পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা! - দৈনিকশিক্ষা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক: |

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়েছেন সরকারের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। চাকরি শেষে তিনি পিআরএল ভোগ করছিলেন। পিআরএল বাতিল করে তাকে চার বছরের জন্য এ নিয়োগ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার এ নিয়োগে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

সরকারের একজন সাবেক আমলাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ায় আপত্তির কারণ জানতে চাইলে শিক্ষকরা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বা আর্থিক ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি অ্যাকাডেমিক কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত। একজন শিক্ষক বাজেট বা আর্থিক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় প্রোগ্রামগুলোর  উন্নয়নের বিষয়টা বিবেচনায় নিয়ে থাকেন। একটি অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানের বাজেট হচ্ছে একটি অ্যাকাডেমিক পরিকল্পনার প্রতিচ্ছবি। যদি অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রামগুলোর ডিজাইন ও কৌশল জানা না থাকে, তাহলে বাজেট বা আর্থিক ব্যবস্থাপনা কখনো অ্যাকাডেমিক প্রগতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না। এ জন্যই একজন শিক্ষক এ ধরনের দায়িত্ব পালনে অনেক বেশি উপযুক্ত। 

অপরদিকে একাধিক বর্তমান ও সাবেক আমলা জানিয়েছেন, কোষাধ্যক্ষের যে কাজ তা অনেকটাই প্রশাসনিক। কাজেই এখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাও দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবেন। কোষাধ্যক্ষ পদে শিক্ষকদের বাইরেও নিয়োগের নজির রয়েছে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনটি সংসদে ২০১৭ সালে পাস হয়। জামালপুরের মেলান্দহে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মূলত জামালপুরের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়টি আলোর মুখ দেখে। উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে থাকা জামালপুরে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য বহুদিন থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির  ভিসি নিয়োগ করা হয়েছে। অন্যান্য কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মোহাম্মদ আবদুল মান্নান চার বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন। ১৯৮৫ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের এ কর্মকর্তা সর্বশেষ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। এ নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি পিআরএল ভোগ করছিলেন। তিনি পিআরএলে যাওয়ার আগে যে বেতন পেতেন সেই বেতনেই বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে তার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তার অবসরোত্তর ছুটি স্থগিত থাকবে, নিয়োগের মেয়াদ শেষে অবশিষ্ট ছুটি ও সংশ্লিষ্ট সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৫ মে আবদুল মান্নানকে কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার পর থেকেই বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ নিয়োগের বিরোধিতা করে আসছেন। গতকাল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এ নিয়োগ বাতিল করার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারী এবং মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদগুলোতে শিক্ষকদের নিয়োগ করাই প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। কিন্তু বঙ্গমাতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে প্রশাসন ক্যাডারের একজন পিআরএল ভোগরত কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়াতে আমরা মর্মাহত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টির জন্য দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন নিয়োগ দিয়ে জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমরা মনে করি অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদগুলোতে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া উচিত। আমরা একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।   

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম পদে নিয়োগের বিরোধিতা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শুরুতেই বিতর্কিত এ নিয়োগ আদেশ নিয়ে আবদুল মান্নান বঙ্গমাতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবেন সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়া আবদুল মান্নান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি এবং বিশ^বিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আমাকে এ নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি যতদিন আমাকে এ পদে বহাল রাখবেন ততদিন আমি দায়িত্ব পালন করে যাব। কে বা কারা এ পদের দাবিদার সে বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। যতদিন রাষ্ট্রপতি আমাকে এ পদে রাখবেন ততদিন আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাব।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এ নিয়োগের প্রতিবাদ করলেও অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। তবে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সদ্য বিদায়ী সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সরকার প্রশাসন ক্যাডারের একজন বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিতে পারে। এ বিষয়ে নিয়োগবিধিতেই স্পষ্ট করে নির্দেশনা রয়েছে। এ ধরনের নিয়োগ নিয়ে আইনগত কোনো বাধা নেই। কাজেই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হলেই তার কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার বিরোধিতা করা উচিত নয়। সরকার যে নিয়োগ দিয়েছে তা জেনে বুঝেই দিয়েছে। এখানে সবারই মিলেমিশে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’

এদিকে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে সাবেক একজন আমলাকে নিয়োগ দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকেই এই নিয়োগের সমালোচনা করছেন। আরিফা রহমান রুমা নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তার ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা বা শিক্ষা প্রশাসনের মতো নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুক্ত জ্ঞানচর্চার জায়গা, সেখানে আমলাতন্ত্রের মনস্তাত্ত্বিক কাঠামোর দ্বারা পরিচালনা করা হলে তা উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণাকে ধ্বংস করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পরিচালনার প্রতিটি পর্যায়ে এমন ব্যক্তিকে নির্বাচন করা উচিত যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন। অভিজিৎ ভট্টাচার্য নামের একজন ফেইসবুক ব্যবহারকারী তার পোস্টে মন্তব্য করেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমলা নিয়োগ দিতে হবে কেন?’ পরে তার এই পোস্টে অনেক নেতিবাচক মন্তব্য যোগ হয়েছে।

সূত্র: দেশ রূপান্তর। 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007889986038208