সরকারিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকায় অর্ধশতাধিক ভুয়া শিক্ষকের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড হ্যাক করে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার এসব স্কুলে শিক্ষকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমন অভিনব প্রতারণার বিষয় জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষা বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা অফিস বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, উলিপুর উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৬৮ টি। এরমধ্যে সরকারিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫০টি। প্রতি বছর অনলাইনে ই-প্রাইমারি সিস্টেমের মধ্যেমে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোসহ শিক্ষার্থীদের তথ্য হালনাগাদ করা হয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ের একটি করে আইডি এবং গোপন পাসওয়ার্ড রয়েছে। কিন্তু এসব আইডির পাসওয়ার্ড হ্যাক করে একটি প্রতারক চক্র উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারিকৃত বিদ্যালয়ে ভুয়া শিক্ষকের নাম তালিকাভুক্ত করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে পুর্ব পাড়া গোড়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন একরামুল হক প্রধান নামের এক ব্যক্তি। সেখানে তার পিতার নাম রফিকুল ইসলাম, ঠিকানা নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙা গ্রাম উল্লেখ করা হয়েছে। যোগদানের তারিখ বলা হয়েছে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি।
এ বিষয়ে একরামুল হকের কাছে জানতে চাইলে, তিনি নিজেকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দাবি করলেও স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয়টির অবস্থান সম্পর্কে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে কোন তথ্য দিতে পারেন নি।
মৌসুমি রাণী বর্মাও নিয়মবহির্ভূতভাবে উপজেলার চর রামনিয়াসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। সেখানে যোগদানের তারিখ ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ১ জানুয়ারি উল্লেখ করেছেন। তিনি উলিপুর উপজেলার গোড়াই সরকারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে একটি গণপাঠশালায় কর্মরত রয়েছেন।
মৌসুমি রাণীর স্বামী উৎপল কান্তি সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার স্ত্রী কোথাও চাকরির আবেদন করেনি। তাছাড়া ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের বিয়ে হয়নি। এমনটা কিভাবে হয়েছে সেটা আমার জানা নেই।
শুধু একরামুল কিংবা মৌসুমি রাণী বর্মায় নয়। উপজেলার গোড়াই দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রওশন আরা বেগম, মুন্সি পাড়া পুকুর পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারমিন বেগম, খোঁচাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরফিন নাহার, পশ্চিম কিশোরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাকলি বেগম, খারিজা লাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাহানারা বেগম ও শাহানাজ পারভীন, ডালিয়া পঞ্চানন পলাশ তলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মনিরুজ্জামান পাটোয়ারী, গুনাইগাছ আকন্দবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আঞ্জুমান আরা বেগমসহ এরকম প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নতুন সরকারি এসব বিদ্যালয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া শিক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, একটি প্রতারক চক্র এভাবে নিরীহ মানুষদের চাকুরি দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
গোড়াই দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা ইয়াসমিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার স্কুলে একজন অতিরিক্ত শিক্ষক তালিকাভুক্ত হয়েছেন। কিভাবে হয়েছেন সেটা বলতে পারিনা। তবে অনেক সময় বাজারের কম্পিউটারে কাজ করি সেখান থেকেও এটা হতে পারে।
সহকারী শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম ফারুক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এরকম কোন নিয়োগ হয়নি। যারা অবৈধভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাদের শিক্ষক হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
উপজেলার শিক্ষা অফিসার নাদির উজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,একটি চক্র অসাধুপায় অবলম্বন করে তারা শিক্ষকের তালিকাভুক্ত হয়েছেন। কিন্ত তারা শিক্ষক নন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তারা কিভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন সেটা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা বলতে পরবেন। যারা নিয়মবর্হিভূতভাবে তালিকাভুক্ত হয়ে নিজেদের শিক্ষক হিসেবে দাবি করছেন সেটা অন্যায্য। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকরা আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব (লিংক যাবে) করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।