মহামারি কভিড-১৯কে পুঁজি করে শ্যামনগরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেশুমার অর্থবাণিজ্য শুরু করেছে। সরকার প্রদত্ত বিশেষ অনুদানের টাকা পেতে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আবেদনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের প্রত্যয়নপত্র দিতে এ অর্থ বাণিজ্যে মেতেছে।
প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী বিবেচনায় সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে কেবল একটি প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিনিময়ে। মহামারির ধকল কাটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে পারার আগেই প্রতিষ্ঠানের এমনভাবে অর্থ আদায়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
জানা গেছে, করোনাকালের কথা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বাজেট শাখা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ধরনের অনুদান দেওয়ার সুবিধাভোগী হিসেবে উপযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে আবেদনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং তাদের শিক্ষক-কর্মচারীরা মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের বিশেষ অনুদান গ্রহণের সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে। অনলাইনে আবেদন করতে বলা হওয়ায় সেখানে আবেদনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র সংযুক্তির কথা বলা হয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রত্যয়নপত্রের জন্য শিক্ষার্থী পিছু ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে আদায় করছে।
জানা গেছে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থী আবেদনের চেষ্টা করছে। তারা আবেদনের আগে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো রমরমা অর্থ বাণিজ্য করছে উল্লেখ করে কয়েক শিক্ষার্থী জানায়, টাকা না দিলে অহেতুক বিলম্বসহ নানা কৌশলে তাদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় ফেলা হচ্ছে। নিতান্ত বাধ্য হয়ে তারা টাকার বিনিময়ে প্রত্যয়নপত্র নিচ্ছে বলেও জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাঁঠালবাড়িয়া এজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বলেন, টাকা ছাড়া প্রত্যয়নপত্র না মেলায় শুরুতে তারা আবেদন করতে পারেনি। পরে টাকা দিয়ে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করলেও সার্ভার জটিলতার কারণে গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত আবেদন করতে পারেনি।
নকিপুর এইচসি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র অভিযোগ করে বলে, বোর্ডে বিশেষ অনুদানের আবেদনের জন্য কোনো টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও টাকা ছাড়া কোনো প্রত্যয়নপত্র মিলছে না।
একই অবস্থা উপজেলাজুড়ে। অনলাইনে আবেদনের জন্য প্রত্যয়নপত্র নিতে গিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট 'ফি' গুনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে শ্যামনগর সরকারি মহসীন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিনিময়ে পঞ্চাশ টাকা নেওয়ার রীতি মেনে এবারও টাকা নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আর্থিক প্রণোদনার এ সুযোগ নিতে শিক্ষার্থীরা রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে বাড়তি লোকবল নিয়োগসহ কাগজ-কলমের মত আনুষঙ্গিক প্রয়োজন মেটাতে গ্রহণ করা টাকা খরচ করা হচ্ছে।
প্রত্যয়নপত্র প্রদানের ক্ষেত্রে টাকা গ্রহণের বিষয়ে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দেন উপজেলার আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ তেজারতের বক্তব্য নেওয়ার জন্য বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সত্ত্বেও তিনি ফোন ধরেননি।