রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এমবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মোশারুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিক দলের তারকা খেলোয়াড়ও তিনি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাঁচবার স্বর্ণ জিতেছেন। এর বাইরেও তার ১০টি রৌপ্য জয়ের রেকর্ড রয়েছে। প্রতিযোগিতার মাঠে নিজের এমন নজরকাড়া সাফল্যে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নও বানিয়েছেন। তবে করোনার কারণে মাঠের লড়াই ছেড়ে এবার জীবনের লড়াইয়ে নামতে হয়েছে ক্রীড়াবিদ মোশারুলকে। উপার্জন হারানো দরিদ্র পরিবারের সন্তান মোশারুল এখন ভ্যান চালাচ্ছেন। করছেন কৃষিকাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোশারুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি শহীদ হবিবুর রহমান হলে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামে। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বাবা ফেরিওয়ালা, মা গৃহিণী। বড় ভাই কৃষিকাজ করেন; বিয়ে করলেও এখনও একসঙ্গে আছেন। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় মাধ্যমিকের পর থেকে নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাতে হয়েছে মোশারুলকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তি ও টিউশনির টাকায় চলত পড়ালেখা। তবে করোনার কারণে সেসব উপার্জনের রাস্তাও হারিয়েছেন মোশারুল। তাই বাধ্য হয়ে বাবার ফেরির কাজের ভ্যানটি এখন তিনি চালাচ্ছেন।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
গত শুক্রবার মোশারুল ইসলাম তার ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি ক্যাপশনে লেখেন- পড়ালেখা করলে তো করোনা ধরে, যার জন্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই ভ্যান চালানো শুরু করেছি পেটের দায়ে। পেট তো বোঝে না করোনা কী জিনিস। তার এই স্ট্যাটাসের পর এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বেশ আলোচনা। অনেকেই তার পোস্টটি শেয়ার করছেন।
মোশারুল ইসলাম জানান, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিকে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ১০০ মিটার দৌড়ে অংশ নিয়ে গতবার রৌপ্য জয় করেছেন। একই বছর ১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ জয় করেছেন। তিনি বলেন, করোনার আগে রাজশাহীতে টিউশনি করতাম। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ করতাম। সেগুলোতে থেকে যে আয় হতো তা দিয়ে পড়ালেখাসহ অন্যান্য খরচ চলত। এর বাইরে খেলাধুলা করেও বিভিন্ন সময়ে কিছু টাকা আয় হতো। করোনাভাইরাসের কারণে এখন এসব উপার্জনের রাস্তা বন্ধ। সে জন্য ভ্যান চালাচ্ছি। বাবার একটি ভ্যান আছে, ভ্যান চালাতে পারি। কোনো কাজ না থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য এ পেশায় নেমেছি। ভ্যান চালানোর পাশাপাশি কৃষিকাজও করি।
মোশারুল ইসলাম আরও বলেন, রাজশাহী থাকতে হলে মেসে থাকতে হবে। সেখানে খরচের বিষয় আছে। রাজশাহীর কয়েকটি শোরুমে পার্টটাইম চাকরির জন্য যোগাযোগ করেছি, কিন্তু পাইনি। দু'এক জায়গায় চাকরিতে নিতে আগ্রহ দেখালেও কেউই তিন-চার হাজারের বেশি বেতন দিতে রাজি হয়নি। সে জন্য রাজশাহী থাকা সম্ভব হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না থাকলে এতদিনে পড়ালেখা শেষ হয়ে যেত।
রাবির হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, মোশারুল ইসলাম আমাদের বিভাগের গর্ব। তার ব্যাপারে বিভাগ এবং বিভাগের অ্যালামনাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি, কিছু একটা করতে পারব।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন