প্রশাসনে বরিশালের দাপট, পিছিয়ে কুমিল্লা - দৈনিকশিক্ষা

প্রশাসনে বরিশালের দাপট, পিছিয়ে কুমিল্লা

আশরাফুল হক |

একসময় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ ছিল কুমিল্লার কর্মকর্তাদের হাতে। গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এই জেলার অনেক কর্মকর্তা। এখন বরিশালের কর্মকর্তারা প্রশাসনের চালিকাশক্তি। বরাবরের মতো চট্টগ্রাম জেলার কর্মকর্তারা এখনো আলোচনায়। তবে প্রশাসনে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সিরাজগঞ্জ।

মহামারীতে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়ের দায়িত্ব পেয়ে সচিবদের রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে। এই দায়িত্ব দিতে গিয়ে সরকারকে দলের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনায় পড়তে হয়েছে। দিনভর সংসদে আলোচনা হয়েছে। ত্রাণের দায়িত্ব দিতে গিয়ে জেলার যে কর্মকর্তা সচিব পদে কর্মরত তাকেই বাছাই করা হয়েছে। কিন্তু যে জেলার সচিব নেই সেখানে পার্শ্ববর্তী জেলার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলার ত্রাণের দায়িত্ব পাওয়ার ঘটনা থেকে প্রশাসনে জেলাকেন্দ্রিক আলোচনা আবারও গুরুত্ব পাচ্ছে। সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার সময় জেলার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তারপরও কর্মকর্তারা যখন সচিবসহ অন্যান্য পদে পদোন্নতির জন্য তদবির করান তখন আঞ্চলিকতাই মুখ্য হয়ে ওঠে বলে জানান সচিবালয়সংশ্লিষ্টরা।

পাঁচজন করে সচিব আছে ঢাকা ও বরিশাল জেলায়। সচিবের সংখ্যা তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে সিরাজগঞ্জ। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে থাকা এ জেলায় সচিব রয়েছেন চারজন। সিরাজগঞ্জের সঙ্গে একই স্থানে আছে চট্টগ্রামও। তিনজন করে সচিব রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, কক্সবাজার, খুলনা ও কুষ্টিয়ায়। চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ ও শরীয়তপুরের সচিব দুজন করে। একজন করে সচিব পেয়ে তালিকায় নাম রেখেছে মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী।

সচিব নেই ২৪ জেলায়। ফরিদপুর আর মাদারীপুরে একজনও সচিব নেই। যা প্রশাসনসংশ্লিষ্টদের অবাক করেছে। কারণ গুজব রয়েছে, বেশিরভাগ সচিব গোপালগঞ্জ ও আশপাশ জেলারই। আদতে তা নয়। ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ ও রাজবাড়ীরও কোনো সচিব নেই।

বিভাগওয়ারি সচিবের সংখ্যা চট্টগ্রামের বেশি হলেও এই বিভাগের তিন পার্বত্য জেলায় কোনো সচিব নেই। বরিশাল বিভাগের বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠি সচিবশূন্য। খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ, মাগুরা ও মেহেরপুরেরও সচিব নেই। ময়মনসিংহের জামালপুর সচিবশূন্য। রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোনো সচিব নেই। রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, রংপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের কোনো সচিব নেই। বিভাগওয়ারি সবচেয়ে কম সচিব সিলেটের। চার জেলার এ বিভাগে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে কোনো সচিব নেই।

জেলাওয়ারি সচিব করার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সচিবরা জেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সচিব জানান, সচিবরা নানা উপায়ে জেলার জন্য ভূমিকা রাখতে পারেন। হাজার হাজার উন্নয়ন প্রকল্প। একজন সচিব যখন দেখেন তার মন্ত্রণালয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে নিজ জেলার নাম নেই, তখন তিনি স্বাভাবিকভাবেই তার জেলার নামটি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন।

