প্রশ্নফাঁস: মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ১০ - দৈনিকশিক্ষা

প্রশ্নফাঁস: মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ভর্তি পরীক্ষা ও সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিভিন্ন ঘটনায় এর আগে পুলিশের তদন্তে বেশ কয়েকজন শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের নেতার নাম এসেছিল। এবার জানা গেল, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জনপ্রতিনিধিও জড়িত। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তথ্য বলছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি চক্রে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন জড়িত। 

মাহবুবাকে গত শুক্রবার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

ডিবি বলছে, মাহবুবার সঙ্গে মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের (সিজিএ) বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানও রয়েছেন। এই চক্রের মোট ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীও রয়েছেন।

মাহবুবা ইডেন কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের দাপুটে নেত্রী ছিলেন। প্রথমে কলেজ ছাত্রলীগের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেন। ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (মাস্টার্স) অর্জনের পর বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর ২০১৯ সালের মার্চে দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

গ্রেফতাররা হলেন— নোমান সিদ্দিকী, মাহমুদুল হাসান আজাদ, আল আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজির আহমেদ, মাহবুবা নাসরীন রুপা, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান।

গ্রেফতারদের কাছ থেকে ইয়ার ডিভাইস ছয়টি, মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ছয়টি, ব্যাংকের চেক পাঁচটি, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সাতটি, স্মার্ট ফোন ১০টি, বাটন মোবাইল ছয়টি, প্রবেশপত্র ১৮টি ও চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের তিনটি সেট জব্দ করা হয়।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ৭০ নাম্বারের এমসিকিউ পরীক্ষা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এনএসআই আগে থেকে অসাধু কার্যক্রম ও জালিয়াতি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে।

গোয়েন্দা কার্যক্রমের একটি অসাধু চক্রের নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের তথ্য পায় এনএসআই ও গুলশান গোয়েন্দা বিভাগ। দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চারটি টিম রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানে কাকরাইলে অবস্থিত নিউ শাহিন হোটেল থেকে অসাধু উপায়ে অবলম্বনকারী দুই পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে কাফরুল থানাধীন সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ডিভাইস, প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্রের খসড়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। ডিবি পুলিশের অপর দল বিজিপ্রেস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার্থী এবং অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাহবুবা নাসরীন রুপাকে টাকা, ডিজিটাল ডিভাইসসহ গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য মতে অপর আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।

হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে চক্রটির একটি গ্রুপ পরীক্ষার আগে থেকে পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও অর্থ হাতিয়ে নেয়। নগদ, রকেট ও বিকাশসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও চাকরি পাইয়ে দিতে অর্থ লেনদেন হয়। টার্গেট পরীক্ষার্থী প্রতি ১৪ থেকে ১৬ লাখ টাকার লিখিত চুক্তি হয়। যেহেতু এমসিকিউ পরীক্ষা, তাই এমসিকিউ পরীক্ষায় পাস করার পরই ভাইভা। তাই এমসিকিউ পরীক্ষার আগে কিছু টাকা নিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা। নিয়োগ পাওয়ার পর বাকি টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়।

প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতি সম্পর্কে হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রের আরেকটি গ্রুপ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ইয়ার ডিভাইস, মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ও বাটন মোবাইল টার্গেট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সরবরাহ করে। পরীক্ষা শুরুর দুই/তিন মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নফাঁস করে বাইরে পাঠানো হয় ডিভাইসের মাধ্যমে। বাইরে থেকে প্রশ্নপত্রের সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে ফের পাঠানো হয় পরীক্ষার্থীদের কাছে।

হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিজিএ) অডিটর। মাহবুবা নাসরীন রুপা বগুড়ার ধুপচাঁচিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান।

আগেও প্রশ্নফাঁস করে গ্রেফতার হয়েছিল কয়েকজন

গ্রেফতারদের মধ্যে প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর মাহমুদুল হাসান আজাদ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ২০১৯ সালে বরখাস্ত হয়েছেন। নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী ইতোপূর্বেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে গ্রেফতার হয়েছিল। গ্রেফতার আসামিরা অন্য আসামিদের যোগসাজশে বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপস ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়া, বাইরের রুমে ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র বসিয়ে স্মার্ট ওয়াচ, এয়ার ডিভাইস, মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার কাজ করেছে।

ইতোপূর্বে গ্রেফতাররা বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, খাদ্য অধিদফতর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক এবং বিকাশের মাধ্যমে ও নগদে হাতিয়ে নিয়েছে।

পরীক্ষা বাতিল হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, কোনো সংস্থাই চায় না পরীক্ষা বিতর্কিত হোক। পরীক্ষা বাতিল হবে কি না তা সংশ্লিষ্ট দফতরই সিদ্ধান্ত নেবে।

বগুড়ার ধুপচাঁচিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরীন রুপার ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, তার ভূমিকা ছিল মিডিয়ার কাজ করা। একটি গ্রুপ অর্থ সংগ্রহ করেছে। আরেকটি গ্রুপ ডিভাইস সরবরাহ করেছে। মাহবুবা নাসরীন রুপা নিজে পরীক্ষা দিয়েছে সঙ্গে অন্য পরীক্ষার্থীদের কাছে ডিভাইস সরবরাহের কাজ করেছে। গ্রেফতারদের মধ্যে চক্রের শিক্ষার্থী তিন জন, চক্রের সদস্য সাত জন। ১৮ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছিল। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত তদন্তে ৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের উত্তর সরবরাহের তথ্য মিলেছে। এ চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত রয়েছে, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036518573760986