তৈরি পোশাক শিল্প খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন টেকনোলজির (বিইউএফটি) মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের থাকার কথা থাকলেও তা চলে গেছে একটি গোষ্ঠীর কবজায়। এদের সবাই পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রভাবশালী সদস্য। অথচ সাধারণ সদস্যরা জানেন যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা বিজিএমইএর হাতে রয়েছে। বিজিএমইএ সদস্যদের দাবি, বিইউএফটি বিজিএমইএ সদস্যদের টাকায় তৈরি। তাই সব সদস্যের অধিকার রয়েছে। এ ছাড়া সময়োপযোগী ও নির্দিষ্ট মাপকাঠির মাধ্যমে বিইউএফটির ট্রাস্টি পরিচালনা হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তাঁরা।
১৯৯৯ সালে উত্তরায় বিজিএমইএর টাকায় একটি ভবনের ফ্লোর ভাড়া নিয়ে বিআইএফটি প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা ছিল বিজিএমইএর সহযোগী প্রতিষ্ঠান। সিদ্ধান্ত ছিল, বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদে যাঁরা থাকবেন, তাঁরাই এর সার্বিক পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানে থাকবেন।
বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘বিইউএফটি বিজিএমইএ সদসদের টাকায় তৈরি। এটি বিজিএমইএর সহযোগী প্রতিষ্ঠান। শুধু ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া মানে সব দায়িত্ব শেষ নয়। তাই ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে যে আলোচনা আর সমালোচনার ঝড় উঠেছে, তা থামাতে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড থাকা উচিত। এ ছাড়া স্থায়ী ট্রাস্টি হিসেবে থাকার সুযোগ নেই। তাই সাবেক সভাপতিদের বিজিএমইএর ভাবমূর্তি রক্ষায় করণীয় ঠিক করতে বসা উচিত।’
জানা যায়, উন্নতির এক পর্যায়ে তুরাগের নিশাতনগরে বিআইএফটির নামে ছয় বিঘা জমি কেনা হয়। সেই সঙ্গে রাজউক থেকে প্ল্যান পাস করে বহুতল ভবন করা হয়। জমি কেনা ও ভবন তৈরিতে বিআইএফটির নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বিজিএমইএ সমান টাকা দেয়। পরবর্তী সময়ে এই বিআইএফটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার আবেদন করা হয় এবং সে অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিআইএফটির নতুন নামকরণ হয় বিইউএফটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইউনিভার্সিটি হওয়ার সময় বিজিএমইএ তথা গার্মেন্ট মালিকদের অবহিত না করে ৯ জন নিজে নিজেই বিইউএফটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হয়ে যান এবং বিইউএফটির মালিক বনে যান। যদিও বিইউএফটি উন্নীত হয়েছে বিআইএফটি থেকে এবং বিইউএফটি বিআইএফটির নামে কেনা জমি ও বিল্ডিং ব্যবহার করছে। কিন্তু এর জন্য বিজিএমইএকে কোনো ভাড়া বা কিছুই দেয় না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা বিজিএমইএর সদস্য গার্মেন্ট মালিকদের থাকার কথা থাকলেও এখন দখল নিয়েছেন ২১ জন ট্রাস্টি সদস্য। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা।বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, ইউজিসির নীতিমালা অনুসারে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কারো মালিকানায় হতে পারে না। ফলে ট্রাস্টি বোর্ডের কোনো সদস্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক নন। তাঁরা শুধু ট্রাস্টি। তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণ করবেন নিরপেক্ষ ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে।
বিআইএফটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ড সব সময় পরিবর্তনযোগ্য। ১০ বছর হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। বেশির ভাগ সময় দেখা গেছে, যেসব নেতা বিজিএমইএর নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরাই এর ট্রাস্টি। এ ছাড়া আনিসুর রহমান সিনহাসহ অনেককে আসার আহ্বান জানানো হলেও তাঁরা তাসেননি। এখানে গোপন কিছু করা হয়নি।’
বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. মশিউল আযম সজল বলেন, ‘ট্রাস্টি হলেই মালিক হয়ে যায় না। এ ছাড়া ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সম্মিলতি পরিষদের নেতারাই বিজিএমইএর নেতৃত্বে ছিলেন। তাই তাঁরাই অগ্রাধিকার পেয়েছেন।’
সুত্র: কালেরকন্ঠ।