একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ এই তিনটি পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১১টিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তিনটি পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা রয়েছেন। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শূন্য থাকা পদগুলোর নিয়োগ প্রস্তাব পাঠাতে দুই দফা অনুরোধ করা হলেও সাড়া মেলেনি। এই অবস্থায় আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নিয়োগ প্রস্তাব পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া তিনটি পদেরই যদি এ অবস্থা দাঁড়ায়, তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্য পদে নিয়োগের অবস্থা কী, তা সহজেই অনুমান করা যায়। মূলত ট্রাস্টি বোর্ডের ইচ্ছা অনুযায়ী চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বেশির ভাগেই নেই নিয়ম-নীতির বালাই। গুরুত্বপূর্ণ সব পদ চালানো হচ্ছে ট্রাস্টি বোর্ডের পছন্দের লোক দিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১১টিতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ এই তিনটি পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা রয়েছেন। এর বাইরে অন্যগুলোতে উপাচার্য থাকলেও নেই উপ-উপাচার্য কিংবা কোষাধ্যক্ষ। আবার উপ-উপাচার্য কিংবা কোষাধ্যক্ষ থাকলেও নেই উপাচার্য। এ রকম ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই, উপ-উপাচার্য নেই ৮৫টিতে এবং কোষাধ্যক্ষ নেই ৫৪টিতে। আর তিনটি পদই শূন্য রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ২১।
ইউজিসিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদ খালি থাকলে আমরা কোনো নতুন প্রগ্রামের অনুমোদন দিই না। এমনকি সমাবর্তনেরও অনুমতি দেওয়া হয় না। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদ শূন্য থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমরা নিয়মিত চিঠি দিয়ে আসছি। তার পরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃত্ব ধরে রাখতে এই তিন পদে নিয়োগ দিতে চায় না। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে কিছু নেই। তাঁদের সনদে স্বাক্ষর করার অধিকারও নেই।’
গত বছর আগস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের শূন্যপদ পূরণে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দুই দফা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের নিয়োগ প্রস্তাব পাঠাতে তাগাদা দেওয়া হয়।
গত ৭ জানুয়ারি ‘বিষয়টি অতীব জরুরি’ উল্লেখ করে তৃতীয় দফা চিঠি পাঠানো হয় মন্ত্রণালয় থেকে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে উক্ত পদসমূহের বিপরীতে তিনজনের প্যানেল প্রস্তুতপূর্বক প্রস্তাব গত ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে গত ৮ অক্টোবরের মধ্যে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু অদ্যাবধি প্রস্তাব পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আবশ্যিকভাবে প্রস্তাব এই বিভাগে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে পুনরায় অনুরোধ করা হলো। এর মধ্যে প্রস্তাব পাওয়া না গেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ইউজিসির তথ্য মতে, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ রয়েছেন এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে—, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি, রাজধানীর উত্তরায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি এবং নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ইউজিসি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চাপ দিলে তাদের অনেকে এমন সব ব্যক্তির নামের প্রস্তাব পাঠায়, যাঁদের সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগের যোগ্যতা ও বয়স নেই। ফলে নতুন করে নামের প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়। এভাবে ইচ্ছা করে বারবার সময়ক্ষেপণ করা হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ এই তিন পদে নিয়োগ দিতে একেকটি পদের বিপরীতে তিনজন অধ্যাপকের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেগুলো ইউজিসির মাধ্যমে যাচাই করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন।