গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি ভেঙে ২০ শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী করার অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষক সমিতির নেতাদের হস্তক্ষেপে আইন লঙ্ঘন করে উপাচার্য ওই ২০ শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী করেছেন। চলতি বছরের ১৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার মো. আব্দুর রউফ একটি আদেশ জারি করেন।
তাতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০২১ সালের ৮ আগস্টের স্মারক অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ২০ শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে। ইউজিসি ওইসব শিক্ষকের পদ সৃষ্টি ও চাকরি স্থায়ীকরণের অনুমোদন দিয়েছে। তবে শিক্ষাছুটির বিপরীতে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চাকরি স্থায়ীকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের পাস করা আইন মানা হয়নি। ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম রিজেন্ট বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উচ্চতর ছুটির বিপরীতে বা শিক্ষাছুটির বিপরীতে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি স্থায়ী করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থায়ী পদে নিয়োগ দিতে হবে।
চাকরি স্থায়ী হওয়া শিক্ষক ড. মো. বশির উদ্দিন বলেন, তারা ভাইভা বোর্ড এবং রিজেন্ট বোর্ড ফেস করেই শিক্ষাছুটির বিপরীতে নিয়োগ পেয়েছেন। মাঝখানে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিল না। এ ছাড়া করোনার কারণে চাকরি স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়াতে এরই মধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ইউজিসি থেকে তাদের শিক্ষক পদের অনুমোদন আসার পরে উপাচার্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ্ধতি অনুসরণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই সরাসরি নিয়োগ স্থায়ী করেছেন। কারণ বিজ্ঞপ্তির
মাধ্যমে নিয়োগ স্থায়ী করতে হলে আরও অনেক বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে যেত।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. আবু সালেহ জানান, এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বারবার আলোচনা করা হয়েছে। যেসব শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী করা হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই যোগ্যতাসম্পন্ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন বিবেচনা করেই তাদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এভাবে নিয়োগ দেওয়ার নজির আছে।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. কামরুজ্জামান জানান, উপাচার্য ইউজিসির শিক্ষক পদ অনুমোদনসাপেক্ষে এসব শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী করতে পারেন। পরে তিনি বিষয়টি রিজেন্ট বোর্ডে উত্থাপন করতে পারেন। এখানে সব পন্থাতেই চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর এ কিউ এম মাহবুব বলেন, স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করাসহ সব ধরনের বিধি মেনে যথাযথ পন্থায় ২০ শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কিংবা কোনো পত্রিকায় এ সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোরাদ হোসেন বলেন 'এই অফিস-আদেশ যখন দেওয়া হয়, তখন আমি রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে ছিলাম না। তৎকালীন রেজিস্ট্রার এবং উপাচার্যের সম্মতিতেই এই আদেশ দেওয়া হয়েছিল।' এ ব্যাপারে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি বলেও ওই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।