গত জুন মাসে সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব একটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ওই দপ্তরে ৯ জেলার ৯টি গ্রামে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল। অতিরিক্ত সচিব ওই দপ্তরে যোগ দিয়ে তার গ্রামটিকেও ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করেন। এখন সেই প্রকল্পটির ৯ জেলার ১০ গ্রামে পাইলটিং হচ্ছে।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একজন সদস্য বলেন, আমি যখন সচিব ছিলাম তখন জেলা থেকে প্রচুর লোক চাকরির জন্য আমার কাছে আসত। আমি তাদের বলতাম লিখিত পরীক্ষায় পাস করলে আমি বলে দেব। আমি অন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবদের বলতামও। চেষ্টা করেছি দেশের লোকদের জন্য একটা কিছু করার। দেশের একটা সেক্টরের প্রধান কর্মকর্তা ছিলাম আমি। জেলার লোকজন তো আসবেই।

এটা অন্য একজন মেধাবীকে বঞ্চিত করেছে কি না জানতে চাইলে পিএসসির ওই সদস্য বলেন, কিছু ক্ষেত্রে বঞ্চিত করলেও আমি এটা করেছি জেলাপ্রীতির জন্য। এটা সব সচিবই করে। জেলার লোকদের জন্য তদবির করে না এমন সচিব খুব কম। সচিবদের একটা বড় সময় কাটে তদবির করে। মসজিদ-মন্দিরের জন্য অনুদান, রাস্তা করার আবেদন মঞ্জুর, সেলাই মেশিন দেওয়া, স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্ত করে দেওয়াসহ আরও নানা কাজে জেলার লোকজন আসত।

২০০২ সালের সচিব পদে পদোন্নতির বিধিমালায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত সচিব পদে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এক বছরের অভিজ্ঞ হওয়ার পর দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অবসরের বয়স হয়ে গেলে এ শর্ত শিথিল করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া সচিবালয়ে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। মূল্যায়নে ৮৫ শতাংশ নম্বরও থাকতে হবে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘সচিব পদে জেলা কোনো ফ্যাক্টর নয়। প্রধানমন্ত্রী তার বিবেচনায় সচিব করে থাকেন।’

বর্তমানে সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবের সংখ্যা ৭৬ জন। তাদের মধ্যে ১২ জন চুক্তিভিত্তিক। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বিশ^ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী মোহাম্মদ শফিউল আলম, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসও রয়েছেন।

বর্তমানে বরিশালের সচিব পাঁচজন। তাদের হাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্ব। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার দুই সচিবই বরিশালের। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। এসব সচিবের মধ্যে সবার আগে অবসরে যাবেন লোকমান হোসেন মিয়া। ২০২২ সালের ১৪ জুন তার পিআরএল শুরু হবে।

সিরাজগঞ্জ চার প্রভাবশালী সচিবের বাড়ি। এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের বাড়ি ওই জেলায়। পানিসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। সংসদ সচিবালয়ের সচিব কেএম আবদুস সালামও সিরাজগঞ্জের। এসব সচিবের মধ্যে কবির বিন আনোয়ার বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। সচিব পদে পদোন্নতির আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি অবসরে যাবেন।

ঢাকার সচিবরা হলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, বিপিএটিসির রেক্টর মনজুর হোসেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক নাহিদ রশিদ। এসব সচিবের মধ্যে মো. মোকাম্মেল হোসেন প্রশাসনে পরিচিত মুখ তার আগের পদের জন্য। তিনি সচিব হওয়ার আগে এপিডি ছিলেন।

চট্টগ্রাম থেকে আসা সচিবরা হলেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস ও সমাজকল্যাণ বিভাগের সচিব মাহফুজা আখতার।

তিন সচিবের তালিকায় রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এ জেলার সচিবরা হলেন বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ, সমবায় বিভাগের সচিব মো. মশিউর রহমান ও পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামীন চৌধুরী।

কক্সবাজার জেলার সচিবরা হলেন বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী মোহাম্মদ শফিউল আলম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মোমিনুর রশিদ আমিন। নরসিংদী থেকে আসা সচিব হলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশিদ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম ও লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবীর। খুলনা থেকে আসা সচিবরা হলেন বাণিজ্যের তপন কান্তি ঘোষ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। পিপিপি নির্বাহী প্রধান সুলতানা আফরোজ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মকবুল হোসেন ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুল ইসলামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়।

