেই নিয়োগ হোক, অন্যান্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ অধিকতর মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত ও আলোকিত। তাদের কোনোভাবে কলঙ্কিত করার সুযোগ তৈরি হতে দেয়া উচিত নয়। বিশ^বিদ্যালয়ের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, মানবিকতার স্বার্থে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানের বাতিঘর। এখানে স্বায়ত্তশাসন প্রয়োজন উচ্চশিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখার জন্য এবং গোটা জাতি ও বিশ্বকে অত্যন্ত মার্জিত, জ্ঞানী, যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি উপহার দেয়ার জন্য  যাতে তারা দেশ, জাতি ও মানবতার সেবা করতে পারেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে। নিজেদের প্রযোজন ও চাহিদামাফিক শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অন্যান্য শিক্ষা আনুষঙ্গিক বিষয় নিজেদের মতো পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে না পারলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন দরকার। অথচ রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসিদের কারণেই মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতে পারছে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডিন, প্রো-ভিসি ও ভিসি তো কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য ওসব পদে বসেন না। তারা সবাই অত্যন্ত সম্মানিত শিক্ষক। যে পদেই তারা বসুন না কেন, সবাই শিক্ষক। যেসব পদে বসেছেন সেগুলোও শিক্ষকতার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাহলে তাদের নির্বাচনের মাধ্যমে ওসব পদে বসতে হবে কেন? কেন তাদের নীল, সাদা কিংবা গোলাপী দলকে জেতানোর জন্য দলে লোক ভারী করতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটের সময় এলে শিক্ষকদের সে কি দৌড়ঝাপ, ব্যস্ততা দেখা যায় শ্রেণি কার্যক্রম বাদ দিয়ে। মনে হয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচন। এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আজ হোক আর কাল হোক বিদেশীরাও এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খুলবে এবং শিক্ষা বাণিজ্য শুরু করবে।

বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘সাইটেশন’ দেখে যেমন তাদের র্যাংকিং ও মান ধরা হয়, সেখানে আমাদের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে দেখতে হয়, তারা কয়টি ছাত্র আন্দোলন সরকারি ছাত্র সংগঠন দ্বারা থামিয়েছেন, কয়টি পুলিশি অ্যাকশন নিয়েছেন, কতজন শিক্ষক-কর্মচারী অবৈধভাবে চাকরিতে ঢুকিয়ে দল ভারী করেছেন? আন্তর্জাতিক কোনো র্যাংকিংয়েই কোনো বছর আমাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান থাকে না। কারণ উপরোক্ত ক্রাইটেরিয়াগুলো তো র্যাংকিংয়ে সহায়তা করে না। ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবার খেপে যায় যে, তাদের সঠিকভাবে বিচার করা হয়নি। 

লেখক : মাছুম বিল্লাহ, ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব) 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011588096618652