দুই সচিব রয়েছেন চাঁদপুরের। তারা হলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নাসিমা বেগম এবং বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল। সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের এনএম জিয়াউল আলমের জেলা কুমিল্লা। নৌপরিবহন সচিব মেজবাহউদ্দীন চৌধুরী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মো. সলিমউল্লাহ ফেনীর।

লক্ষ্মীপুর হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত সচিব মো. ফজলুল বারী ও বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানের নিজ জেলা। এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ কর্মকার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর খন্দকারের জেলা নোয়াখালী। গোপালগঞ্জ হচ্ছে পূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার ও ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুন্সী শাহাবুদ্দীন আহমেদের জেলা। কিশোরগঞ্জ নিজ জেলা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক বদরুল আরেফিনের। শরীয়তপুর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেনের নিজ জেলা। তাদের মধ্যে আনিসুর রহমান আগামী ১২ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন।

ময়মনসিংহ হচ্ছে সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুস সালেহীন, নেত্রকোনা পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরীফা খান ও আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পাবনা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা ও মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, দিনাজপুর ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নুরুল ইসলাম ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সদস্য মেসবাহুল ইসলাম, সিলেট শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসান ই ইলাহি ও জয়নুল বারী, টাঙ্গাইল মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও জনবিভাগ সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খানের নিজ জেলা। তাদের মধ্যে নুরুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার অবসরে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার বাড়ি পিরোজপুর। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসীন গাজীপুরের, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমীন বগুড়ার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আলী আজম বাগেরহাটের, খাদ্য সচিব নাজমানারা খানুম যশোরের, অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের শেখ ইউসুফ হারুন সাতক্ষীরার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান কুড়িগ্রামের, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম নীলফামারীর, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুলাল কৃষ্ণ সাহা মুন্সীগঞ্জের, পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের সচিব আছিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া নড়াইলের, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোকাব্বির হোসেন মৌলভীবাজারের, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা নাটোরের, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ পটুয়াখালীর, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আফজাল হোসেন মানিকগঞ্জের।

একসময় সরকারের ভেতরে কুমিল্লা বা বৃহত্তর কুমিল্লার কর্মকর্তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। শিক্ষার হার বেশি ও সুযোগ-সুবিধা অনুকূলে থাকায় তাদের পক্ষে চাকরিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়া অনেকটা সহজ ছিল। সরকারের ২১ জন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে চারজনই কুমিল্লার। বৃহত্তর কুমিল্লার রয়েছেন আরও তিনজন। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম কে আনোয়ারের বাড়ি কুমিল্লা। তিনি চাকরি-পরবর্তী জীবনে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং কৃষিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর নিজ জেলা কুমিল্লা। তিনি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। পরে তিনি মুখ্য সচিব হন। তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে সিএসপি হিসেবে প্রশাসনে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি সাহসী সেই ১৩ জন সিএসপির একজন যারা পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুরোটা সময় জুড়েই মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন আলী ইমাম মজুমদার। তার জেলাও কুমিল্লা। আলী ইমাম মজুমদারের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব হন এম আবদুল আজিজ। তিনিও কুমিল্লার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন বৃহত্তর কুমিল্লার অংশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ আইয়ুবুর রহমানের বাড়িও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খানও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার।

একটা সময় ছিল সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ সচিবের বাড়িই ছিল কুমিল্লায়। এমনও সময় গেছে সরকারে বৃহত্তর কুমিল্লার মোট সচিব ছিল ২২ জন। দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মাইনুদ্দিন আবদুল্লাহর বাড়ি কুমিল্লা। অবসরে যাওয়ার আগের দিন সচিব হয়ে ইতিহাস সৃষ্টিকারী কর্মকর্তা আনোয়ার ফারুকের বাড়িও কুমিল্লা। সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর বাড়িও  কুমিল্লা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সচিব জানান, প্রশাসনে কুমিল্লার প্রভাব কমেছে। দিন দিনই বরিশালের প্রভাব বাড়ছে। আর বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরের সমন্বয়ে বৃহত্তর বরিশালের বিষয়টি আমলে নিলে এখন তারা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছেন। এ ধারা শুধু সচিব পদে নয়, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব পদেও বরিশালের কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।

সূত্র: দেশ রূপান্তর 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.009584903717041